সারা বাংলা

মুক্তিযোদ্ধার নাতি সেজে সরকারি চাকরির অভিযোগ

গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলা কৃষি অফিসে উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত রয়েছেন নাজমুল হুদা আকন্দ (সুজন)। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি মুক্তিযোদ্ধার নাতি না হয়েও অন্য এক মুক্তিযোদ্ধার নাতি সেজে সরকারি চাকরি করছেন। 

বিষয়টি তুলে ধরে দুর্নীতি দমন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করার পরেও এখনো তিনি বহাল তবিয়তে আছেন। এ নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেছেন অভিযোগকারীরা। 

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্ত কৃষি কর্মকর্তা নাজমুল হুদা আকন্দ (সুজন) গাইবান্ধা সদর উপজেলা বল্লমঝাড় ইউনিয়নের কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের কর্মচারী আব্দুর রশিদ আকন্দের ছেলে। তিনি সম্পূর্ণ ভুল তথ্য ব্যবহার করে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি করছেন। তিনি যার নাতি সেজেছেন, সেই বীর মুক্তিযোদ্ধা বজলার রহমানের সঙ্গে অভিযুক্ত নাজমুল হুদা আকন্দের কোনো সম্পর্ক নেই। বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত বজলার রহমান জেলার পলাশবাড়ী উপজেলার ঢোলভাঙ্গা সাকোয়া গ্রামের মৃত জিয়ারত হোসেনের ছেলে। 

প্রকৃতপক্ষে নাজমুলের নানা গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার ভবানীগঞ্জ কঞ্চিপাড়া গ্রামের মৃত রহিম উদ্দিন সরকারের পুত্র সিরাজুল ইসলাম সরকার। নাজমুলের মা মৃত নুরজাহান বেগম সিরাজুল ইসলাম সরকারের মেয়ে।

নাজমুলের বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধার নাতি সেজে সরকারি চাকরি করার বিষয়টি তুলে ধরে প্রথম অভিযোগ করেন আনোয়ারুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি। সে সময় তিনি দুর্নীতি দমন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ করেন। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কিন্তু মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে পরে আবার চাকরি ফিরে পান বলে দাবি করেন তিনি।

অভিযোগকারী আনারুল ইসলাম রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘অভিযোগ করার পর মুক্তিযোদ্ধা বজলার রহমান (তখন বেঁচেছিলেন) বিষয়টি ধামাচাপা দিতে তাকে ১২ শতক জমি লিখে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি তা গ্রহণ করেননি। নাজমুল হুদা ২০১২ সালে বেআইনিভাবে কৃষি অফিসে চাকরি নেন। এ পর্যন্ত যত টাকা বেতন-ভাতা উত্তোলন করেছেন, সেগুলো সরকারি কোষাগারে জমা সাপেক্ষে তার সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানাই।’

চলতি বছরের ২ মে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, কৃষি মন্ত্রণালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ করেন স্বয়ং নাজমুল হুদা আকন্দের বিমাতা (সৎ) ভাই শামসুজ্জামান আকন্দ মো. সাকিম রহমান। অভিযোগে নাজমুলকে তার জীবনের হুমকিদাতা ও স্বৈরাচারী হিসেবেও উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়াও এ বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়েও অভিযোগ করেন তিনি।

এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ২৮ মে সাবেক মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বিষয়টি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের উপস্থিতিতে শুনানির ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গাইবান্ধা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে আদশ দেওয়া হয়। (আদেশ নং-৩২০)। যদিও সেই শুনানিও থেমে আছে অজ্ঞাত কারণে। 

মুঠোফোনে এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নাজমুল হুদা আকন্দ বলেন, ‘এসব অভিযোগ মিথ্যে। অভিযোগের বিষয়ে ইউএনও’র কাছে যা বলার বলেছি। আপনি তার কাছে জেনে নেন।’ 

‘আপনার নানার নাম কী?’ এমন প্রশ্ন করতেই, অপরপ্রান্ত থেকে ফোনের সংযোগটি কেটে দেন তিনি।

এ বিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদ আল হাসান রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘গত মে মাসে এ ব্যাপারে একটি চিঠি পেয়েছি। নানা ধরনের অভিযোগ আসে। তাই এখনো শুনানির ব্যবস্থা করতে পারিনি।’

নির্বাহী কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘চিঠি আসার পর থেকে আজ পর্যন্ত কেউ আমার সঙ্গে সরাসরি বা ফোনেও কোনো কথা বলেনি। অভিযোগের জবাব তো আরও পরে। তিনি মিথ্যাচার করেছেন। খুব দ্রুতই শুনানির ব্যবস্থা করা হবে।’