সারা বাংলা

আশুলিয়ায় ২ কারখানার ১২০ শ্রমিককে বরখাস্তের অভিযোগ 

সাভারের আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুর এলাকায় অনন্ত গার্মেন্টস ও অনন্ত স্পোর্টস ওয়্যারের ১২০ শ্রমিককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মঙ্গলবারের ২৪ সেপ্টেম্বর তারিখ দেওয়া বরখাস্তের তালিকা বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) কারখানার ফটকে সাঁটিয়ে দেয় কর্তৃপক্ষ বলে জানিয়েছেন শ্রমিকরা।

অনন্ত গার্মেন্টস লিমিটেড কর্তৃপক্ষ জানায়, যাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তারা গতকালও হুমকি দিয়েছে বেতন ২৫ হাজার টাকা না হলে কারখানায় আগুন দেবে ও স্টাফদের মারবে। সিসিটিভি দেখে সবই ডকুমেন্ট করা আছে। শ্রমিকদের এরা হুমকি দিচ্ছিল।

এদিকে, এ ঘটনায় আজ সকাল থেকে কারখানার সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছেন শ্রমিকরা।

সাময়িক বরখাস্তের নোটিসে লেখা হয়, অনন্ত গার্মেন্টস লিমিটেড ও অনন্ত স্পোর্টস ওয়্যার লিমিটেডের কারখানায় গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভাঙচুর, লুটপাট, উশৃংখলতা, কাজ না করা, স্টাফদের লাঞ্চিতসহ আইন বহির্ভূত কাজে জড়িত থাকায় শ্রম আইনের ২৩, ১৯৬, ২৯৪, ২৯৫ ও ২৯৬ ধারা অনুযায়ী ১২০ জন শ্রমিককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

শ্রমিকরা জানান, গতকাল মঙ্গলবার শ্রমিক, মালিক ও সরকার বৈঠক হয়। সেখানে শ্রমিকদের ১৮ দফা দাবি মেনে নেওয়া হয় এবং আজ বুধবার থেকে কারখানা খোলা রাখার সিদ্ধান্ত হয়। আজ সকালে দিকে যথাসময়ে কাজে যোগ দিতে আসেন শ্রমিকরা। তবে, তাদের অনেকেই কারখানায় ঢুকতে পারেননি। এ সময় তারা কারখানার ফটকে সাময়িক বরখাস্তের তালিকা দেখতে পান।

অনন্ত স্পোর্টসওয়্যার লিমিটেডের সাময়িক বরখাস্ত হওয়া শ্রমিক লিটন ইসলাম হৃদয় বলেন, ‘মালিকপক্ষ ও সরকার আমাদের দাবিগুলো মেনে নেওয়ায় আমি আজ সকালে কাজে যোগ দিতে কারখানায় আসি। নিরাপত্তারক্ষীরা কারখানায় ঢুকতে দেয়নি। এরপর শুনি, আমাদের অনেককেই বরখাস্ত করে তালিকা টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘শ্রম উপদেষ্টার কথা অনুযায়ী কোনো কারখানায় কাউকে চাকরিচ্যুত করা হয়নি। তাহলে আমাদের কেন বরখাস্ত করা হলো?’

প্রীতি নামে অপর শ্রমিক বলেন, ‘আমি তো কোনো ঝামেলায় ছিলাম না। আমাকেও কারখানায় ঢুকতে দেওয়া হয়নি। সকাল থেকে কারখানার সামনে রয়েছি। আমরা কাজ করতে চাই।’

বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড সোয়েটার শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইন বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল মামুন মিন্টু বলেন, ‘গতকাল সরকার, মালিকপক্ষ ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল কোনো শ্রমিককে বরখাস্ত করা হবে না। তারপরও করা হয়েছে। তাহলে বৈঠকের সিদ্ধান্ত কতটা মানা হলো? পার্ল গার্মেন্টসের ৭৫ জন, হান্ডায় ৮৫ জন, শিনশিনে ৮১ জনকে বরখাস্ত করা হয়েছে। আজ অনন্তে ১২০ শ্রমিককে বরখাস্ত করা হলো।’

বরখাস্ত শ্রমিকদের অবিলম্বে কাজে পুনর্বহাল করার দাবি জানিয়ে এই শ্রমিক নেতা বলেন, ‘বরখাস্তের কিছু নিয়ম আছে। শ্রম আইনের যেসব ধারায় বরখাস্ত করা হয়েছে, তা এই মুহূর্তে প্রয়োগের সুযোগ নেই। এটি বেআইনি হয়েছে। এ ঘটনায় কোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হলে তার দায় মালিকপক্ষকে নিতে হবে।’

অনন্ত গার্মেন্টস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইনামুল হক খান বলেন, ‘শ্রমিক ছাঁটাই নয়, ১২০ জন শ্রমিককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এরা গতকালও হুমকি দিয়েছে বেতন ২৫ হাজার টাকা না হলে কারখানায় আগুন দেবে ও স্টাফদের মারবে। সিসিটিভি দেখে সবই ডকুমেন্ট করা আছে। শ্রমিকদের এরা হুমকি দিচ্ছিল।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘২৪ দিন কারখানা বন্ধ। আজকে খুলেছি। ২৪ দিন পর কারখানা উৎপাদনে গেছে। এই বন্ধে আমাদের ২৭ কোটি টাকা অপারেশনাল লোকসান ও মালামালে আরও ৪৫ কোটি, অর্থাৎ প্রায় ৭০-৭৫ কোটি টাকার লোকসান হয়েছে।’

এ বিষয়ে জানতে শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মো. সারোয়ার আলমকে মুঠোফোনে কল ও হোয়াটস অ্যাপে মেসেজ পাঠালেও তার কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।