সারা বাংলা

নোয়াখালীতে টানা বৃষ্টিতে আবারও বন্যা পরিস্থিতি

টানা বৃষ্টিতে আবারও নোয়াখালীতে বন্যা ও জলাবদ্ধতা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। জেলার বানভাসী মানুষ নতুন করে দুশ্চিন্তায় পড়েছে। জেলায় এখনও প্রায় ১২ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে আছে। জেলার সদর, বেগমগঞ্জ, সেনবাগ, সোনাইমুড়ী ও চাটখিল উপজেলার অনেক এলাকা এখনও পানিতে নিমজ্জিত।

জেলা আবহাওয়া কার্যলয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বলেন, গত দুই দিনের টানা বৃষ্টিতে নোয়খালীতে পানি আবারও বেড়ে গেছে। আগামী কয়েক দিন বজ্রসহ বৃষ্টির আভাস রয়েছে। বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, বৈরি আবহাওয়ার কবলে পড়ে টানা বৃষ্টির কারণে জনজীবনে স্থবিরতা বিরাজ করছে। অফিসগামী বা জীবিকার তাগিদে নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী ছাড়া তেমন কেউ ঘর থেকে তেমন বের হচ্ছে না। টানা বৃষ্টিতে বিভিন্ন জায়গায় পানি জমে বেড়ে জলাবদ্ধতা বেড়েছে। নিন্মাঞ্চলে বন্যা ও জলাবদ্ধতা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় জলাবদ্ধতার পানি নামছে না। নতুন করে বৃষ্টি হওয়ায় ভোগান্তি আরও বেড়েছে।

সদর উপজেলার নেওয়াজপুর গ্রামের শাকের আহমেদ বলেন, ‘আমাদের এলাকায় পূর্বের বন্যার পানি তেমন নামেনি। সর্বত্রই হাঁটু বা তার চেয়ে একটু কম পরিমাণ পানি রয়েছে। তার উপর আবার টানা বৃষ্টিতে পানি বেড়ে গেছে। জনজীবন স্বাভাবিক না। রাস্তার অবস্থাও তেমন ভালো না। যানবাহন চলাচল করে না। ফলে পানির সঙ্গে যুদ্ধ করে আমাদের চলতে হচ্ছে।’ 

কাদির হানিফ ইউনিয়নের মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘পানি আবারও বাড়ছে। পানি নামার রাস্তা বন্ধ। টানা বৃষ্টি হওয়ায় সব ধরনের কাজ বন্ধ। জনজীবন একেবারে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।’ 

পূর্ব লক্ষীণারায়নপুর গ্রামের রুস্তম আলী বলেন, ‘আমরা শহর থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার দূরে থাকি। কিন্তু মনে হয় আমরা কোনো এক অজপাঁড়া গ্রামে বা চরাঞ্চলে বসবাস করছি। আশ্রয়কেন্দ্র থেকে আসার পরে থেকে পানির সঙ্গে যুদ্ধ করছি। আজ একটু কমে, কাল আবারও বৃষ্টি হলে বাড়ে। ঘর-বাড়ি বসবাসের অনুপযোগী। রান্নার সমস্যা হচ্ছে। নিন্ম আয়ের মানুষ, তাই গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারের সামর্থ্য নেই।’

বেগমগঞ্জ উপজেলার মিজানুর রহমান বলেন, গত বেশ কিছু পানি কমে ছিল। আবারও অবিরাম বৃষ্টিতে রাস্তা ও বাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে।

সেনবাগ উপজেলার মাহবুবুর রহমান বলেন, কয়েকটি ইউনিয়নের নিচু জায়গায় পানি জলাবদ্ধ হয়ে ছিল। টানা রোদে অবস্থার মোটামুটি উন্নতি হচ্ছিল। কিন্তু গত দুই দিনের টানা ভারী বৃষ্টিতে আবার পানি বেড়ে গেছে। জনজীবন স্থবির হয়ে আছে। প্রয়োজন ছাড়া মানুষ বাইরে বের হচ্ছে না।

জেলা প্রশাসকের তথ্যমতে, নোয়াখালীর ৮ উপজেলার ৮৭ ইউনিয়নের প্রায় ১২ লাখ ৫ হাজার ৩০০ মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে। ১২৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৯ হাজার ৩২০ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। 

জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, ইতিমধ্যে ৫৭ লাখ ৪৮ হাজার টাকা, ১ হাজার ৭৭৩ মেট্রিকটন চাল, ১ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, ৫ লাখ টাকার শিশুখাদ্য ও ৫ লাখ টাকার গোখাদ্য বিতরণ করা হয়েছে। এখনও সাড়ে ১৭ লাখ টাকা, ২৬ মেট্রিক টন চাল, ১০ লাখ টাকার শিশুখাদ্য ও ১০ লাখ টাকার গোখাদ্য মজুদ রয়েছে। বানভাসি কোনও মানুষ যাতে খাদ্যের জন্য কষ্ট না পায় সেই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।