গাজীপুরের শ্রীপুরের বাঁশবাড়ি গ্রামে চোর সন্দেহে ঘুম থেকে তুলে মো. ইসরাফিল (২৪) নামের এক রাজমিস্ত্রীকে পেটানোর পর নিহতের ঘটনায় বিএনপি নেতাসহ সাত জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন মন্ডল। এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) রাতে নিহত ও রাজমিস্ত্রীর বাবা মো. নাসির বাদী হয়ে শ্রীপুর থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
নিহত মো. ইসরাফিল উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের বাঁশবাড়ি গ্রামের মো. নাসিরের ছেলে। তিনি পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি।
মামলার প্রধান অভিযুক্ত বিএনপি নেতা মো. কামরুল হাসান লিটন উপজেলার শৈলাট গ্রামের মৃত মনির উদ্দিনের ছেলে। তিনি গাজীপুর ইউনিয়ন বিএনপি’র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ২নং ওয়ার্ড বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।
ওসি বলেন, ‘মামলায় সাত জনের নাম উল্লেখ করে ১০/১২ জনকে অজ্ঞাত অভিযুক্ত উল্লেখ করা হয়। অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান চলছে।’
নিহতের স্বজনরা জানান, গত ১৩ সেপ্টেম্বর নিজ বসতঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন ইসরাফিল। সকাল ৭টার কিছু সময় পর, এলাকার সোহাগসহ কয়েকজন যুবক তাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে স্থানীয় ব্যাপারী বাড়ি জামে মসজিদের চুরি যাওয়া ব্যাটারি সম্পর্কে জানতে চায়। পরে তাকে নিয়ে যায় বাড়ির অদূরে শৈলাট পশ্চিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে। সেখানে নিয়েই তার হাত-পা রশি দিয়ে বেঁধে ফেলা হয়। তারপর ইসরাফিলের ওপর চলে ব্যাটারি চুরির অপবাদে নির্যাতন। লোহার রড দিয়ে পায়ের পাতা থেকে শুরু করে পিঠ পর্যন্ত পেটানো হয়।
পরে কোমরের নিচে গরম পানি ঢেলে দেয়। গরম পানিতে যুবকের দুই পায়ের পাতা থেকে কোমর পর্যন্ত ফোসকা পড়ে যায়। এমন অবস্থায় নির্যাতনকারীরা ইসরাফিলের বুকে, পেটে, পিঠে লাথি মারতে মারতে চোর পেটানোর উৎসব শুরু করে, করতে থাকে উল্লাস। পুরো ঘটনায় নিহতের কোনো স্বজনদের কাছে যেতে দেয়নি। তারা কাছে যেতে চাইলে বিভিন্ন ধরনের হুমকি-ধমকি দিয়ে তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় গত ১৬ সেপ্টেম্বর কামরুল হাসান লিটন, বাবুল মন্ডল, শফিকুল ইসলামের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত পরিচয়ের কয়েকজনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দেন ইসরাফিলের বাবা। বৃহস্পতিবার রাতে শ্রীপুর থানায় মামলা দায়ের করা হয়।
নিহতের বাবা নাসির উদ্দিন বলেন, ‘বসতঘরে ঘুমিয়ে থাকা আমার ছেলেকে ডেকে নিয়ে যায়। পরে শৈলাট পশ্চিম পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে নিয়ে আমার ছেলেকে কয়েক ঘণ্টাব্যাপী অমানুষিক নির্যাতন করে। এক পর্যায়ে চায়ের দোকান থেকে গরম পানি এনে আমার ছেলের ওপর ঢেলে দেয়। এতে কোমরের নিচ থেকে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ফোসকা পড়ে যায়। এ সময় আমার ছেলে পানি পান করতে চেয়েছিল, তার জীবনটা ভিক্ষা চেয়েছিল কিন্তু জীবন ভিক্ষা তো দূরের কথা তারা পানি পর্যন্ত খেতে দেয়নি। আমরা এত চেষ্টা করেছি তবুও নির্যাতনকারীদের মন গলাতে পারিনি। আমাদের দেখলে নির্যাতনের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিয়েছেল।’
নিহতের বৃদ্ধা দাদি মহর জান অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার নাতিকে বাড়ি থেকে স্কুল মাঠে ডেকে নিয়ে সকাল থেকে দুপুর নির্যাতন করে। আমি কতবার যাওয়ার চেষ্টা করেছি কিন্তু ওরা (নির্যাতনকারীরা) আমাকে বারবারই ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়েছে। পরে তারা মেরেই ফেলেছে আমার নাতিকে। আমি এর বিচার চাই।’