ছোটাছুটি আর হইহুল্লোড়ে চারদিক মাতিয়ে রাখা সাড়ে ৪ বছর বয়সের আরফিন আরিয়ান এখন ভীষণ চুপচাপ। জন্ম থেকেই হৃদরোগে আক্রান্ত শিশুটি ক্রমেই যেনো নিস্তেজ হয়ে পড়ছে। সন্তানের অসুস্থতায় ঘুম হারাম হয়ে গেছে মা নাদিয়া আক্তার (২৫) এর। আরফিনকে বাঁচাতে তিনি এখন নানা উপায় খুঁজে বেড়াচ্ছেন।
গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের রাতকানা গ্রামে নানা বাড়িতে মায়ের সঙ্গে অবস্থানকৃত আরিয়ানের চোখে-মুখে এখন বাঁচার আকুতি।
পরিবার জানায়, ২০১৯ সালে নরসিংদীতে বিয়ে হয় নাদিয়া আক্তারের। বিয়ের পর বাবার বাড়িতেই নাদিয়াকে রেখে দেয় আরিয়ানের বাবা বরকত উল্লাহ (৩২)। পেশায় রাজমিস্ত্রী হলেও অভাব আর দুঃখ-কষ্ট নিয়ে কোনো অভিযোগ ছিল না নাদিয়া ও তার পরিবারের। কিন্তু বিয়ের ৬ মাস পরেই জানা গেল বরকত উল্লাহ পূর্বে আরও একটি বিয়ে করেছেন। সেই ঘরে তার স্ত্রী-সন্তানও রয়েছে। খবরটি শুনে পিতা হারা নাদিয়ার দরিদ্র পরিবারে যেন মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। এক বছরের মধ্যেই নাদিয়ার কোলজুড়ে আসে আরিয়ান। ছেলে হওয়ার খবরে একবার দেখতেও আসেনি, এমনকি খবরও নেয়নি আরিয়ানের বাবা বরকত। মা নূরজাহানই নাদিয়ার ভরসা। অভাবের সংসারে মা-বেটি অন্যের বাড়িতে কাজ করে কোনও রকমে জীবন চালিয়ে নিচ্ছিলেন। এরমধ্যে সন্তান আরিয়ানের দুঃসংবাদে চোখেমুখে অন্ধকার দেখেন মা নাদিয়া আক্তার।
নাদিয়া জানান, যখন এক বছর আরিয়ান একদিন হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। শ্বাস নিতে প্রচণ্ড কষ্ট হচ্ছিল। দেরি না করে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে কিছু পরীক্ষা-নিরিক্ষা করে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার শিশু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। পরে ঢাকার শিশু হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখান থেকে ধানমন্ডি ল্যাবএইড কার্ডিয়াক হাসপাতাল। বর্তমানে সেখানকার প্যাডিয়াট্রিক কার্ডিওজির বিভাগীয় প্রধান ব্রিগে. (প্রফেসর) নুরুন্নাহার ফাতেমা (অব.) কে দেখান। পরীক্ষা নিরীক্ষা করে শিশু আরিয়ানের হার্ট দুটি ছিদ্র ধরা পরে। এরপর থেকেই নবজাতক, শিশু ও স্ট্রাকচারাল ইন্টারডেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট এবং এনটেনসিডিস্ট ওই চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে চলতে থাকে শিশু আরিয়ানের চিকিৎসা।
নাদিয়া জানান, ডাক্তারের পরামর্শে নিয়মিত ওষুধ সেবন করাবো সেই টাকাপয়সাও নাই। তারপরও বহু কষ্টে অন্যের বাড়িতে কাজ করে আমার ছেলেটাকে ওষুধ খাওয়াচ্ছি। সর্বশেষ চিকিৎসব জানিয়েছেন হার্টের দুটি ছিদ্রের মধ্যে একটি বন্ধ হলেও অপরটির লাগবে অপারেশন। আর এই অপারেশন ৫ বছর বয়সের মধ্যেই করতে হবে জানিয়েছেন আরিয়ানের চিকিৎসক। শিশু আরিয়ানের চিকিৎসায় সব মিলিয়ে প্রয়োজন প্রায় ৫ লক্ষ টাকা। অন্যের মায়ের সাথে বাড়িতে ভাড়ায় নাদিয়া এ কথা বলেই অঝোরে কাঁদতে থাকেন।
বলেন, কি হবে ছেলের? কিভাবে হবে চিকিৎসা? এত টাকাই মিলবে কোথা থেকে? তাহলে কি আমার আরিয়ানের চিকিৎসা হবে না? আমি কি বাঁচাতে পারবোনা আমার বাবাটাকে?
শিশু আরিয়ান বলে, বুকে খারাপ লাগে। হার্টের সমস্যা। চিকিৎসা করাতে হবে। মা বলছে আমার চিকিৎসা হবে। শিশুটি যখন কথা বলছিল, তখন তার মা-নানি, খালা-খালাতো ভাইসহ স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন।
নানি নূরজাহান বলেন, ‘আমার স্বামী নাই। আমার কিচ্ছু নাই। অন্যের জায়গায় থাকি। তারপরও নাতি-মেয়েকে নিয়ে কোনমতে দিন পার করছি। এরমধ্যে নাতিটার এমন অবস্থা হইছে, আমি যা পারছি তার চিকিৎসা করাইছি। কিন্তু এখন আর পারছি না। নাতিকে বাঁচাতে বিত্তবানদের এগিয়ে আসার অনুরোধ জানান তিনি।
আরফিন আরিয়ান মায়ের পার্সনাল বিকাশ (০১৭২৮৩৪১৫৮৬) নম্বরে শিশুটির জন্য মানবিক সাহায্য পাঠানো যাবে। অথবা ইসলামী ব্যাংক কালীগঞ্জ উপজেলার দোলান বাজার এজেন্ট ব্যাংকিং শাখায় (সঞ্চয়ী হিসাব নম্বর ২০৫০৭৭৭০২২৩৩৯৯২৬৬) টাকা পাঠানো যাবে।
কালীগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা শাহাদৎ হোসেন বলেন, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক পরিচালিত সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে ৬টি রোগের জন্য সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত সহযোগীতা দেওয়া হয়। শিশুটির পক্ষে আবেদন করলে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে।