রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে পদ্মা নদীর পানি কমতে শুরু করলেও ডানতীরে ভাঙন থামেনি। এরইমধ্যে বেশ কিছু ঘরবাড়ি ভাঙনে তলিয়ে গেছে। আতঙ্কে এখনও অনেকেই ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছেন। নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকে কয়েক হাজার বাড়ি এখনও পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। তলিয়ে গেছে ফসলের খেত। ভাঙনের কবলে পড়ে অনেকে সবকিছুই নৌকায় তুলে চলে আসছেন এ পারে। সহায়-সম্বলহীন মানুষ এখন এ পারে এসে খুঁজছেন বসবাসের নতুন ঠিকানা।
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের আমতলা খাসমহলের বাসিন্দা মো. আলাউদ্দিন জানান, কয়েকদিন আগে নদীর পানি বৃদ্ধি পেলে তাদের এলাকায় কয়েকটা রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যায়। দুই দিন ধরে পানি কিছুটা কমেছে। তবে ভাঙনের কারণে চর বয়ারমারি গ্রামের অন্তত ৫০টি বাড়ি সরিয়ে নিতে হয়েছে। চর বয়ারমারির পাশে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার জেলেপাড়া গ্রামেও নদীভাঙন চলছে। পোলাডাঙ্গা এলাকায় একটি সেতু ছিল। এই সেতুও ভেঙে গেছে নদীভাঙনের কারণে।
এদিকে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের আলাতুলি ও নারায়ণপুর ইউনিয়নের প্রায় চার কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। আগের বছরও এই এলাকার অন্তত দুই শতাধিক বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এরইমধ্যে ইউনিয়নের এক তৃতীয়াংশ কৃষিজমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এবারও ভাঙনে হুমকির মুখে পড়েছে বাড়িঘর, বাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। শিবগঞ্জ উপজেলার পাকা ইউনিয়নেও চলছে পদ্মা নদীর ভাঙন। এ এলাকারও অনেকে আতঙ্কে বাড়িঘর সরিয়ে নিচ্ছেন। শিবগঞ্জের পাকা ও দুর্লভপুর ইউনিয়নে কয়েক হাজার বাড়ি এখনও পানিবন্দি রয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মাহবুব-উল-ইসলাম বলেন, ‘বিভিন্ন মাধ্যমে শোনা যাচ্ছে প্রায় ছয় হাজার বাড়ি পানিবন্দি অবস্থায় আছে। পানিবন্দিদের সহায়তার জন্য আমরা সদর উপজেলায় ১০ টন ও শিবগঞ্জ উপজেলায় ২০ টন চাল বরাদ্দ দিয়েছি।’
রাজশাহী নগরের ওপারে চর মাজারদিয়াড় এলাকায় কিছু ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেলেও এখন সেখানে ভাঙন নেই। তবে পাড় ভাঙছে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার চক নারায়ণপুর ইউনিয়নে।
স্থানীয়রা জানান, ফতেপুর-পলাশি রাস্তার ওপর দিয়ে এখনও পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ভাঙনের কারণে ওই ইউনিয়নের আতারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভাঙনে পদ্মা নদীর গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। চৌমাদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও পাঠদান বন্ধ রয়েছে। আতারপাড়া, চৌমাদিয়া, দিয়াড়কাদিরপুর গ্রামের প্রায় ৭৫০টি পরিবার পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে এলাকার বেশকিছু বাড়িঘর পদ্মা গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে।
রাজশাহী বিভাগীয় কৃষি দপ্তরের হিসাবে, নাটোরের লালপুর উপজেলায় প্রায় সাড়ে ৩ হাজার বিঘা জমির ফসল তলিয়ে গেছে। এছাড়া রাজশাহীর ৯ হাজার ৬৮১ বিঘা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ১৪ হাজার ৮৫৭ বিঘা ফসলি জমি প্লাবিত হয়েছে। লালপুরের বিলমাড়িয়া ইউনিয়নের নওশারা সুলতানপুর, চাকলা বিনোদপুর, দিয়াড়শংকরপুর, আরাজি বাকনাই, রসুলপুর ও মোহরকয়া আংশিকসহ প্রায় ১৮টি চর এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের হিসাবে গত এক সপ্তাহ আগে পদ্মার পানি বাড়তে শুরু করে। তারপর গত বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে পানি কমতে শুরু করে। সেদিন পদ্মার প্রবেশদ্বার চাঁপাইনবাবগঞ্জের পাংখা পয়েন্টে ভোর ৬টায় পদ্মার পানির উচ্চতা পাওয়া যায় ২১ দশমিক ৫ মিটার। আর সকাল ৯টায় পানির উচ্চতা এক সেন্টিমিটার কম পাওয়া যায়। এ পয়েন্টে পানির বিপৎসীমা ২২ দশমিক ০৫ মিটার।
শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় পাংখা পয়েন্টে পানির উচ্চতা পাওয়া যায় ২১ দশমিক ০৯ মিটার। শনিবার সকাল ৬টায় পানি কমে হয় ২১ দশমিক ০২ মিটার। বেলা ৩টায় পানি আরও কমে ২০ দশমিক ৯৩ মিটারে দাঁড়ায়।
রাজশাহীর বড়কুঠি পয়েন্টে পদ্মার বিপৎসীমা ১৮ দশমিক ০৫ মিটার। গত বৃহস্পতিবার ভোর ৬টা ও সকাল ৯টায় পানির উচ্চতা ছিল ১৬ দশমিক ৮৯ মিটার। শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় পানির উচ্চতা ছিল ১৬ দশমিক ৮১ মিটার। শনিবার ভোর ৬টায় পানির উচ্চতা ছিল ১৬ দশমিক ৭৫ মিটার। আর বেলা ৩টায় পানির উচ্চতা পাওয়া যায় ১৬ দশমিক ৭০ মিটার।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তরাঞ্চলীয় পানিবিজ্ঞান পরিমাপ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রেজাউল করিম বলেন, ‘গত এক সপ্তাহ আগে পদ্মার পানি বাড়তে শুরু করে। এরপর বৃহস্পতিবার থেকে পানি কমছে। পূর্বাভাস অনুযায়ী, আরও দুইদিন পানি কমবে। এরপর কয়েকদিন পানি স্থিতিশীল থাকবে। এরপর আবার পানি বাড়তে কিংবা কমতে পারে।