সারা বাংলা

রংপুরের তিন উপজেলায় পানিবন্দি ১ হাজার মানুষ

গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে বেড়েছে তিস্তা নদীর পানি। পানির তীব্র স্রোতের কারণে ঝুঁকিতে পড়েছে স্থানীয় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধগুলো। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে রংপুরের কাউনিয়া, গঙ্গাচড়া ও পীরগাছা উপজেলার এক হাজার মানুষ বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। 

রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) দুপুর ৩টার দিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, ডালিয়া ব্যারেজ পয়েন্ট তিস্তার পানি বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। কাউনিয়া পয়েন্টে নদীটির পানি ছিল বিপৎসীমার ২৯ সেন্টিমিটার ওপরে। গতকাল এই দুই পয়েন্ট বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছিল সংস্থাটি।

রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার শংকরদহ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এখানে প্রায় শতাধিক বাড়িতে পানি উঠেছে। কোথাও হাঁটু, আবার কোথাও কোমড় পর্যন্ত পানি ছিল। এখানকার মানুষরা কষ্টে দিন অতিবাহিত করছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের তথ্যমতে, গতকাল মধ্যরাত থেকে তিস্তায় পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে। নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করায় তলিয়ে গেছে ফসলি জমি। ভেসে গেছে কয়েক শ পুকুরের মাছ। এসব এলাকার অনেকে গবাদি পশু ও শিশুদের নিয়ে উঁচু স্থানে আশ্রয় নিলেও বন্যা আর ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে পরিবারগুলো। এরই মধ্যে পানি নিয়ন্ত্রণে ব্যারাজের সবকটি জলকপাট কয়েক দিন ধরে খুলে রেখেছে কর্তৃপক্ষ।

গঙ্গাচড়া উপজেলার শংকরদহ এলাকার তিস্তা পাড়ের বাসিন্দা ভুপেন চন্দ্র জানান, গত চারদিন ধরে পানি বাড়তে শুরু করে। গতকাল থেকে বৃষ্টি কমলেও উজান থেকে আসা পানির স্রোত কমেনি। যে কারণে মধ্যরাত থেকে পানি অনেক বেড়েছে। বর্তমানে তার বাড়িতে কোমড় পানি আছে বলেও জানান তিনি। নিরুপায় হয়ে গতকাল পরিবারের লোকজন ও গবাদি পশু নিয়ে পাশের বেড়িবাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন। গো-খাদ্য, সুপেয় পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন নিয়ে বিড়ম্বনায় আছেন বলেও জানান ভুপেন। 

ভুপেনের মতো আরও কিছু পরিবার গবাদি পশু নিয়ে আশ্রয় নিয়েছে বাঁধে। সবার কষ্টের গল্প একই। এসব পরিবার ত্রাণ আর শান্তনা নয়, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের মধ্যদিয়ে স্থায়ী সমাধান চান।

তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানী জানান, ‌তিস্তা নদীর কারণে হাজারো মানুষ নিঃস্ব হচ্ছেন। প্রতিবছর যে ক্ষয়ক্ষতি তার হিসাব করা গেলে তা শত কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে ভারতকে তিস্তা চুক্তিতে আন্তরিক এবং অন্তবর্তী সরকারের সুদৃষ্টি প্রয়োজন।

রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আহসান হাবীব জানান, উজানের ঢলে দ্রুত পানি বাড়ছে তিস্তাসহ উত্তরের নদীগুলোতে। ভাঙন এবং ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মোহাম্মদ রাশেদীন বলেন, উজানের ঢল আর বর্ষায় তিস্তায় পানির প্রবাহ বেড়েছে। গতকাল সকাল থেকে পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও রাত ১১টার পর তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সবগুলো জলকপাট খুলে পানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।

রংপুরের জেলা প্রশাসক রবিউল ফয়সাল জানান, তিস্তায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেক এলাকা অসংখ্য মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন এমন তথ্য পেয়েছি। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে পানিবন্দি পরিবারগুলো মধ্যে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পানি কমে গেলে মানুষের দুর্ভোগ কমে যাবে।