শারদীয় দুর্গা পূজাকে কেন্দ্র করে ঢাকার সাভার ও ধামরাইয়ে রংতুলির আঁচড়ে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে প্রতিমা। শিল্পীদের ছোঁয়ায় প্রতিমা হয়ে উঠছে আরও জীবন্ত। তবে, এ বছর পূজার সংখ্যা কমে আসায় আয়ও কিছুটা কমেছে বলে জানিয়েছেন শিল্পীরা।
ঢাকা জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের তথ্য বলছে, এ বছর ঢাকার সাভার ও ধামরাইয়ে মোট ৩৭৯টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এরমধ্যে ধামরাই পৌরসভায় ৪২টি, ধামরাইয়ের ১৬টি ইউনিয়নে ১৪৬টি, সাভার পৌরসভায় ৪০টি এবং এই উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে ৭১টি ও আশুলিয়ার ৮০টি মণ্ডপে দুর্গোৎসব হতে যাচ্ছে।
ধর্মীয় পঞ্জিকা মতে, আগামী ২ অক্টোবর মহালয়ার মধ্য দিয়ে দেবী পক্ষের সূচনা হবে। আগামী ৯ অক্টোবর মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। ১২ অক্টোবর মহাদশমীর বিহিত পূজা অনুষ্ঠিত হবে। সেদিন সন্ধ্যায় বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শারদীয়া দুর্গোৎসবের সমাপ্তি ঘটবে। এবার পৃথিবীতে দশভুজার আগমন হবে দোলায় চড়ে। তিনি কৈলাশে ফিরবেন ঘোটকে (ঘোড়া) চড়ে।
সরেজমিনে সাভার ও ধামরাইয়ের বিভিন্ন মণ্ডপে ঘুরে দেখা যায় শিল্পী ও কারিগরদের ব্যস্ততা। ধামরাইয়ের গাঙ্গুটিয়া ইউনিয়নের বারবাড়িয়া সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরে ঢুকতেই দেখা গেল, মণ্ডপ জুড়ে রঙের ছড়াছড়ি। নানা পাত্রে রাখা হয়েছে লাল, নীল, সাদা, কালোসহ বিভিন্ন রং। শিল্পীরা ছোট ছোট পাত্রে করে সেই রং তুলিতে করে রঙিন করে তুলছেন মাটির প্রতিমা।
বারবাড়িয়া ঠাকুরবাড়িতে গত ২৫-৩০ বছর ধরে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এবার এখানে প্রতিমা তৈরি করেছেন ক্ষিতীশ পাল ও তার শিষ্য রাজন পাল। এবারই প্রথম নিজে প্রতিমা বানিয়েছেন রাজন পাল। তার কাছে কাজটি অনেকটাই দুর্গার কৃপা লাভের। তিনি বললেন, ‘মায়ের প্রতিমা বানানো শিখেছি। এবার নিজে বানালাম। এই প্রতিমায় পূজা হবে, ভাবতেই ভালো লাগছে।’
পাশেই দুর্গা প্রতিমায় রঙের প্রলেপ দিচ্ছিলেন ক্ষিতীশ পাল। প্রায় ৩৫ বছর ধরে প্রতিমা বানানোর কাজ করছেন তিনি। ক্ষিতীশ পাল বলেন, ‘গত বছর সাতটি প্রতিমা বানিয়েছিলাম। এই বছর পাঁচটি বানিয়েছি। এই মৌসুমে তো সবচেয়ে বেশি আয় হয়। দেশের পরিস্থিতি অবনতি হওয়ায় অনেকেই পূজা করছেন না। এ কারণে আয়ও কমে গেছে।’ একই কথা বললেন ধামরাইয়ের প্রতিমা শিল্পী খোকন চন্দ্র পাল, সাভারের দীপক পালসহ আরও কয়েকজন শিল্পী।
এদিকে, নিরাপত্তা শঙ্কা ও সবকিছুর দাম বৃদ্ধির কারণে আয়োজন কিছুটা সীমিত করেছেন আয়োজকরা। বারবাড়িয়া ঠাকুরবাড়ির পূজার অন্যতম আয়োজক দ্বিজেন চক্রবর্তী বলেন, ‘আমরা এখানে ২৫-৩০ বছর ধরে পূজা করছি। প্রতি বছর ব্যাপক জাকজমক উৎসবের মধ্য দিয়ে পূজা উদযাপন করা হয়। এবার কিছুটা দুশ্চিন্তা রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যথাযথ নিরাপত্তা দিলে সবকিছু ঠিকভাবে শেষ করতে পারব বলে আশা করছি।’
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ ঢাকা জেলার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক স্মরণ কুমার সাহা বলেন, ঢাকা জেলায় এবার মোট ৭৬৬টি পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মন্দিরগুলোতে প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ দিকে। প্রতিমার রঙের কাজ চলছে। আশা করছি সুষ্ঠু ও নিরাপদভাবে আমরা পূজা উদযাপন করতে পারবো।
শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উদযাপন নিশ্চিত করতে এরইমধ্যে প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে থানা পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসন। সাভার উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আবু বকর সরকার বলেন, ‘বাংলাদেশে শারদীয় দুর্গাপূজা হিন্দুদের সবচেয়ে বড় উৎসব। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে হিন্দুরা সুশৃঙ্খল ও আনন্দঘন পরিবেশে এই উৎসব উদযাপন করে আসছেন। সাভারের ১২ ইউনিয়ন ও পৌরসভায় প্রায় ১৯১টির মতো পূজা মণ্ডপ রয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মণ্ডপগুলো নিরাপত্তার চাঁদরে ঢেকে রাখার পরিকল্পনা করা হয়েছে। পুলিশসহ সব বাহিনী এতে সহায়তা করবে।’
ঢাকা জেলা পুলিশের সাভার সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. শাহীনুর কবির বলেন, ‘আগামী মাসে শারদীয় দুর্গাপূজা। সাভার, আশুলিয়া, ধামরাইয়ে প্রায় ৪০০’র মতো মণ্ডপ রয়েছে। মণ্ডপগুলোর নিরাপত্তার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে। যে কোনো সহিংসতা মোকাবিলাসহ সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।’