সারা বাংলা

জাবিতে উপাচার্যের বাসভবনে হামলার ঘটনায় মামলা

গত ১৫ জুলাই রাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উপাচার্যের বাসভবনে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উপর শাখা ছাত্রলীগ ও বহিরাগত সন্ত্রাসী কর্তৃক হামলার ঘটনায় সাবেক উপাচার্যসহ অজ্ঞাতনামা দেড়শ-দুইশ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। 

গত শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাতে আশুলিয়া থানায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী সাজ্জাদুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু বক্কর সিদ্দিক মামলা রুজু হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। পুলিশ পরিদর্শক কামাল হোসেন মামলার তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছেন। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলমকে প্রধান আসামি হিসেবে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও এতে শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছেন-সাবেক প্রক্টর অধ্যাপক আলমগীর কবির ও আ স ম ফিরোজ উল হাসান, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মেহেদী ইকবাল, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ডিন অধ্যাপক বশির আহমেদ, সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ইখতিয়ার উদ্দিন ভূঁইয়া, জাবির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবির, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ আহমেদ এবং নাটক ও নাট্যতত্ত্ব অধ্যাপক ইস্রাফিল আহমেদ। কর্মকর্তাদের মধ্যে রাজিব চক্রবর্তী, নাহিদুর রহমান খান, সুদীপ্ত শাহীন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আখতারুজ্জামান সোহেল ও সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটন ছাড়াও অজ্ঞাতনামা দেড়শ-দুইশ জনকে আসামি হিসেবে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ‘গত ১৫ জুলাই সন্ধ্যা ৬টায় ছাত্রলীগ কর্তৃক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর হামলার প্রতিবাদে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে বাদীসহ শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত হন। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রক্টরসহ কয়েকজন শিক্ষক আলোচনার নামে কালক্ষেপণ করেন। শিক্ষার্থীদের দাবি না শুনে উল্টো তাদের হুমকি দেওয়া হয়। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক ও প্রশাসনের সরাসরি নির্দেশে শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ নেতাকর্মী ও বহিরাগত সন্ত্রাসীরা সশস্ত্র হামলা চালায়। এসময় অভিযুক্ত কর্মকর্তা ও শিক্ষকগণ উপস্থিত ছিলেন। 

এতে আরও উল্লেখ করা হয়, আটকে পড়া শিক্ষার্থীদেরকে হত্যার উদ্দেশ্যে দফায় দফায় হামলা চালানো হয়। নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের কমপক্ষে ১৫ জন এতে মারাত্মকভাবে জখম ও আহত হয়। হামলাকালে অভিযুক্তদের কাছে রামদা, পেট্রোল বোমা ও আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। 

মামলার বাদী সাজ্জাদুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের উপর অতর্কিত হামলার বিচার চাইতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রশাসনের মদদে ছাত্রলীগ ও ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা হামলা করেছিল। দীর্ঘদিন অপেক্ষা করলেও পুলিশ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় কেউ মামলা করে নাই। আমিসহ আমার সহযোদ্ধাদের উপর হামলার ঘটনায় সেজন্য মামলা দায়ের করেছি। আশা করি আসামিদের পুলিশ দ্রুতই গ্রেপ্তার করে আইনের মুখোমুখি করবে।’ 

অভিযুক্ত শিক্ষক-কর্মকর্তাদের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্টার এ বি এম আজিজুর রহমান বলেন, ‘এ ঘটনায় পুলিশ কোনো সহযোগিতা চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তা প্রদান করবে। একইসাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা হিসেবে তারাও কোনো আইনি সহযোগিতা চাইলে সেটিও বিবেচনা করবে।’ 

মামলার অগ্রগতির বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তা কামাল হোসেনকে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।

এদিকে, এ হামলায় জড়িতদের বিচারের দাবিতে রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মিনারের পাদদেশে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধন শেষে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে তারা মুরাদ চত্ত্বর পর্যন্ত যান। এ সময় তাদের ‘জ্বালোরে জ্বালো, আগুন জ্বালো’, ‘জেগেছেরে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’, ‘রক্তের বন্যায়, ধুয়ে যাবে অন্যায়’ প্রভৃতি স্লোগান দিতে দেখা যায়।