সারা বাংলা

প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়, শেষ হয় না কাজ!

প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও সাড়ে ১৩ কিলোমিটার রাস্তার উন্নয়ন কাজ হয়েছে মাত্র ২৭ শতাংশ। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না হওয়ায় বাড়ানো হয়েছে কাজের সময়সীমা। আর কাজের ধীরগতিতে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পরেছে শরীয়তপুরের জাজিরা টিএনটি মোড় থেকে পদ্মা সেতু গোলচত্বর পর্যন্ত রাস্তাটি। বর্ষা এলেই সৃষ্টি হয় খানাখন্দের। সরু সড়ক হওয়ায় মাঝে মধ্যেই বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। চরম ভোগান্তি আর ঝুঁকি নিয়ে চলছে যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী যানবাহন। ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। বর্ষা শেষ হলেই কাজ দ্রুত সম্পূর্ণ হবে বলে জানিয়েছে জেলা সড়ক ও জনপথ বিভাগ।

 

জেলা সড়ক ও জনপথ বিভাগ ও স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি ১৬৮২ কোটি ৫৪ লাখ ৯৭ হাজার টাকা ব্যয়ে তিনটি প্যাকেজের মাধ্যমে দুইটি সেতুসহ সড়কটির কাজ শুরু হয়। প্রথম প্যাকেজে শরীয়তপুর শহরের ফায়ার সার্ভিস থেকে জাজিরা টিএনটি মোড় পর্যন্ত সাড়ে ১৩ কিলোমিটার, দ্বিতীয় প্যাকেজে কোটাপাড়া সেতু ও কাজিরহাট সেতু এবং তৃতীয় প্যাকেজে জাজিরা টিএনটি মোড় থেকে নাওডোবা পদ্মা সেতু গোলচত্বর পর্যন্ত সাড়ে ১৩ কিলোমিটার। তিনটি প্রকল্পে কাজের মেয়াদ শেষ হলেও সার্বিক কাজ শেষ হয়েছে ৭০ ভাগ। এর মধ্যে জাজিরা টিএনটি মোড় থেকে জাজিরার নাওডোবা পদ্মা সেতুর গোলচত্বর পর্যন্ত মাত্র ২৭ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। সাড়ে ১৩ কিলোমিটার প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ১২৯ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। 

পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর শরীয়তপুর-ঢাকা সড়কে বেড়েছে যানবাহন। শরীয়তপুর সদর থেকে জাজিরার নাওডোবা পদ্মা সেতুর গোলচত্বর পর্যন্ত সড়কটি ২৭ কিলোমিটার। সড়কটির উন্নয়ন কাজ ২০২০ সালে শুরু হয়ে ২০২৪ সালে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও কাজ শেষ না হওয়ায় ২০২৬ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে প্রকল্পের সময়সীমা। এরমধ্যে শরীয়তপুর সদর থেকে জাজিরা পর্যন্ত সাড়ে ১৩ কিলোমিটার রাস্তার কাজ এগিয়ে চললেও চরম ধীর গতিতে চলছে জাজিরা টিএনটি মোড় থেকে পদ্মা সেতু গোলচত্বর পর্যন্ত সাড়ে ১৩ কিলোমিটার অংশের সড়ক প্রকল্পের কাজ। এর মধ্যে প্রকল্পের মেয়াদ পার হলেও সড়কটির কাজ হয়েছে মাত্র ২৭ ভাগ। এতে বর্ষা এলেই সৃষ্টি হয় খানাখন্দের। সরু সড়ক হওয়ায় মাঝে মধ্যেই বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল।

স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, খানাখন্দে ভরে যাওয়া সড়কটি দিয়ে আমরা চলাচল করতে পারি না। বৃষ্টি হলে এই সড়কে যাওয়া ছেড়ে দেই। জানি না এই সড়কটি নির্মাণে কর্তৃপক্ষের বোধোদয় হবে কি না। 

পাইকারি কাঁচামাল ব্যবসায়ী আব্দুল জলিল বলেন, রাস্তার এত খারাপ অবস্থার কারণে আমাদের ব্যবসা পরিচালনা করা খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে। কাঁচামাল আনা-নেওয়ার সময় রাস্তায় যানজট লেগেই থাকে। আর খানাখন্দের কারণে গাড়ির ক্ষতি হচ্ছে নিয়মিত। তাছাড়া মালামাল পৌঁছাতে বেশি সময় লাগছে। যার ফলে পণ্যের মানও অনেক ক্ষেত্রে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতি আমাদের ব্যবসায়ীক খরচও বাড়িয়ে দিয়েছে। আমরা দ্রুত রাস্তাটি মেরামতের দাবি জানাই, যাতে ব্যবসা স্বাভাবিকভাবে চালানো সম্ভব হয়।

 

বাসচালক রাসেল মিয়া বলেন, খারাপ রাস্তার কারণে প্রায়ই গাড়ির ক্ষতি হয়। এছাড়াও যাত্রীদেরও নানা ভোগান্তিতে পড়তে হয়। 

শরীয়তপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান বলেন, বর্ষার কারণে আমাদের সড়ক উন্নয়ন কাজে কিছুটা বিঘ্ন ঘটছে। ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে কাজ স্বাভাবিক গতিতে চালানো সম্ভব হয়নি। তবে বর্ষা শেষ হলে আমরা দ্রুত কাজ সম্পন্ন করার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছি। 

তিনি আরও বলেন, সড়কের উন্নয়ন কাজ দ্রুত শেষ করতে প্রয়োজনীয় জনবল ও সরঞ্জামও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আশা করছি, শুষ্ক মৌসুম শুরু হলে কাজের গতি বাড়বে এবং জনগণের দুর্ভোগ কমাতে দ্রুত সড়কটি চলাচলের উপযোগী করতে পারব। দ্রুত সড়কটি মেরামত করা হলে ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাবে জেলার অন্তত ১৩ লাখ মানুষ।