সারা বাংলা

এক দফা দাবিতে নার্স-মিডওয়াইফারিদের কর্মবিরতি পালন 

এক দফা দাবিতে দেশব্যাপী সকল সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ৩ ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করেছেন নার্স, মিডওয়াইফারি ও নার্সিং শিক্ষার্থীরা। 

নার্সিং, মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল থেকে সব নন-নার্সিং প্রশাসনিক ক্যাডারদের প্রত্যাহার করে সেখানে অভিজ্ঞ নার্সদের পদায়নের দাবিতে এই কর্মসূচি পালন করেন তারা। 

মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত তাদের এই কর্মসূচি চলে। 

এদিকে, নার্সদের কর্মবিরতিতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় বলে অভিযোগ করেছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা। যদিও আন্দোলনরত নার্সরা বলছেন, কর্মবিরতি চললেও জরুরি রোগীদের জন্য ইমারজেন্সি স্কোয়াড রাখা হয়েছিল।

ফেনী: সকাল ১০টার দিকে ফেনী জেনারেল হাসপাতালের প্রশাসনিক ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিতে দেখা যায় নার্স ও শিক্ষার্থীদের। তারা ‘নার্সিং অধিদপ্তরে নার্স আসুক, জনসেবায় নার্স থাকুক’, ‘আমাদের আন্দোলন যোগ্য নার্সের পদায়ন’, ‘এক দফা স্বাধীন এই বাংলায় যোগ্য নার্সদের চেয়ার চাই’ লেখা প্লাকার্ড প্রদর্শন করেন।

আন্দোলনরত ফেনী জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স আবদুস সাত্তার বলেন, ‘২০১৬ সালের নিয়োগ বিধি অনুযায়ী অভিজ্ঞ নার্সরা যোগ্যতার ভিত্তিতে নার্সিং মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর ও কাউন্সিলের শীর্ষ পদে পদেপদোন্নতি পাওয়ার কথা। তবে, প্রশাসন ক্যাডাররা এ পদগুলো আকড়ে ধরে রেখেছেন। ফলে সারা বাংলাদেশে নার্স ও মিডওয়াইফারি শিক্ষার্থীরা নানা সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অনতিবিলম্বে প্রশাসন ক্যাডারদের সরিয়ে নার্সদের পদায়নের দাবি জানাচ্ছি।’ 

জলি আক্তার নামে এক নার্স বলেন, ‘আমাদের দাবি যৌক্তিক। আমাদের বাড়িতে আমরা কর্তা হব, পাশের বাড়ির কেউ কর্তা হলে আমরা সেটা কোনো ভাবেই মেনে নেব না সে যতই যোগ্য হোক। দ্বিতীয় গ্রেডের আমলারা আমাদের অধিদপ্তরে এসে চতুর্থ গ্রেডের চাকরি কেন করতে চান সেটিই আমার বুঝে আসে না। এর একটিই কারণ তারা নার্সদের ভুল বুঝিয়ে দুর্নীতি করতে চান। আমরা আমলাতন্ত্র থেকে মুক্তি চাই। আমাদের পদ আমাদের ফিরিয়ে দেওয়া হোক।’

তারেক চৌধুরী নামে রোগীর স্বজন বলেন, ‘রোগীদের হাসপাতালে রেখে নার্সরা রাস্তায় নেমে আন্দোলন করছেন। রোগীরা ওয়ার্ডে কাঁতরাচ্ছেন। দাবি আদায়ের জন্য এভাবে রাস্তায় না নেমে বরং সংশ্লিষ্ট কর্তা ব্যক্তিরা বসে বিষয়টি সমাধান করলে ভালো হতো।’ 

শেরপুর: ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট শেরপুর জেলা সদর হাসপাতালে নার্স ও মিডওয়াইফারিরা সকাল ৯ টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত  কর্মবিরতি পালন করেন। নার্স ও মিডওয়াইফারিরা সংস্কার পরিষদের বন্যারে তারা এই কর্মসূচি পালন করেন। এর আগে, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতে বিশেষ স্কোয়াড গঠন করেন। 

কর্মসূচিতে নার্স ও মিডওয়াইফারি সংস্কার পরিষদের আহ্বায়ক শিখা রানী সরকার, সদস্য সচিব মো. গোলাম রাব্বানী, হাসপাতালের সুপারভাইজার রাশিদা আক্তার, নার্সিং ইন্সট্রাক্টর শরিফা আক্তার ও সিনিয়র স্টাফ নার্স আছরিনা আক্তার বক্তব্য দেন। বক্তারা আগামীকালের মধ্যে তাদের দাবি না মানা হলে তাদের এই কর্মবিরতি কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে এবং পরবর্তীতে আরো কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে বলে জানান। 

নড়াইল: নার্সিং ও মিডওয়াইফারি সংস্কার পরিষদ নড়াইল জেলা শাখার উদ্যোগে কর্মবিরতি শুরু হয় সকাল ১০টায়। নড়াইল আধুনিক সদর হাসপাতাল চত্বরে আয়োজিত সমাবেশে  দাবি বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে বক্তব্য দেন নড়াইল নার্সিং কলেজের ইন্সট্রাক্টর শামীমা আক্তার, নড়াইল সদর হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স পলি কুন্ড, নড়াইল নার্সিং কলেজের ছাত্র সাবু সরদার প্রমুখ।

এসময় আন্দোলনের নড়াইল শাখার সমন্বয়ক শাহীনুর খাতুন, নড়াইল নার্সিং কলেজের অধ্যক্ষ আফরোজা পারভিন, নড়াইল সদর হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স মজিদা খাতুন, বিউটি পারভীন, হেনা পারভীন, সুপ্রিয়া মন্ডল, শিখা বিশ্বাস, ইলা রানী মজুমদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। 

আন্দোলনকারীরা বলেন, দাবি মেনে নেয়া না হলে আগামীকাল ২ অক্টোবর সকাল ৯টা হতে দুপুর ১২টা, ৩ অক্টোবর সকাল ৮টা হতে ২টা পর্যন্ত কর্মবিরতি অব্যাহত থাকবে। পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় কমর্সচি অনুযায়ী আন্দোলন চলবে।

ফরিদপুর: ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল প্রাঙ্গণে কর্মবিরতি পালন করেছে নার্সরা। তাদের দাবি, আমলা ও নন ক্যাডারদের বাদ দিয়ে যোগ্য ও দক্ষতার ভিত্তিতে নার্সদের  পদায়ন করতে হবে।

নার্সিং ও মিডওয়াইফারি সংস্কার পরিষদের ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সদস্য সচিব সাদিয়া আফরিন জানান, কেন্দ্রীয় কর্মসূচি হিসেবে আমাদের এক দফা দাবি আদায় করা হবে। আমাদের নার্সিং ডিপার্টমেন্ট আমরা চালাতে চাই। নার্সিং ডিপার্টমেন্টের লোক ছাড়া কেউ বুঝতে পারবে না নার্সদের কীভাবে চালাতে হয়। আজ আমরা তিন ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করেছি।

বরিশাল: বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও সদর হাসপাতালের নার্সরা এই কর্মসূচি পালন করেন। তবে, তারা হাসপাতালের জরুরি সব সেবা অব্যাহত রাখেন। 

নার্সিং ও মিডওয়াইফারি সংস্কার পরিষদ বরিশাল মহানগরের আহ্বায়ক ডা. মো. আলী আজগর বলেন, এই কর্মসূচি গতকাল সোমবার থেকে শুরু হয়েছে। তিন ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করা হচ্ছে। আজকে তৃতীয় দিনেও তিন ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করা হয়েছে। আগামীকাল বুধবার (২ অক্টোবর) পাঁচ ঘণ্টা অর্থাৎ সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত কর্মবিরতি পালন করা হবে। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আমরা আমাদের দাবি তুলে ধরছি। রোগীদের এতে কোনো ভোগান্তি হচ্ছে না। রোগীদের সেবা নিশ্চিত করতে আলাদা টিম কাজ করছে। 

তিনি আরও বলেন, হাসপাতালের জরুরি বিভাগ, অপারেশন থিয়েটার, ডায়ালাইসিস ওয়ার্ড, আইসিইউ, সিসিইউ, শিশু ওয়ার্ড, নবজাতক শিশুদের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (স্কানু), লেবার ওয়ার্ড কর্মসূচির আওতামুক্ত ছিল। মুমূর্ষ রোগীদের সেবায় নার্সদের জরুরি স্কোয়ার্ড নিয়োজিত ছিল।

পরিষদের সদস্য সচিব শাহ আলম বলেন, শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও বরিশাল জেনারেল হাসপাতালের নার্সরা কর্মসূচি পালন করেছেন। আমরা দীর্ঘদিন ধরেই দাবি করে আসছি অধিদপ্তরে ও কাউন্সিলের প্রধান হিসেবে নার্সদের পদায়ন করার। নার্সদের বিষয়ে নার্সদের চেয়ে ভালো কেউ কিছু করতে পারবেন না।