দুর্গাপূজার প্রস্তুতি প্রায় শেষের দিকে। এসময় কিশোরগঞ্জ শহরের বত্রিশ এলাকার গোপীনাথ জিউড় আখড়ায় পূজামণ্ডপের সবগুলো প্রতিমা ভেঙে ফেলার অভিযোগ উঠেছে।
দুর্বৃত্তরা বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) ভোররাতে এসব প্রতিমা ভাঙচুর করে বলে অভিযোগ। এ ঘটনায় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ঘটনার পর জরুরি বৈঠক করেছে জেলা প্রশাসন। সেখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করে দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে।
এদিকে ঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার দুপুরে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে। মিছিলটি শহরের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে গিয়ে সমাবেশ করে। সেখানে বক্তব্য রাখেন হিন্দু নেতৃবৃন্দ। পরে সেখানে গিয়ে জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনকে সান্ত্বনা দিয়ে বক্তব্য দেন। একই সঙ্গে ভাঙচুরে জড়িতদের গ্রেপ্তারের আশ্বাস দেন।
স্থানীয় লোকজন জানায়, বৃহস্পতিবার ভোররাতে জেলা শহরের বত্রিশ এলাকার শ্রী শ্রী গোপীনাথ জিউর আখড়া প্রাঙ্গণে স্থাপিত গোপীনাথ সংঘের দুর্গাপূজা মণ্ডপের সবগুলো প্রতিমা ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা।
তারা জানান, আখড়ার সবগুলো গেট বন্ধ ছিল। পাঁচজন পাহারাদার রাত তিনটা পর্যন্ত জেগে ছিলেন। পরে তারা ঘুমিয়ে যায়। এ সুযোগে ভোর রাতে দুর্বৃত্তরা দেয়াল টপকে ভেতরে ঢুকে দুর্গা, অসুর, কার্তিক, গনেশ, লক্ষ্মী, সরস্বতীসহ সবগুলো প্রতিমা ভেঙে পালিয়ে যায়।
খবর পেয়ে সকালে জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
গোপীনাথ জিউর আখড়ার দুর্গাপূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি লিটন সরকার বলেন, এ আখড়ায় প্রথমবারের মতো দুর্গাপূজার আয়োজন করেছিলাম আমরা। এ ভাঙচুর আমাদের ভেতরে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। এমন ঘটনা শহরে আর কোনোদিন হয়নি। যারা প্রতিমা ভাঙচুর করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে চায়, তাদের চিহ্নিত করে দ্রুত গ্রেপ্তার করা হোক।
পুলিশ জানায়, রাতভর স্থানীয় গোপীনাথ সংঘ সংগঠনের ছেলেরা মন্দির পাহারায় ছিলেন। রাত সাড়ে তিনটা পর্যন্ত পাহারা দায়িত্বে থাকা সংগঠনের পাঁচ সদস্য জেগে ছিলেন। ভোরে তারা ঘুমিয়ে পড়লে দুর্বৃত্তরা দেয়াল টপকে মন্দিরে ঢুকে মুর্তিগুলো ভাঙচুর করে।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি নারায়ণ দত্ত প্রদীপ বলেন, পূজার আগে দুর্গা প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনায় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন ব্যথিত হয়েছে। সবাই এখন আতঙ্কে রয়েছে। এভাবে যদি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটতে থাকে, তাহলে আমরা কিভাবে ধর্মীয় উৎসব পালন করবো।
এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী বলেন, দুর্বৃত্তদের ধরতে ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ ব্যাপারে আমরা কঠোর অবস্থানে রয়েছি। দুর্বৃত্তদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা হবে। আশা করি দুর্গাপূজা নিরাপদ ও উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে।
এ দিকে এ ঘটনার পর দুপুরে কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খানের সভাপতিত্বে কালেক্টরেট সভাকক্ষে জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে পুলিশ সুপার, সেনাবাহিনী ও র্যাবসহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এতে অংশ নেন। সভায় প্রতিমা ভাঙচুরের সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান, হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা।
ঘটনার পর জেলার সবগুলো পূজামণ্ডপের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক। এবার কিশোরগঞ্জের ১৩টি উপজেলায় ৩৬৩টি মণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।