সারা বাংলা

পদ্মায় আবারো বাড়ছে পানি, ভাঙন আতঙ্ক 

উজানের ঢলে গত তিনদিন ধরে চাঁপাইনবাবগঞ্জে পদ্মা নদীতে ১ দশমিক ৩৩ মিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সঙ্গে জেলার মহানন্দা ও পূনর্ভবা নদীতেও বাড়ছে পানি। নতুন করে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় পদ্মার তীরবর্তী মানুষরা আতঙ্কে রয়েছেন।

স্থানীয়রা বলছেন, এবার পানি বৃদ্ধিতে বন্যার আতঙ্ক না থাকলেও নদী ভাঙনের শঙ্কা আছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, নদীতে পানি বাড়লেও তা বিপৎসীমর অনেক নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে- গত সপ্তাহে পদ্মার পানি চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদরের দুটি ও শিবগঞ্জ উপজেলার চারটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলে ঢুকে পড়ায় অনেক মানুষ পানিবন্দি হয়ে দুর্ভোগে পড়েছিলেন। তখন অস্বাভাবিক হারে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নদী তীরবর্তী মানুষ বন্যা আতঙ্কে দিন পার করছিলেন। এর কিছুদিন পরই পদ্মার পানি কমতে শুরু করে। এরপর আবারও পদ্মা নদীতে পানি বাড়তে শুরু করেছে। 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরীসংখ্যান মতে - পদ্মা নদীতে গত ৩ দিনে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে ১ দশমিক ৩৩ মিটার। বর্তমানে নদীটিতে পানির স্তর রেকর্ড করা হয়েছে ২০ দশমিক ৮৫ মিটার। পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে পদ্মা নদীর বিপৎসীমা ধরা হয়েছে ২২ দশমিক ০৫ মিটার। ফলে নদীটিতে বিপৎসীমা থেকে ১ দশমিক ২০ মিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। 

পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার আরও দুটি নদীতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এরমধ্যে মহানন্দা নদীতে গত চার দিনে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে ২১ সেন্টিমিটার। বর্তমানে নদীটিতে পানির স্তর রেকর্ড করা হয়েছে ১৯ দশমিক ২৫ মিটার। পানি উন্নয়ন বোর্ড মহানন্দা নদীর বিপৎসীমা ধরেছে ২০ দশমিক ৫৫ মিটার। পূনর্ভবা নদীতে গত চার দিনে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে ৩৬ সেন্টিমিটার। বর্তমানে নদীটিতে পানির স্তর রেকর্ড করা হয়েছে ১৯ দশমিক ৮৪ মিটার। পানি উন্নয়ন বোর্ড মহানন্দা নদীর বিপৎসীমা ধরেছে ২১ দশমিক ৫৫ মিটার। 

শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের চরলক্ষ্মীপুরের বাসিন্দা বশির আহমেদ বলেন, ‘কিছুদিন আগে অস্বাভাবিকভাবে পদ্মা নদীতে পানি বাড়ায় আমাদের চতুর্মুখী ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছিল। যেভাবে পানি বেড়েছিল, ঠিক একইভাবে পানি কমে গেলে মানুষ ভোগান্তি থেকে মুক্তি পায়। এখন আবার নদীতে পানি বাড়ছে।’ 

অপর বাসিন্দা মুনিরুল ইসলাম বলেন, ‘পদ্মা নদীতে পানি বাড়লে স্রোতের বেগ বেড়ে যায়। স্রোতের কারণে নদীতে ভাঙন দেখা দেয়। ফলে অনেক মানুষ ভিটামাটিসহ আবাদি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যান।’ 

তিনি আরও জানান, ‘প্রায় প্রতিবছরই এমন প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে পদ্মার তীরবর্তী বাসিন্দাদের পার হতে হয়। এখন যেভাবে পানি বাড়ছে বন্যা আশঙ্কা নেই ঠিকই তবে, ভাঙন আতঙ্ক স্পষ্ট হচ্ছে আমাদের কাছে।’ 

পাঁকা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক বলেন, ‘পদ্মা নদীতে পানি বাড়লে প্রায় সময় ভাঙন দেখা দেয়। এবারও ভাঙন আশঙ্কা করছে নদী তীরবর্তী মানুষজন।’

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) কাওছার আলী বলেন, ‘কয়কদিন ধরে পদ্মাসহ জেলার আরও দুটি নদী মহানন্দা ও পূনর্ভবায় পানি বাড়ছে। এখনো নদীগুলোর পানি বিপৎসীমার অনেক নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।’ 

ভাঙনের আশঙ্কা নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নদীর ওপারে কিছু এলাকায় ভাঙনের খবর শুনেছি। নদীর তীরবর্তী মানুষের খোঁজখবর নিয়ে দুর্ভোগ লাঘবে কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।’