মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলায় দেশের বিভিন্ন এলাকার সাধু ও বাউলদের নিয়ে শরতের লালন গীতির আসর অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্রবার (৪ অক্টোবর) বিকেলে উপজেলার লতব্দি ইউনিয়নের দোসরপাড়ার টেকেনহাট এলাকার ইছামতী নদীর তীরে বটতলায় পদ্মহেম ধামে এ ‘সাধুসঙ্গ’ আসর বসে।
পদ্মহেম ধামের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি কবির হোসেনের সভাপতিত্বে বিকেল চারটার দিকে লালনগীতির উদ্বোধন করেন মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক ফাতেমা তুল জান্নাত।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক/রাজস্ব) ফেরদৌস ওয়াহিদ, সিরাজদিখান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাব্বির আহমেদ প্রমুখ।
লালন সাঁইজির বিখ্যাত গান, সবে কি হবে ভবে ধর্মপরায়ণ, যার যার ধর্ম সে সে করে, তোমার বলা অকারণ অকারণ....গানটি দিয়ে লালনগীতির আসর শুরু হয়।
সন্ধ্যায় ‘সত্য কাজে কেউ নাই রাজি, সবি দেখি তানা না না... জাত গেল জাত গেল বলে, একি আজব কারখানা...’এর মতো লালন সাঁইজির বিখ্যাত গান পরিবেশ করেন দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা সাধুরা। গভীর রাত পর্যন্ত চলে এসব পরিবেশনা।
লালন গীতির গান পরিবেশন করেন চুয়াডাঙ্গার সাধু-ফরিদপুর থেকে সাধু-বাউল পাগল বাবলু, বাউল শিল্পী আবদুল লতিফ, এলিজা পুতুল, সমির বাউল, সুকুমার ঘোল, বংশীবাদক বজলু শাহর মতো বিখ্যাত সাধকেরা।
লালনের বাণী ও গান শুনতে দুপুরের পর থেকে বৃষ্টি উপেক্ষা করে দেশের নানা প্রান্ত থেকে লালনভক্তরা হাজির হন পদ্মহেম ধামে। সন্ধ্যার পর বাড়তে থাকে ভিড়। গান শুনে মুগ্ধ হন শ্রোতারা। গানের তালে তালে ঝোলান মাথাও। গান শেষে হাততালি ও হুল্লোড়ে উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠে পদ্মহেম ধাম।
‘সাধুসঙ্গ’ উপলক্ষে এদিন নদীর ধারে খোলা মাঠে বসে গ্রামীণ মেলা। মেলায় মুখরোচক খাবার, বাচ্চাদের রাইড, গৃহস্থালির বিভিন্ন আসবাবের পসরা নিয়ে বসেন দোকানিরা। এমন সাধুসঙ্গের আয়োজনে খুশি স্থানীয় মানুষেরা।
এদিন বাউল আব্দুল লতিফ সরকার বলেন, আমরা বাউল। আমরা দেশের সাধারণ মানুষের জন্য গাই।আমরা দেশের যেকোনো স্থানে এসব গান গাইতে চাই। এজন্য আমাদের সহজ শর্তে প্রশাসনের অনুমতি চাই।
পদ্মহেম ধামের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কবির হোসেন বলেন, লালন সাঁইজি চেয়েছিলেন, যে যার মত ধর্ম পালন করুক। আমাদের দেশটা অসাম্প্রদায়িক ও মানবতার চেতনায় গড়ে উঠুক। তাঁর বাণীতে সেগুলোই তিনি বলেছেন। লালন সাঁইজির বাণী ও দর্শন গানে গানে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে আমাদের লালনগীতির আয়োজন ছিল। লালন সাইজির মতো বলে যাওয়া একটি মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চাই। যে সমাজে মানুষে মানুষে থাকবে না কোনো ভেদাভেদ।