সারা বাংলা

মিরসরাইয়ে ঝরনাগুলো যেন মৃত্যু ফাঁদ, ৫ বছরে নিহত ২০

চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলায় খৈয়াছড়া ঝরনা, রূপসী ঝরনা, নাপিত্তাছড়া ঝরনাসহ ছোট-বড় ঝরনাগুলো রীতিমতো মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে।

ঝরনা দেখতে গিয়ে, গোসলে নেমে অথবা পা পিছলে পড়ে এসব ঝরনায় মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। গত ৫ বছরে ঝরনার মৃত্যুফাঁদে ২০ জন পর্যটকের মৃত্যু ঘটেছে। সর্বশেষ গত এক সপ্তাহে ঝরনায় নিহত হয়েছেন তিন জন পর্যটক। 

ফায়ার সার্ভিস ও বন বিভাগ থেকে মিরসরাইয়ের ঝরনা সমূহে দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর পরিসংখ্যানে জানা যায়, ২০১৯ সালের ৪ সেপ্টেম্বর ফেনী থেকে আসা ফয়েজ আহমদ নামে এক পর্যটক খৈয়াছড়া ঝরনায় পা পিছলে পড়ে নিহত হন। আহত হন কমপক্ষে চার জন। একই বছরের ২৯ আগস্ট দেলোয়ার হোসেন নামে চট্টগ্রামের এক পুলিশ কর্মকর্তা আহত হন। ১৫ আগস্ট চট্টগ্রাম থেকে আসা মেহেদী হাসান (২২) নামে একজন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রের রুপসী ঝরনায় নির্মমভাবে মৃত্যু হয়। 

একই বছরের ২৬ জুলাই ঢাকা থেকে আসা আবু আলী আল হোসাইন মেমোরী (৩০) নামের প্রকৌশলী ছবি তুলতে গিয়ে অসতর্কতায় পিছলে পড়ে মারা যান খৈয়াছড়া ঝরনায়। ২০২২ সালের ১৯ জুন নাপিত্তাছড়া ঝরনায় চট্টগ্রাম থেকে আসা ইশতিয়াক (২২) নামে এক পর্যটকের লাশ উদ্ধার করে মিরসরাই থানা পুলিশ। সর্বশেষ একই বছরের ২০ জুন  নাপিত্তাছড়া ঝরনা এলাকা থেকে তানভীর নামে এক পর্যটকের লাশ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস। 

গত ২০২৩ সালের ২ জুলাইয়ে মিরসরাইয়ের এই রূপসী ঝরনার কূপ থেকে দুই পর্যটকের লাশ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস। নিহত পর্যটকেরা হলেন- মো. আরিফ (১৯) ও মো. জামিল (১৬)। 

সর্বশেষ গত শুক্রবার (৪ অক্টোবর, ২০২৪) সকাল ৮টায় মিরসরাইয়ের কমলদহ রূপসী ঝরনায় নিখোঁজ হন দুই শিক্ষার্থী। খবর পেয়ে মিরসরাই ফায়ার সার্ভিস ও আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দলের সদস্যরা দুপুরে ঝরনার কূপ থেকে দুই জনের মরদেহ উদ্ধার করে। 

নিহতরা হলেন- মুসফিকুর রহমান আদনান (২১) ও  মাহবুব রহমান মুত্তাকিম (২১)। আদনান রাজধানীর ইস্টওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ও মুত্তাকিম নারায়ণগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। এর আগে ২৮ সেপ্টেম্বর খৈয়াছড়া ঝরনার ওপর থেকে পাথর পড়ে মাহবুব হাসান (২৭) নামে এক ব্যাংক কর্মকর্তার মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটে। 

মিরসরাইয়ে ঝরনাগুলোতে পর্যটক মৃত্যুর ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে মিরসরাই ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের স্টেশনের স্টেশন কর্মকর্তা ইমাম হোসেন পাটোয়ারী বলেন, ‘মূলত পর্যটকদের অসতর্কতার কারণে ঝরনায় হতাহতের ঘটনা ঘটছে। গত এক সপ্তাহে মিরসরাইয়ে দুটি ঝরনা থেকে তিন পর্যটকের মরদেহ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস।’ 

মিরসরাইয়ে ঝরনা নিয়ন্ত্রক সংস্থা চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এস এম কায়চার জানান, মিরসরাইয়ের খৈয়াছড়া ঝরনাসহ সবগুলো ঝরনায় পর্যটকদের ভ্রমণ নিরাপদ করতে বন বিভাগের পক্ষ থেকে সব ধরনের নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পাথর পড়ে এক ব্যাংক কর্মকর্তার মৃত্যুর পর ঝরনা নিরাপদ করতে টানা চারদিন ঝরনা ভ্রমণ বন্ধ রেখে সকল ঝুঁকিপূর্ণ পাথর অপসারণ করা হয়েছে।

মিরসরাইয়ের প্রাকৃতিক ঝরনাগুলোর সৌন্দর্য পর্যটকদের হাতছানিতে ডাকে। তবে সৌন্দর্য উপভোগ করতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করা বা আহত হওয়া কোনোভাবেই কাম্য নয়। এ ব্যাপারে পর্যটন ও বন বিভাগকে পর্যটকদের নিরাপত্তায় আরও যত্নবান হতে হবে। দেশের পর্যটন খাতকে এগিয়ে নিতে এ খাতকে ঝুঁকিমুক্ত করতে হবে।