সারাদেশের মতো চাঁদপুরেও সনাতন ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে দুর্গা পূজার আয়োজন করছেন সনাতন ধর্মালম্বীরা। শেষ সময়ে মাটির প্রলেপ, রং তুলির আঁচড় এবং সাজস্বজ্জায় ব্যস্ত প্রতীমা শিল্পীরা।
ভালোভাবে পূজা শেষ করতে কেন্দ্রীয় নির্দেশনায় মাঠে থাকবে পূজা পরিষদ ও ঐক্য পরিষদের নেতারা। দুর্গোৎসবকে ঘিরে জেলায় সাম্প্রদায়িক সৌহার্দ্য রক্ষায় সর্বোচ্চ সতর্কতা নিয়ে প্রস্তত প্রশাসন।
রোববার (৬ অক্টোবর) শহরের পালপাড়া মন্দিরে গিয়ে দেখা যায় প্রতীমা ও বিগ্রহে রং তুলির আঁচড় দিচ্ছেন প্রতীমা শিল্পীরা।
চাঁদপুর সদরের আশিকাটির শ্রী শ্রী স্বচ্চিদানন্দ শ্যাম সুন্দর হরিসভার সভাপতি হারাধণ চন্দ্র দত্ত বলেন, ‘আকাশে সাদা মেঘের ভেলা এবং শুভ্র কাশফুল জানান দিচ্ছে শরতের শারদীয়া দুর্গোৎসবের। আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠ থেকে দশম দিন পর্যন্ত শারদীয়া দুর্গাপূজা করে সনাতন ধর্মালম্বীরা। ইতোমধ্যেই চাঁদপুরের ২২০টি পূজা মণ্ডপে প্রতীমা ও অন্যান্য দেবতার বিগ্রহ তৈরিতে মাটির প্রলেপ ও রং তুলির আঁচড়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কারিগররা। কোথাও কোথাও প্রতিমায় শাড়িসহ বিভিন্ন ধরনের অলঙ্কার পরাচ্ছেন শিল্পীরা। পূজা মণ্ডপগুলোর আলোকসজ্জা ও সৌন্দর্য বর্ধনসহ নিরাপত্তাজনিত কাজকর্মেও সনাতনীদের ব্যস্ততা সকলের নজর কেড়েছে।’
চাঁদপুর জেলা যুব ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব পার্থ গোপাল দাস বলেন, ‘দুর্গতি বা সংকট থেকে রক্ষা করেন দেবী দুর্গা। এবার ২ অক্টোবর মহালয়ার মধ্য দিয়ে দেবী পক্ষের সূচনা হয় এবং ১২ অক্টোবর মহাদশমীর বিহিত পূজার মধ্য দিয়ে সন্ধ্যায় বিসর্জনের মাধ্যমে শারদীয়া দুর্গোৎসবের সমাপ্তি ঘটবে। পৃথিবীতে এ বছর দেবী দুর্গার আগমন হচ্ছে দোলায় চড়ে। কৈলাশে ফিরবেন ঘোড়ায় চড়ে।’
প্রতীমা শিল্পী কমল পাল, অভিজিৎ কুমার অমিত, শ্যামল পালসহ অন্যরা জানান, বৃষ্টি ও বন্যায় খড় ও মাটি পেতে অনেকটা বেগ পেতে হয়েছে। তার ওপর এবার মণ্ডপে রেখেই প্রতীমা ও অন্যান্য দেবতার বিগ্রহ তৈরি করতে হচ্ছে। সবমিলিয়ে সময় পুষিয়ে নিতে ঘাম ঝরাতে হচ্ছে। রংসহ অন্যান্য উপকরণের দাম বেড়েছে। ভালো মজুরি পাওয়া নিয়েও দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তারা।
চাঁদপুরের দেবপুরের পল্লী চিকিৎসক লিটন সরকার বলেন, ‘দেবী দুর্গার অন্যান্য অস্ত্রের মধ্যে প্রধান অস্ত্র ত্রীশূল। আর বাহন সিংহ। তাই দেবীর আগমনিতে প্রত্যেক সনাতনীর মনেই উৎসবের আমেজ। আর এই দুর্গোৎসবকে ঘিরে মার্কেটগুলোতেও জামাকাপড় ও অন্যান্য কেনাকাটায় মেতে উঠেছেন সনাতনীরা। তবে সারা বছর পূজোর এই সময়টুকুতে মহা আনন্দের জন্য অপেক্ষায় থাকলেও এবার মনে দেশের সার্বিক পরিস্থিতে অনেকটা শঙ্কা রয়েছে।’
চাঁদপুর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তমাল কুমার ঘোষ বলেন, ‘সুন্দর ও যথাযথ সনাতন ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে শারদীয় দুর্গোৎসব করতে কেন্দ্রীয় নির্দেশনার আলোকে চাঁদপুরে প্রস্তুতি নিয়েছি। প্রশাসন ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের সাথেও সমন্বয় রেখেছি। আশা করছি সাম্প্রদায়িক সম্প্রিতীর জেলা হিসেবে এখানে দারুণভাবেই পূজো করা সম্ভব হবে।’
চাঁদপুর জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি বিনয় ভূষণ মজুমদার বলেন, ‘প্রশাসনের পাশাপাশি আমাদের নিজেদের যুবকরা ও ছাত্রছাত্রীরাও এবার পূজোতে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে মাঠে থাকবে। আশা করছি যেকোনো শঙ্কা উপেক্ষা করে ভালোভাবেই আমরা পূজো শুরু থেকে শেষ করতে পারব।’
নিরাপত্তা প্রসঙ্গে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন বলেন, ‘সনাতন ধর্মালম্বীদের শঙ্কিত হবার কারণ নেই। ইতোমধ্যেই সনাতন ধর্মালম্বী নেতৃবৃন্দসহ সরকারি কর্মকর্তা ও বিভিন্ন পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাথে ২২০টি পূজা মণ্ডপকে ঘিরে শান্তি ও সাম্প্রদায়িক সৌহার্দ্য বজায় রাখতে প্রস্তুতি ও সর্বোচ্চ সতর্কতা নেওয়া হয়েছে। আশা করছি সনাতন ধর্মালম্বীরা দারুণভাবেই এই শারদীয়া দুর্গোৎসব উদযাপন করতে পারবে।’