সারা বাংলা

আমার বউটা হয়ত মারাই যাবে!

প্রায় ১০ বছরের দাম্পত্য জীবন শিফা-জালাল উদ্দিনের। তারা নিঃসন্তান এবং হতদরিদ্র। এ দম্পতির সংসারে শুধু বাবা এবং মা ডাক ছাড়া অন্য অভাব তাদের মুখের হাসি কেড়ে নিতে পারেনি। সুখেই জীবন পার করছিলেন তারা। হঠাৎ করে তাদের জীবন উলটপালট হয়ে গেছে। একজনের ভেতর সঙ্গীকে চিরদিনের জন্য হারিয়ে বেঁচে থাকার যন্ত্রণা ভর করেছে, অন্যজন বেঁচে থাকার জন্য করছেন আকুতি!

বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) গিয়ে দেখা মিলল এ দম্পতির। হৃৎপিণ্ড ছিদ্র রোগ নিয়ে গত ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে শিফার চিকিৎসা চলছে ইউনিটটিতে। শিফা বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার চামরুল ইউনিয়নের দিনমজুর জালাল উদ্দিনের স্ত্রী।

সিফার স্বামী জালাল উদ্দিন বলেন, গত বছরের ডিসেম্বর প্রথম অসুস্থ হয়ে পড়লে শিফাকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই সময় বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে হাসপাতালের ডাক্তার তাদের জানান, জন্মগতভাবে শিফার হার্টে ছিদ্র রয়েছে। অপারেশন করলে সুস্থভাবে জীবনযাপন করতে পারবে।

জালাল উদ্দিন আরও বলেন, ‘ডাক্তার বললেও চিকিৎসার ব্যয় অনেক বেশি হওয়ায় ঢাকাতে নিয়ে যেতে পারিনি। হাসপাতালে একটু সুস্থবোধ করলে বাসায় নিয়ে গেছি। আবার অসুস্থ বেশি হলে হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। এভাবে এখন পর্যন্ত চার বার এ হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছি। এবার চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, যতটুকু চিকিৎসা দেয়ার মতো, সেগুলো দেওয়া হয়েছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার জাতীয় হৃদরোগ ফাউন্ডেশনে স্থানান্তর করেছেন। আজকেই সেখানে নিয়ে যেতে বলেছিলেন। আমার কাছে সেই টাকা নেই যে তাকে ঢাকায় নিয়ে যাব। শিফার বাবা মারা গেছে ১৫ বছর আগে। তার মাও প্রতিবন্ধী। আমার শ্বশুরবাড়ি থেকে সহযোগিতা করবে এমন কেউ নেই। আমিও দিনমজুরি করে জীবিকা নির্বাহ করি। চিকিৎসা না করালে আমার বউটা মারা যাবে!’

তিনি সমাজের হৃদয়বান ব্যক্তিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘আপনারা যদি সহযোগিতা করেন, তাহলে হয়ত আমার বউ এ সুন্দর পৃথিবীতে বেঁচে থাকবে।’

বগুড়া সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আবু সাঈদ কাওছার রহমান বলেন, ‘রোগীর স্বজনরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। যেহেতু তাদের আর্থিক অবস্থা ভালো নয়, সেহেতু আমাদের পক্ষ থেকে রোগীকে ঢাকায় স্থানান্তরের জন্য অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া বাবদ ৫ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, যদি আর্থিক অভাবে কেউ চিকিৎসা করতে না পারে, তাহলে জেলা সমাজকল্যাণ পরিষদ থেকেও আর্থিক অনুদান দেওয়া হয়। তাদের জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে আবেদন করতে বলা হয়েছে। তারা আবেদন দেওয়ার পর বরাদ্দ পেলে যাচাই-বাছাই শেষে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। 

রোগীর স্বামীর নম্বর: ০১৭৪০-১৬০৪৮৯.