সারা বাংলা

ত্রিপুরা পল্লীতে আতঙ্ক, চলছে দুর্গোৎসবের প্রস্তুতি

রাঙামাটি শহরের ত্রিপুরাপল্লী গর্জনতলী। ক্ষুদ্র জাতিসত্তার এই জনগোষ্ঠীর মানুষ সনাতন ধর্মে বিশ্বাসী। আর সনাতনীদের সবচে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে গর্জনতলীর অখণ্ডমণ্ডলী মন্দিরে চলছে শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততা। মণ্ডপ প্রাঙ্গণে বাঁশের ওপর ত্রিপল বাঁধার প্রস্তুতি চলছে। মণ্ডপের ভেতরেও চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। তুলির আঁচড় পড়েছে প্রতিমার গায়ে। যদিও পাহাড়ে সম্প্রতি পাহাড়ি-বাঙালি সংঘাতের কারণে ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত এই পল্লীতে রয়েছে আতঙ্ক। তবে সেই আতঙ্ক কাটিয়ে প্রশাসনের নিরাপত্তার আশ্বাসে সাড়ম্বরে প্রস্তুতি নিচ্ছে পূজা আয়োজনের। 

ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী গর্জনতলী অখণ্ডমণ্ডলী দুর্গোৎসব উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল ত্রিপুরা বলেন, ‘পাহাড়ের সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোর জন্য আমাদের মধ্যে আতঙ্ক আছে। প্রশাসন আমাদেরকে যদি সহযোগিতা করেন, তবে আমরা সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে পূজা উদযাপন করতে পারবো। প্রশাসন নিরাপত্তার বিষয়ে আমাদেরকে আশ্বাস দিয়েছে। আশা করছি কোনো রকম গোলযোগ ছাড়াই পূজা শেষ করতে পারবো।’

 

এদিকে জেলার অন্যতম বড় পূজার আয়োজক শ্রী শ্রী গীতাশ্রমেও চলছে শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততা। রঙ-তুলির আঁচড়ে প্রতিমাকে নিখুঁত হাতে তৈরির পাশাপাশি চলছে মণ্ডপ সজ্জার কাজও। পাহাড়ে চলমান অস্থিরতার মধ্যেও থেমে নেই দুর্গোৎসবের প্রস্তুতি। নানা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা মাথায় নিয়ে দুর্গাপূজাকে সর্বজনীন উৎসবে রূপ দিতে রাঙামাটির বিভিন্ন পূজা মণ্ডপে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। সাজ সজ্জার পসরা রাঙিয়ে মন্দিরে মন্দিরে যেন প্রতিমা কারিগর, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাটছে বিরামহীন ব্যস্ততা। 

শ্রী শ্রী গীতাশ্রম দুর্গোৎসব উদযাপন পরিষদের সভাপতি রাজু প্রসাদ দে বলেন, ‘সবার মধ্যে আতঙ্ক থাকলেও সেটা আস্তে আস্তে কেটে যাচ্ছে। প্রশাসনও যথেষ্ট তৎপর নিরাপত্তার বিষয়ে। আমরা আশাবাদী কোনো ধরনের সমস্যা হবে না এবারের পূজাতে। প্রস্তুতি ইতোমধ্যে শেষ পর্যায়ে রয়েছে।’

 

তবে দেশ ও পাহাড়ের চলমান পরিস্থিতির কারণে এবার পূজার বাজেটে প্রভাব পড়েছে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা। জেলার পুরনো মন্দির শ্রী শ্রী রক্ষাকালী মন্দির দুর্গোৎসব উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সৈকত বিশ্বাস অন্তু বলেন, দেশ ও পাহাড়ের চলমান পরিস্থিতির কারণে এবার পূজার বাজেট অনেক কমাতে হয়েছে। বাজেট কমানোর পরও ছোট বাজেটের টাকা তুলতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। অন্যান্য বছর আমরা জেলা পরিষদ থেকে সহযোগিতা পেলেও এবার সেটা পাচ্ছি না। এতে সব মণ্ডপে পূজা আয়োজনে বেগ পেতে হচ্ছে। 

রাঙামাটি জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এবার ৪৪টি পূজামণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে রাঙামাটি সদরে ১৫টি, কাপ্তাই উপজেলায় ৮টি, রাজস্থলীতে ৪টি, কাউখালীতে ৪টি, বরকলে ২টি, বাঘাইছড়িতে ৫টি, লংগদুতে ৩টি এবং নানিয়াচর, বিলাইছড়ি ও জুরাছড়ি উপজেলার প্রতিটিতে ১টি করে মণ্ডপে পূজার আয়োজন করা হয়েছে। আগামী ৯ অক্টোবর থেকে দুর্গাপূজা শুরু হয়ে ১৩ অক্টোবর শেষ হবে।

 

জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অমলেন্দু হাওলাদার জানান, সম্প্রতি নানান ঘটনার কারণে রাঙামাটিতে কিছুটা আতঙ্ক কাজ করলেও প্রশাসন, পুলিশ, সেনাবাহিনী, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ সকলের আশ্বাস ও সহযোগিতায় আশা রাখছি কোনো সমস্যা ছাড়াই পূজা শেষ করতে পারবো। 

নিরাপত্তার কোনো শঙ্কা নেই জানিয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান জানিয়েছেন, প্রতিটি পূজা মণ্ডপে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। পুলিশ, আনসার ও বিজিবি মোতায়েন থাকবে। এছাড়া প্রতিটি মণ্ডপে সিসি ক্যামেরা থাকবে। আশা করছি সুন্দর ও জাঁকজমকপূর্ণভাবে দুর্গোৎসব উদযাপন হবে।