দেশের যে কয়েকটি জেলায় বাণিজ্যিকভাবে মধু চাষ হয়, তার মধ্যে নড়াইল অন্যতম। বছরের সাত মাস ধরে মধু সংগ্রহ করলেও বাকি পাঁচ মাস মৌ চাষিদের মৌমাছি পালন করতে হয়। এ সময় মৌমাছির খাবার হিসেবে নিয়মিত চিনির পানি খাওয়াতে হয়। চিনির দাম বৃদ্ধিও পাওয়ার কারণে মৌমাছি পালন করতে মৌ চাষিদের হিমসিম খেতে হচ্ছে। মৌমাছির খাবারের খরচ যোগাতে না পেরে অনেকে এ পেশা ছেড়ে বিভিন্ন পেশায় চলে গেছে।
প্রতি বছর জেলার বিভিন্ন বিলের মাঝে মাঠে যখন সরিষা ফুলসহ বিভিন্ন প্রকার ফুলে ফুলে ভরে যায়, তখন নড়াইলে দুই শতাধিক মৌ চাষি মৌমাছি বাক্স নিয়ে বিলের মাঝে মধু সংগ্রহ করতে শুরু করে। বছরের প্রায় সাত মাস দিগন্ত জোড়া মাঠের ফসলের ক্ষেতের ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে তারা।
নড়াইল সদর উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের মৌ চাষ আহম্মদ আলী বাচ্চু মোল্যা বলেন, বছরের সাত মাস বিলের মাঝে ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করেন। অফ সিজনের ৫ মাস নিয়মিত চিনির পানি খাইয়ে মৌমাছি বাঁচিয়ে রাখতে হয়। খাবার ঠিকমতো না দিলে মৌমাছি মারা যায়। বাজারে চিনির দাম বেশি থাকায় তারা বিপাকে পড়েছেন।
লোহাগড়া উপজেলার শিংগা গ্রামের মাওলানা বোরহান উদ্দিন বলেন, মৌ চাষির সংখ্যা প্রতি বছর বাড়লেও মধুর ন্যায্য মূল্য না পাওয়া, চিনির দাম বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কারণে নতুন করে কেউ মৌ চাষে আগ্রহী হচ্ছে না। পুরনো যে সকল মৌ চাষি রয়েছেন, তারাও হিসসিম খাচ্ছেন। চিনির দাম কমানো, সহজশর্তে মৌ চাষিদের মাঝে ঋণ বিতরণসহ সরকারের কাছে বিভিন্ন সহযোগিতা চেয়ে ইতোমধ্যে বেশ কয়েক বার মানববন্ধন করেছেন তারা।
নড়াইল ফুল-ফল মৌ চাষি সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ বাবুল শেখ বলেন, বাক্স পদ্ধতিতে মৌ চাষে প্রতি মৌসুমে একটি বাক্স থেকে দুই থেকে আড়াই মণ মধু সংগ্রহ করা যায়। প্রতি বছর এ জেলা থেকে কমপক্ষে সাতশত মেট্রিক টন মধু উৎপাদন হয়। যার আনুমানিক বাজার মূল্য ৩৫ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন নড়াইলের উপ-ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মোহাম্মদ সুলাইমান হোসেন বলেন, প্রতি বছর জেলায় মৌ চাষিরা সরকার নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার থেকে বেশি মধু উৎপাদন করেন। এ জেলা থেকে বছরে সাতশত মেট্রিক টন মধু উৎপাদন হয়। বিসিক সব সময় মৌ চাষিদের পাশে থেকে বিভিন্ন প্রকার সহযোগিতা করে। তাদের আধুনিক ট্রেনিংসহ ক্ষুদ্রঋণ দেওয়ার বিষয়টি চলমান রয়েছে।