সারা বাংলা

গাইবান্ধার ৬৯ মন্দিরে বাজবে না পূজার বাদ্য

হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। আগামী ৯ অক্টোবর থেকে শুরু হতে যাচ্ছে এই উৎসব। শুভ মহালয়ায় দেবীর আহ্বান শেষে এখন মণ্ডপে-মণ্ডপে চলছে দেবী বরণের প্রস্তুতি। গাইবান্ধার ৫৬১টি মণ্ডপে দেবী দুর্গার আরাধনার আয়োজন করা হবে। তবে এ বছর জেলার ৬৯টি মন্দিরে বাজবে না পূজার বাদ্য। 

গাইবান্ধা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছর জেলার সাত উপজেলা ও চারটি পৌরসভায় ৬৩০টি স্থায়ী মন্দিরে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছিল। এ বছর ৫৬১টি মন্দির ও মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে গাইবান্ধা সদর উপজেলায় ৯৫টি, সুন্দরগঞ্জে ১১৫টি, সাদুল্লাপুরে ৯৫টি, পলাশবাড়িতে ৫৮টি, গোবিন্দগঞ্জে ১২৭টি, সাঘাটায় ৫৮টি এবং ফুলছড়িতে ১৩টি মন্দির ও মণ্ডপে শারদীয় দুর্গোৎসব পালিত হবে।

মন্দিরে দুর্গাপূজা কম হওয়ার কারণ হিসেবে তিথি জটিলতা, দ্রব্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতি, পুরোহিত ও মালাকার সংকটের কথা বলছেন পূজা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এসব কারণে এ বছর ৬৯টি মন্দিরে হচ্ছে না দুর্গাপূজা। এ নিয়ে আক্ষেপ করতে দেখা গেছে মন্দিরে প্রার্থনা করতে আসা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের। 

গাইবান্ধা সদর উপজেলার খোলাহাটি ইউনিয়নের রতবাজার মন্দিরের মালাকার সুশীল চন্দ্র। তিনি বলেন, ‌‘প্রতি বছর ঠাকুরের দিঘী এলাকার কয়েকটি গ্রামে স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে প্রায় ১৫টি মন্দিরে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়। এ বছর সেখানে ১০টি মন্দিরে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে।’ 

দুর্গাপূজা আয়োজনে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে গাইবান্ধার অধিকাংশ মন্দির ও মণ্ডপে

কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রতিটি জিনিসের দাম বেশি। মালাকারদের অনেকেই পেশা ত্যাগ করেছেন। অনেকে একা না করে সবাই মিলে বারোয়ারি ‍পূজা করছেন।’

সদর উপজেলার রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের হাসপাতাল বালুয়া বাজারে প্রতি বছর দুর্গাপূজার আয়োজন করা হলেও এবছর এই মন্দিরে পূজা হচ্ছে না। মন্দিরটির সেবক রতন কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘জিনিসপত্রের দাম বেশি ও পুরোহিত সংকটের কারণে আমাদের মন্দিরে এবছর দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়নি।’

শহরের খানকাশরীফ এলাকার বাসিন্দা সন্তোষ কুমার বর্মন বলেন, ‘নিজ এলাকার মন্দিরে পূজার আয়োজন হলে সেটি বেশি আনন্দের হয়। এ বছর আমাদের এলাকার মন্দিরে পূজার আয়োজন করা হয়নি। তাই ছেলে-মেয়েদের মন খারাপ। ভাবছি, পরিবার নিয়ে গাইবান্ধা শহরের কোনো মন্দিরে যাব।’

গাইবান্ধা ভিএইড রোডের ঐতিহ্যবাহী কালীবাড়ি মন্দিরের পুরোহিত দীপ মুন্সি বলেন, ‘এ বছর তিথি জটিলতার কারণে পুরোহিতরা একাধিক মন্দিরে দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না। তিথি অনুযায়ী এ বছর ভোরবেলা আরতি দেওয়া হবে। তাই একজন পুরোহিত একের অধিক মন্দিরে পূজা অর্চনার দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না।’

গাইবান্ধা ভিএইড রোডের কালীবাড়ি মন্দির 

বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের গাইবান্ধা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক চঞ্চল সাহা বলেন, ‘অন্য বছরগুলোর তুলনায় এবার দুর্গাপূজায় সবচেয়ে বেশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। প্রশাসন ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো আমাদের যথেষ্ট সহযোগিতা করছে। সব মিলিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে শারদীয় দুর্গোৎসব পালিত হবে বলে আমরা আশা করছি।’

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন কমিটির গাইবান্ধা জেলা শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক দীপক কুমার পাল বলেন, ‘এবছর পূজার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিটি দ্রব্যের বাজার দর অনেক বেশি। মালাকার সংকটেও অনেক মন্দিরে প্রতিমা তৈরি করা সম্ভব হয়নি। মন্দিরে পূজা আয়োজন কম হওয়ার পেছনে এবার রাজনৈতিক অস্থিরতাও কিছুটা দায়ী।’ 

গাইবান্ধা পুলিশ সুপার মোশাররফ হোসেন রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘প্রতিটি পূজা মণ্ডপে নির্দিষ্ট সংখ্যক আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। আগামীকাল বুধবার থেকে জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে পুলিশ, র‍্যাব এবং সেনাবাহিনীর টহল অব্যাহত থাকবে। পূজা নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।’