গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় নির্মাণ কাজ শেষের পরপরই দেবে যাওয়া সেতুটির একাংশ ভেঙে গেছে। ফলে তিস্তা পাড়ের বেলকা ও হরিপুর ইউনিয়নের অন্তত ২০ হাজার মানুষ বিপাকে পড়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার তিস্তার একটি শাখা নদীর খেয়াঘাট দিয়ে বেলকা ও হরিপুর ইউনিয়নের চরাঞ্চলের শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার অন্তত ২০ হাজার মানুষের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা ছিল নৌকা। ব্রিজ না থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাধ্য হয়ে মালামালসহ নৌকায় করে যাতায়াত করতেন তারা। সময়মত নৌকা না পেলে ভোগান্তিতে পড়তে হতো রোগী, ব্যবসায়ী, স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসাগামী শিক্ষার্থীদের।
স্থানীয়দের দীর্ঘ দিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সেখানে ২৭ লাখ টাকা ব্যয়ে সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সুন্দরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) প্রকল্পের আওতায় ৩৪৪ ফুট দীর্ঘ ও ৫ ফুট প্রস্থ সেতুটি তৈরিতে ব্যয় ধরা হয় ২৭ লাখ টাকা। এর কাজ পায় গাইবান্ধার স্থানীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ছানা এন্টারপ্রাইজ।
২০২৩ সালের জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও কাজ শেষ না করেই টাকা উত্তোলন করেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। বিষয়টি জানাজানি হলে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে আবারও কাজ শুরু করে ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তড়িঘড়ি করে জুনের মাঝামাঝি এসে কাজ শেষ করেন তারা। কিন্তু কাজের মান নিম্নমানের হওয়ায় কয়েক দিন পরেই সেতুর মাঝখানের একাংশ দেবে যায়। সেসময় বাঁশের খুটি গেড়ে ঝুঁকি নিয়ে সেতু দিয়ে চলাচল করতেন চরাঞ্চলের মানুষ। কিন্তু মঙ্গলবার (০৮ অক্টোবর) সকালে পানির তীব্র স্রোতে সেতুর উত্তরের দেবে যাওয়া সেই অংশসহ প্রায় অর্ধেকটা ভেঙে যায়। এতে ক্ষোভ ব্যক্ত করেন স্থানীয়রা।
স্থানীয়রা বলছেন, দীর্ঘদিন পর একটি সেতু হলো। কিন্তু কাজের নিম্নমানের কারণে এক বছরের মাথায় সেতুটি পুরোপুরি ভেঙে গেল। এখন বাধ্য হয়ে নৌকায় বাড়তি টাকা ও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হতে হচ্ছে।
বেলকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ বলেন, ‘প্রথম থেকে কাজের মান নিম্ন হওয়ায় আমরা উপজেলা ইঞ্জিনিয়ারকে বিষয়টি জানিয়েছিলাম। কিন্তু তাতে কর্ণপাত করা হয়নি। সেতুটির কয়েকটি পিলার গত জুনে দেবে যাওয়ার পরও আমরা প্রতিবাদ করেছি। তাতেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। অবশেষে সেতুর অর্ধেক অংশ পানির স্রোতে ভেঙে গেছে। এখন আবারও পূর্বের মতো অসংখ্য মানুষের যাতায়াতে সমস্যা হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় ইউএনও তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছিলেন। জেলা থেকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসে পরিদর্শন করে গেছেন। সেই তদন্তের ফলাফল কী হয়েছে, জানা নেই। শুধু শুধু সরকারের এতগুলো টাকার অপচয় হয়েছে। জনগণের দুর্ভোগ, দুর্ভোগই থেকে গেল।
এ ব্যাপারে জানতে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল মান্নাফের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নাজির হোসেন রাইজিংবিডি-কে বলেন, ‘আমি এক সপ্তাহ আগে এখানে যোগ দিয়েছি। এ ঘটনায় সেসময় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সেই তদন্ত রিপোর্ট এখনও আমার দপ্তরে আসেনি। গতকালই আমি বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানিয়েছি। তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট প্রকৌশল এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’