ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভার এলাকায় পুলিশের পোশাক পরে ৬০ ব্যারেল সয়াবিন তেল ভর্তি একটি ট্রাক লুটের অভিযোগ উঠেছে। ট্রাকের চালক ও তার সহকারীকে একটি মাইক্রোবাসে উঠিয়ে মারধর করে ট্রাকটি লুট করা হয়। এ ঘটনা উল্লেখ করে সাভার মডেল থানায় মামলা দায়ের করতে গেলে পুলিশ ভুক্তভোগী চালকের বিরুদ্ধে মামলা করতে জানায় বলে জানিয়েছেন ট্রাক ও তেল মালিক।
বুধবার (৯ অক্টোবর) ভোর ৪ টার দিকে সাভারের ব্যাংক টাউন এলাকায় ঘটনাটি ঘটে। চালক ও তার সহকারীকে মাইক্রোবাসে তুলে পার্শ্ববর্তী ধামরাই উপজেলা সুতিপাড়া এলাকায় ফেলে রেখে যায় দুষ্কৃতকারীরা।
ভুক্তভোগীরা হলেন- গাড়ির চালক মো. সেলিম ও তার সহকারী রাজীব। তারা সাভারের নামাবাজার এলাকার বিশ্বনাথ ট্রেডার্সে চাকরি করেন। এই প্রতিষ্ঠানেরই তেল আনার সময় ঘটনাটি ঘটে।
ভুক্তভোগীরা জানান, ঢাকার ডেমরা এলাকার টিকে গ্রুপ কারখানা থেকে তেল নিয়ে সাভার নামাবাজারে আসছিলেন তারা। সাভারের আলমনগর এলাকায় প্রথমে পুলিশের পোশাক পরিহিত এক ব্যক্তি সংকেত দিয়ে ট্রাকটি থামান। ট্রাকটি কোথায় যাবে, কোথা থেকে এসেছে এ তথ্য নিয়ে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। সাভারের ব্যাংক টাউন এলাকায় পুলিশের পোশাক পরিহিত সেই ব্যক্তিসহ পাঁচ জনের একটি দল হাইয়েস মাইক্রোবাস দিয়ে ট্রাকটিকে ব্যারিকেড দিয়ে আটকানোর চেষ্টা করে। তখন ট্রাকের সঙ্গে মাইক্রোবাসটির ধাক্কা লাগে।
ট্রাকটি থামালে চালক ও সহকারীকে মারধর করে মাইক্রোবাসে তুলে নেয় দুষ্কৃতকারীরা। মাইক্রোবাসে ট্রাকের ধাক্কা লেগে যে ক্ষতি হয়েছে তা পরিশোধ করতে বলা হয়। পরে ট্রাক চালক ও তার সহকারীর চোখ-মুখ বেঁধে নিয়ে যাওয়া হয়। ধামরাই উপজেলা সুতিপাড়া এলাকায় পরে ফেলে রেখে যায় দুষ্কৃতকারীরা।
ট্রাক চালক সেলিম বলেন, ‘আমাদের তেলের দাম প্রায় ১৯ লাখ টাকা। ট্রাকের দাম ১২ থেকে ১৩ লাখ টাকা। সব লুট করে নিয়েছে দুষ্কৃতকারীরা। তারা মোট পাঁচ জন ছিল। তাদের মধ্যে একজন পুলিশের ড্রেস পরা ছিল। লাঠি ছাড়া কোনো অস্ত্র কিংবা ওয়্যারলেস চোখে পড়েনি।’
বিশ্বনাথ ট্রেডার্সের মালিক লোকনাথ ঘোষ বলেন, ‘পুলিশ আমার ড্রাইভারকে সন্দেহ করে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে বলেছে। ড্রাইভার সেলিম আমার অত্যন্ত পরিচিত। তিনি দীর্ঘদিন আমার সঙ্গে কাজ করছেন। তার মাধ্যমে আমি চারটি ট্রাক কিনেছি। তিনি আমার ক্ষতি করবেন না আমি নিশ্চিত। আমি তার বিরুদ্ধে মামলা করবো না। অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে মামলা না নিতে চাইলে আমি আমার ট্রাক হারিয়ে যাওয়ার একটি সাধারণ ডাইরি করতে চেয়েছিলাম। থানা থেকে আমাদের তাও করতে দেয়া হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ট্রাক চালক ও সহকারীকে ব্যাংক টাউন থেকে হাইয়েস মাইক্রোবাসে উঠিয়ে চোখ মুখ হাত বেঁধে ফেলে দুষ্কৃতকারীরা। পরে তাদের মারধর করে চেতনানাশক ট্যাবলেট খাওয়ানোর চেষ্টা করে তারা। কিছুটা খাওয়ায়ও। তবুও তাদের জ্ঞান ছিল।’
সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জুয়েল মিয়া বলেন, ‘এ ঘটনায় আমরা অবশ্যই মামলা নেব। যাচাই বাছাই চলছে। ট্রাক চালকের কথা আমাদের তথ্য উপাত্ত অনুযায়ী বিশ্বাসযোগ্য হচ্ছে না। ট্রাক থামিয়ে চোখে মলম দেওয়া হয়েছে দাবি করা হয়েছে, সে বিষয়টি আসলে প্রশ্নবিদ্ধ। যদিও মালিক তার চালককে যথেষ্ট বিশ্বাস করছেন, আমরাও তদন্ত করছি। তদন্ত করে আমরা দ্রুত অপরাধীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনব। মালামাল উদ্ধার করব। আমরা কাজ করছি।’