কুষ্টিয়ায় গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত সুরুজ আলী বাবুর (৩২) লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কবর থেকে তুলতে দেয়নি তাঁর পরিবার। একই দিন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত আশরাফুল ইসলামের (৩৬) লাশও ময়নাতদন্তের জন্য কবর থেকে তুলতে না দেওয়ায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফিরে গেছেন।
শহরের মডেল থানার সামনে গত ৫ আগস্ট বিকেলে সুরুজ ও আশরাফুল নিহতের ঘটনায় পৃথক মামলার পর গত ৩ অক্টোবর লাশ ময়নাতদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। পরে বুধবার (৯ অক্টোবর) দুপুরে আদালতের নির্দেশে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কবর থেকে লাশ তুলতে যান। লাশ তুলতে গেলে দুই পরিবারই আপত্তি জানায়। ফলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ সংশ্লিষ্টরা ফিরে যান।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, ৫ আগস্ট দুপুরে শহরের থানাপাড়া এলাকায় মারধর ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে নিহত হন সুরুজ আলী বাবু। এ ঘটনায় ১৫ আগস্ট রাইসুল হক নামে এক আন্দোলনকারী বাদী হয়ে ৩৫ জনের নাম উল্লেখ করে কুষ্টিয়া মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। নিহত বাবু সদর উপজেলার হাটশ হরিপুর গ্রামের শালদহ এলাকার মৃত নওশের আলীর ছেলে। তিনি পেশায় স্বর্ণকার ছিলেন।
এদিকে একই দিন দুপুরে শহরের বকচত্বর এলাকায় আশরাফুল ইসলাম গুলিতে নিহত হন। হত্যার অভিযোগে ২০ আগস্ট তার স্ত্রী লাবণী আক্তার ইতি কুষ্টিয়া মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় ২৯ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। নিহত আশরাফুল (৩৬) সদর উপজেলার শালদহ গ্রামের কফিল উদ্দিনের ছেলে। তিনি রং মিস্ত্রির কাজ করতেন। উভয় মামলায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়েছে।
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক ইকবাল হাসান বলেন, ‘লাশ দুটো ময়নাতদন্তের জন্য কবর থেকে উঠাতে গিয়ে উভয় পরিবারসহ গ্রামবাসীদের আপত্তির মুখে পড়া হয়। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে বুঝিয়ে কোনো সুফল আসে না। তারা কেউ লাশ উঠাতে রাজি হননি। একপর্যায়ে সেখান থেকে চলে আসা হয়। লাশের ময়নাতদন্ত করা না গেলে হত্যা মামলার ভবিষ্যৎ কী হবে, বলা যাচ্ছে না।’
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আন্দোলনকারী বাবুকে এলোপাতাড়িভাবে মারধর ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আশরাফুলকে শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুলি করে হত্যা করা হয়।
বাবু হত্যা মামলার বাদী রাইসুল হক বলেন, ‘ঘটনার এত দিন পরে এসে আন্দোলনে শহীদের লাশ কবর থেকে তোলা মানে অমর্যাদা করা। তাই পরিবার চায় না বাবুর লাশ উত্তোলন হোক। তাছাড়া তদন্তের স্বার্থে যেকোনো ধরনের সহযোগিতা করতে আমরা রাজি আছি।’
নিহত আশরাফুলের স্ত্রী লাবণী আক্তার ইতি বলেন, ‘আমি আমার স্বামীর লাশ কবর থেকে উত্তোলন করতে রাজি হয়নি। এতে যদি আসামিরা ছাড়া পেয়ে যায়, তবে যাক। আল্লাহ এর বিচার করবেন।’
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জাহিদ হাসান বলেন, ‘লাশ উত্তোলনের ব্যাপারে বেশ কিছু বিষয় লক্ষ্য করে ম্যাচ সেন্টিমেন্টকে আমলে নিই। ওই মুহূর্তে কোনো ত্বরিত সিদ্ধান্ত না নিয়ে জেলার ভারপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেটকে অবহিত করি। পরে চলে আসি। তাদের (নিহতের পরিবার) মূল চাওয়াকে আমলে নিই।’