নেত্রকোণায় সাম্প্রতিক বন্যার পানি কমতে শুরু করলেও বাসিন্দাদের দুর্ভোগ কাটেনি। পানিবন্দি ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতার কারণে এলাকার অনেকেই চরম দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন। ধান-চালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী পানিতে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় খাবারের জন্য এসব মানুষকে পড়তে হচ্ছে কষ্টের মধ্যে।
জেলার ২৫ হাজার হেক্টর জমির আমন ধান এখনও পানির নিচে রয়েছে। এছাড়া ২৩২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে এবং প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় আছেন। অনেক গ্রামীণ সড়ক ও রাস্তা এখনও পানির নিচে থাকায় কাজের সন্ধানে বের হওয়া মানুষদের জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সারওয়ার জাহান জানান, জেলার কংস, সোমেশ্বরী, ধনু, উব্দাখালীসহ সব নদ-নদীর পানি দ্রুত কমছে। তবে উব্দাখালী নদীর কলমাকান্দা পয়েন্টে এখনও পানি বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপরে রয়েছে। অন্যান্য নদ-নদীতে পানি বিপৎসীমার নিচে নেমে গেছে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, নদীগুলোর পানি ধনু নদী হয়ে মেঘনায় দ্রুত প্রবাহিত হবে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) তথ্য অনুযায়ী, জেলায় এলজিইডির আওতাধীন ৫ হাজার ৯৫৩ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ১ হাজার ৬৩৮ কিলোমিটার পিচ ঢালা সড়ক। বাকি সড়কগুলো সিসি, আরসিসি, মেগাটম, কার্পেটিং ও কাঁচা সড়ক। পানিতে ডুবে থাকা সড়কগুলো থেকে পানি নেমে গেলেও অনেক সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ব্যবহার করা যাচ্ছে না। বিভিন্ন স্থানে স্রোতের কারণে সড়ক ভেঙে গেছে, ফলে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে মানুষকে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. নুরুজ্জামান জানিয়েছেন, আকস্মিক বন্যায় ২৪ হাজার ৬৬৭ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া ১৭৭ হেক্টর জমির সবজি নষ্ট হয়েছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শাহজাহান কবীর জানান, বন্যায় এক হাজার ৪৮০টি পুকুর ও খামারের ৭২৩ দশমিক ৪৩ টন মাছ ও পোনা ভেসে গেছে। এতে প্রায় আট কোটি ২৪ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
নেত্রকোণা জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস গণমাধ্যমকে জানান, এ পর্যন্ত চার লাখ টাকা, তিন হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার এবং ৮০ টন চাল বিতরণ করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, পরিস্থিতি অনুযায়ী বরাদ্দের পরিমাণ আরও বাড়ানো হচ্ছে। এছাড়া সমন্বয় করে বিভিন্ন এনজিও, সংগঠনসহ ব্যক্তি উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত আছে।