সারা বাংলা

ময়লার ভাগাড়ে পরিণত খাল পরিষ্কারে স্বেচ্ছাসেবীরা

মানিকগঞ্জ শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত খালটি ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। খালটিকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে এনে পানি প্রবাহ নিশ্চিত করতে এবং সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ দুই দফায় প্রায় ৪০ কোটি টাকা খরচ করছে। তবে, তাতে সুফল মেলেনি।

সম্প্রতি সামজিক সংগঠন বিডি ক্লিনের সহযোগিতায় খালটি পরিষ্কার করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এরই অংশ হিসেবে শুক্রবার (১১ অক্টোবর) খালটি থেকে আবর্জনা অপসারণে কাজ শুরু করেন সংগঠনটির ৩৬০ জন কর্মী। স্বেচ্ছাসেবীদের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ মাঠে খালটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. মানোয়ার হোসেন মোল্লা। এসময় স্থানীয় সরকার শাখার উপ-পরিচালক ও পৌরসভার প্রশাসক সানজিদা জেসমীন, সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) লিটন ঢালী, পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী গিয়াস উদ্দিন, পৌরসভার সচিব মো. বজলুর রহমান, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিডি ক্লিনের ঢাকা বিভাগীয় কমিটির সভাপতি সাইফুল ইসলামসহ সংগঠনের কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

 

জেলা শহরের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত খালটির দৈর্ঘ প্রায় দেড় কিলোমিটার। দুই পাড়ের বাসিন্দা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ফেলা বর্জ্যে খালটি পরিণত হয় ময়লার ভাগাড়ে। ইতোপূর্বে বেশ কয়েকবার খালের সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ করেছিল পৌর কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ রয়েছে, নিম্নমানের কাজ হওয়ায় সেই উদ্যোগ সফল হয়নি। ২০২২ সালে ২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে খালটির সৌন্দর্য বৃদ্ধির কাজ হাতে নেওয়া হয়। গত ৫ আগস্ট সরকারের পতনের পর ঠিকাদার পালিয়ে যাওয়ায় থমকে যায় সেই কাজ।

মানিকগঞ্জ জেলা শহরের বাসিন্দা গোলাম ছারোয়ার ছানু বলেন, ‘খালটির সংস্কার ও ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করানোর দাবি ছিল আমাদের। আজকে বিডি ক্লিনের মাধ্যমে খালটির ময়লা পরিষ্কার করা হচ্ছে, এটি খুবই ভালো কাজ। এই কাজটি করার কথা ছিল পৌর কর্তৃপক্ষের।’

তিনি আরও বলেন, ‘২০০৮ সালের দিকে খালটির সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে একটি প্রকল্প হাতে নেয় পৌরসভা। প্রকল্পে ১১ কোটি টাকার মতো কাজ করা হলেও নগরবাসী কোনো সুফল পায়নি। এরপর ২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে খালটি সংস্কার ও খালের দুইপাড় সৌন্দর্য বৃদ্ধির প্রকল্প নেয় পৌরসভা। দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সেই কাজের ঠিকারদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক পলাতক থাকায় কাজটিও থেমে যায়। আজকে বিডি ক্নিনের মাধ্যমে খালটি পরিষ্কার করা হচ্ছে। আগামীতে পৌরবাসীকে এই কাজের সুফল ধরে রাখতে হবে। খালে সব ধরনের আবর্জনা ফেলা থেকে আমাদের বিরত থাকতে হবে।’

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সাউথ-ইস্টের শিক্ষার্থী ও বিডি ক্নিনের কর্মী নুসরাত জাহান লামিয়া বলেন, ‘আমাদের সংগঠনের কর্মীরা সারা দেশের বিভিন্ন এলাকায় ময়লা-আবর্জনাযুক্ত খাল, ডোবা, নদী ও জলাশয় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করে। মানুষের মধ্যে সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য আমরা বিডি ক্লিন কাজ করি। সারা দেশের ৫৭টি জেলা টিম এবং ১৫৭টি উপজেলা টিম নিয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কাজ করছি আমরা।’

তিনি আরও বলেন, ‘আজকে মানিকগঞ্জ এসেছি একটি খাল পরিষ্কার করার জন্য। আবর্জনা পরিষ্কার করে শহরবাসীকে একটি পরিচ্ছন্ন খাল উপহার দেব আমরা। তবে, পরবর্তীতে এই খালের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দায়িত্ব পৌরবাসীকেই নিতে হবে। তাহলেই আমাদের পরিশ্রম সার্থক হবে।’

স্থানীয় সরকার শাখার উপ-পরিচালক ও পৌরসভার প্রশাসক সানজিদা জেসমীন বলেন, ‘ধারাবাহিকভাবে পৌর শহরের বিভিন্ন জায়গায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান অব্যাহত রাখতে পৌরবাসীকে এগিয়ে আসতে হবে। আজকে আমাদের ডাকে সাড়া দিয়ে আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হওয়া খালটি পরিষ্কার করে দিচ্ছে। এরপর খালে যেন ময়লা না ফেলা হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।’