একের পর এক বিয়ে, ধর্ষণে অন্তঃসত্ত্বা ও নারীদের যৌন হয়রানিসহ একাধিক অভিযোগ উঠেছে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার চন্ডিপুর ইউনিয়নের সীচা গ্রামের বাসিন্দা আতারুল ইসলামের (৩৭) বিরুদ্ধে। তার এমন অনৈতিক কার্যকলাপ প্রকাশে ক্ষোভে ফুঁসছে গ্রামের মানুষ। আতারুল ওই গ্রামের মৃত ইয়াকুব আলীর ছেলে ও পেশায় অটোরিকশাচালক।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি আতারুলের ধর্ষণে এক গৃহবধূ অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ার খবর জানাজানি হলে তার কুকীর্তি ফাঁস হতে থাকে। এ ঘটনায় সুন্দরগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী নারী। এরপর থেকে খোঁজ মিলছে না আতারুলের।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ২০ মে রাতে গোয়াল ঘরে গরুকে খড় দিতে গেলে ওই গৃহবধূকে ধর্ষণ করেন আতারুল। এ ঘটনা কাউকে বললে জীবননাশের হুমকিসহ সামাজিকভাবে হয়রানির ভয় দেখানো হয়। ভয়ে ভুক্তভোগী কাউকে কিছু বলেননি। এরপর আরও কয়েকবার তাকে ধর্ষণ করেন আতারুল। এতে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন তিনি।
ভুক্তভোগীর চাচা শ্বশুর বলেন, আতারুল এক বাপের এক ছেলে। কিছু জমি-জমা আছে। এছাড়া অটোরিকশা চালায়। এখন পর্যন্ত চারটি বিয়ে করেছে শুনেছি। এছাড়া তার বিরুদ্ধে নারীঘটিত একাধিক অভিযোগ রয়েছে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে আতারুল আতঙ্কে সন্ধ্যার পরে ঘর থেকে কোনো নারী বের হন না। এই লম্পট আমার ভাতিজার বউকে ধর্ষণ করেছে। সে এখন পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা।
ভুক্তভোগীর শ্বশুর বলেন, গত এপ্রিলে আমার ছেলে রাঙ্গামাটিতে একটি ইটভাটায় কাজে যায়। এরপর থেকে ছেলের বউ দুই নাতনিকে নিয়ে আমার বাড়িতে থাকে। এর মধ্যে আতারুলের কু-নজর পরে পুত্রবধূর ওপর। আতারুল গ্রামের অনেক মেয়ের সর্বনাশ করেছে। প্রশাসনের কাছে তার কঠিন শাস্তি দাবি করছি।
ভুক্তভোগী গৃহবধূ বলেন, লোকমুখে অন্তঃসত্ত্বার খবর শুনে স্বামী বাড়ি এসেছিল। কিন্তু তিনি আমার সঙ্গে একটি কথাও বলেননি। আমার ছোট ছোট দুইটা মেয়ে আছে। ওই লম্পটের কঠিন শাস্তি দাবি করছি। তা না হলে আত্মহত্যা ছাড়া আমার আর কোনো উপায় থাকবে না।
সীচা গ্রামের ষাটোর্ধ বাসিন্দা মর্জিনা বেগম বলেন, আতারুল আমার নাবালক মেয়েকে বিয়ে করে ছেড়ে দিছে। তারপর আরও একটা বিয়ে করে তাকেও ছেড়ে দিছে। এরপর আরও একজনের সাথে অঘটন ঘটাইয়া বিয়ে করে। তারেও ছেড়ে দিছে। এভাবে সে তিনটা জীবন শেষ করছে।
চন্ডিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুম মিয়া বলেন, স্থানীয় ইউপি সদস্যের মাধ্যমে বিষয়টি জেনেছি। ভুক্তভোগীর পরিবার এবং গ্রামের লোকজন আমার কাছে এসেছিল। ধর্ষণের বিচার করার ক্ষমতা ইউনিয়ন পরিষদের নেই। বিষয়টি এখন আদালতের ব্যাপার।
সুন্দরগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ও অভিযোগের তদন্ত কর্মকর্তা আসাদুল ইসলাম বলেন, ভুক্তভোগী এবং এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছি।
সুন্দরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহাবুব আলম বলেন, বর্তমানে ওই গৃহবধূ পাঁচ মাসের অন্ত:স্বত্বা। তার স্বামী বর্তমান থাকায় পেটে কার বাচ্চা সেটা ডিএনএ পরীক্ষা ছাড়া প্রমাণ করার উপায় নেই। ভুক্তভোগীকে মামলা করার পরামর্শ দিয়েছি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে আতারুলের মুঠোফোন নম্বরে কল দিলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।