কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার সবচেয়ে জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয় হালদার বাড়ির সর্বজনীন মন্দিরে। পূজা উপলক্ষে সেখানে গ্রামীন মেলার আয়োজন হয়ে থাকে। বিভিন্ন ধরনের গৃহস্থলির পণ্য, শিশুদের খেলনা ও খাবার নিয়ে মেলায় অংশ নেন দোকানিরা। আশপাশের প্রায় ১০টি গ্রামের মানুষ প্রতিদিনই ভিড় করছেন এই মেলায়। দুর্গাপূজা ও গ্রামীন এই মেলা হিন্দু-মুসলিমদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।
মিরপুর উপজেলার সদরপুর ইউনিয়নের সদরপুর গ্রামে হালদার বাড়ির মন্দির প্রাঙ্গণে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই মন্দির কমিটির সভাপতি কৃষ্ণ পদ হালদার।
কৃষ্ণ পদ হালদার বলেন, বৃটিশ শাসনামলে এই অঞ্চলের অনেক জমিদার নিম্নবর্ণের হিন্দুদের মন্দিরে পূজা দিতে বাধা দিতেন। নিজেদের মন্দিরে গরিব প্রজাদের পূজা করতে তারা নিষেধ করেন। একপর্যায়ে এই অঞ্চলের নিম্নবর্ণের হিন্দুরা একসঙ্গে জমিদার কর্ণচন্দ্র হালদারের কাছে অভিযোগ জানান। কর্ণচন্দ্র হালদার তখন সাধারণ প্রজাদের কথা চিন্তা করে নিজ উদ্যোগে তার জমিদার বাড়ির আঙ্গিনায় মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন।
জমিদার কর্ণচন্দ্র হালদারের সময় থেকেই এলাকার নিম্নবর্ণের হিন্দুরা হালদার বাড়ির মন্দিরে পূজা করে আসছেন। এরপর থেকেই প্রতিবছর এই মন্দিরে শারদীয় দুর্গাপূজাসহ বিভিন্ন পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
পূজা উপলক্ষে মেলায় আগত খেলনা বিক্রেতা সুজন আলী বলেন, ‘দুর্গাপূজা উপলক্ষে এই মন্দির প্রঙ্গণে মেলার আয়োজন হয়। আমি গত ২০ বছর ধরে এই মেলায় বিভিন্ন ধরনের খেলনা বিক্রি করার জন্য নিয়ে আসি। মন্দিরে পূজা করতে আসা মানুষদের পাশাপাশি আশপাশের গ্রামের অনেক মানুষ এই মেলায় আসেন। তারা বিভিন্ন ধরনের পণ্য কিনে নিয়ে যান। বেচাকেনাও ভালো হয়। এবারও বেচাকেনা ভালো। শিশুরা মেলা থেকে বিভিন্ন রঙের বেলুন, গাড়ি ও প্লাস্টিকের খেলনা পিস্তল বেশি কিনছে।’
মাটির হাড়ি-পাতিল বিক্রেতা ভগিরত পাল বলেন, ‘পণ্য বেচাকেনা ভালো হয় তাই আসি। এই মেলায় মাটির হাড়ি, কোলস, ব্যাংক, বিভিন্ন পশুর মূর্তি বিক্রি বেশি হচ্ছে।’
মেলায় খঁই বিক্রেতা সুমন দত্ত বলেন, ‘প্রতিদিন প্রায় ৪০-৫০ কেজি খঁই আর ৩০-৪০ কেজি খাগড়া বিক্রি করছি আমি। লাভ ভালোই হচ্ছে।’
মেলায় আসা কামাল হোসেন বলেন, ‘আমি কয়েক বছর ধরে এই মন্দিরে দুর্গাপূজা দেখতে আসি। মিরপুর উপজেলার মধ্যে এই মন্দিরের প্রতিমা সবচেয়ে বেশি সুন্দর হয়। তাছাড়া এই স্থানটি পূজা উপলক্ষ্যে মিলন মেলায় পরিণত হয়। সব ধর্মের মানুষ এখানে আসেন। আমার মতে, যে যে ধর্মের হোক না কেন, উৎসবটা সবার হওয়া উচিত। তাই সবার সঙ্গে উৎসব পালন করতে এখানে আসি।’
রফিকুল ইসলাম নামে অপর ব্যক্তি বলেন, ‘সদরপুরে হালদার বাড়ির মন্দিরে জাঁকজমকপূর্ণভাবে পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই পূজা হিন্দু-মুসলিমদের মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে। পাশাপাশি মেলায় ঘুরতেও ভালো লাগছে।’
মিরপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আব্দুল হক বলেন, ‘আমি এ গ্রামেরই সন্তান। আমরা সবাই একসঙ্গে চলাচল করি। এখানে হিন্দু-মুসলিম বলে কোনো ভেদাভেদ নেই। আমরা সবাই মানুষ ও বাংলাদেশি।’
মিরপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির আব্দুল গফুর বলেন, ‘উপজেলার সব থেকে বড় মন্দির এটা। এখানে প্রতিবছর পূজা উপলক্ষে হিন্দু-মুসলিমদের মিলন মেলায় পরিনত হয়।’
মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তফা হাবিবুল্লাহ বলেন, ‘মিরপুর উপজেলার সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ও বড় পূজা মন্দির হলো হালদার বাড়ির। এখানে পূজা উপলক্ষে গ্রামীন মেলার আয়োজন হয়। আমরা এখানে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীসহ সবার নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করছি।’
মিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিবি করিমুন্নেছা বলেন, ‘ভক্ত ও দর্শনার্থীদের পদচারণায় মন্দির প্রাঙ্গন মুখরিত। মন্দির পরিদর্শনে এসে ভালো লাগছে।’