সারা বাংলা

রোবট তৈরি করে নবম শ্রেণির ছাত্রের চমক

রোবট তৈরি করে চমক দেখিয়েছে খুলনার নবম শ্রেণির ছাত্র রাকিব ভূঁইয়া। রোবটটির নাম দিয়েছে ‘গুগল অনিক্স’। ছয় মাসের চেষ্টায় স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিয়েছে রাকিবের। ভ্যান চালিয়ে উপার্জিত অর্থ দিয়েই এ রোবট তৈরি করেছে সে। 

রাকিবের তৈরি রোবট কথা বলতে পারে, সব প্রশ্নের উত্তর দেয় নির্ভুলভাবে। জবাব দেয় সালামের, শোনায় ছড়া-কবিতা-গানও। চারপাশটা দেখে ঘাড় ঘুরিয়ে। গ্যাস লিকেজ ও আগুন জ্বললে দেয় সিগন্যাল। একইসঙ্গে কল দেয় মালিকের ফোনে। চাকার সাহায্যে ছুটতে পারে এদিক-সেদিক। ভেতরে সেট করা প্রোগ্রাম বা গুগল থেকে এসব আপডেট জবাব দেয় রোবটটি।

খুলনার ফুলতলা উপজেলার দামোদর মুক্তময়ি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র রাকিব ভূঁইয়া। একই উপজেলার বরনপাড়ায় সরকারি প্রকল্পের টিনের ছোট্ট ঘরে থাকে বাবা-মা আর বোনকে নিয়ে। রাকিবের বাবা কামরুল ভুঁইয়া পেশায় ভ্যানচালক। মা হাসি বেগম গৃহিণী। দারিদ্রতার মাঝেও ছেলের উদ্ভাবনী ইচ্ছাকে উৎসাহ যুগিয়েছেন তারা। অভাবের সংসারের কারণে কখনও ভ্যান চালিয়েছে, কখনও ফেরি করেছে। তারপরও উৎসাহে ভাটা পড়েনি অদম্য কিশোরের।

রাকিব ভূঁইয়া জানায়, ছয় মাসের বেশি সময় পরিশ্রমের পর ‘গুগল অনিক্স’ নামের রোবট তৈরি করা হয়েছে। কখনো ভ্যান চালিয়ে, ফেরি করে, অনলাইনে কোডিং সেল করে, ঈদের নতুন পোশাক ক্রয়ের অর্থ ও বোনাসের টাকা জমিয়ে এই রোবট তৈরি করেছেন তিনি। এতে তার প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। তার তৈরি করা রোবট যেকোনো প্রশ্নের বুদ্ধিদীপ্ত জবাব দেয়া, ধ্বংসাত্মক কাজ দেখলেই সিগন্যাল পাঠানো ও আত্মরক্ষা করতেও সক্ষম। এছাড়া সিকিউরিটি গার্ড, আবহাওয়া সম্পর্কিত তথ্য প্রদান, আগুনের মধ্যে মানুষ শনাক্ত করে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের সহায়তা করতে পারবে এই রোবট। এছাড়া ছড়া-গান-কবিতাও বলতে পারবে।

রাকিব বলে, যদি আরও ভালোভাবে করা হয় তাহলে রোবটটি আধুনিক করা সম্ভব হবে। এটি মানুষের সেবায় কাজে লাগবে। এটি ফায়ার সার্ভিসের কল্যাণে কাজ করবে। একটি ঘরে আগুন জ্বললে বা ধোয়া সৃষ্টি হলে সেখানে এই রোববটি ব্যবহার করা যাবে। রোবটটি ছেড়ে দিলে অটোমেটিক সে মানুষ শনাক্ত করতে পারবে এবং আমাদের কাছে লোকেশন পাঠাবে। সেই লোকেশন অনুযায়ী লোকটাকে শনাক্ত করে উদ্ধার কাজে ফায়ার সার্ভিসকে সহযোগিতা করবে। গ্যাস লিকেজ ও আগুন ধরলে অ্যালার্ম ও কল দেবে। এছাড়াও নানাবিধ কাজে এই রোবট ব্যবহার করা যাবে। আরও আপডেট মডেলের রোবট তৈরি ও ভবিষ্যতে বাণিজ্যিকভাবে বিক্রির উদ্দেশ্য রয়েছে তার। 

বর্তমানে রোবটটি কাজ করায় আনন্দিত রাকিবের পরিবার। রাকিবের মা হাসি বেগম বলেন, রাকিব অনেক কষ্ট করে রোবটটি তৈরি করেছে। এ জন্য সে ভ্যান চালিয়ে, ফেরি করেছে। রাকিবকে আমরা তেমন সহযোগিতা করতে পারিনি। তবুও সে এটি বানিয়েছে। খুব ভালো লাগছে। এখন সরকারের সহযোগিতা পেলে রাকিব আরও ভালো কিছু করতে পারবে।

রাকিবের নিকটাত্মীয় বিএল কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আশরাফুল ইসলাম বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান না থাকলেও রাকিব ইন্টারনেটের সহযোগিতায় রোবট তৈরি করেছে। এটি অত্যন্ত আনন্দদায়ক ও উৎফুল্লদায়ক। রাকিব এই বিষয়ে যদি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা পায় তাহলে তার আরও উন্নতি হবে। দেশের কল্যাণে কাজে আসবে। এ জন্য সরকারের সার্বিক সাহায্য ও সহযোগিতার প্রয়োজন।

ফুলতলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাসনীম জাহান বলেন, স্কুলছাত্র রাকিব নিজ প্রচেষ্টায় রোবটটি তৈরি করেছে। আমি তার সঙ্গে কথা বলেছি। শিগগিরিই তার বাড়িতে যাব। তার এই রোবট তৈরিতে কীভাবে আরও সহযোগিতা করা যায় সেই বিষয়টি জেলা প্রশাসন এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে জানাবো। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার সার্বিক সহযোগিতায় কাজ করা হবে।

এদিকে, তার রোবট তৈরির খবরে দূরদূরান্ত থেকে ভিড় করছে উৎসুক মানুষ। রাকিবের মেধা কাজে লাগাতে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে তাকে আর্থিক-কারিগরি সহায়তা দেওয়া হবে—এমনটাই প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।