সারা বাংলা

ভাই বেঁচে থাকলে আজ অনেক খুশি হতো: শহিদ রায়হানের বোন

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে গত ৫ আগস্ট ঢাকার বাড্ডা এলাকায় শহিদ হন গুলশান কমার্স কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী মো. রায়হান। তার মৃত্যুর প্রায় আড়াই মাস পর মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) প্রকাশিত হয়েছে এইচএসসি পরীক্ষার ফল। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন এই শিক্ষার্থী। তার জিপিএ-২.৯২। ছেলের পাস করার খবর জানার পর থেকেই কান্না থামছে না মা-বাবা ও বোনের।

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর ঢাকার বাড্ডাতে বিজয় মিছিলে অংশ নিয়েছিলেন রায়হান। আনন্দ উল্লাস করার সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান তিনি। পরদিন ৬ আগস্ট (মঙ্গলবার) দুপুরে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। রায়হানের বাবা মো. মোজাম্মেল হোসেন বাড্ডার একটি বাড়িতে কেয়ারটেকারের চাকরি করতেন। রায়হান পাশেই একটি মেসে থাকতেন। 

আরও পড়ুন: এইচএসসি পরীক্ষা শেষ করতে পারলো না রায়হান

রায়হান নোয়াখালীর সদর উপজেলার নোয়ান্নই ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব দুর্গানগর গ্রামের আমজাদ হাজী বাড়ির মো. মোজাম্মেল হোসেন ও আমেনা দম্পতির  ছেলে। তিনি রাজধানীর গুলশান কমার্স কলেজ থেকে এবছর এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন। আজ সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে রায়হানের ফল জানতে পারে তার পরিবার। ছেলে উত্তীর্ণ হওয়ার খবর শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েন পরিবারের সদস্যরা।

রায়হানের বোন উর্মি আক্তার বলেন, ‘আমার ভাইয়ের জন্য বাবা-মা সব সময় কান্না করেন। এইচএসসি ফল দেওয়ার খবর শুনে বাবা-মা আরো বেশি কান্নাকাটি করছেন।  আমার ভাই বেঁচে থাকলে আজ অনেক খুশি হতো।’

রায়হানের মা আমেনা খাতুন বলেন, ‘এই পাস দিয়ে আমি কি করবো? আমার ছেলেই তো পৃথিবীতে নেই। অনেক কষ্ট করে তাকে পড়ালেখা করাচ্ছিল ওর বাবা। আমরা না খেয়ে আমাদের সন্তানদেরকে খাইয়েছি। একটি বুলেটে সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে।’ 

রাহানের বাবা মোহাম্মদ মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘আমি ঢাকায় একটি বাড়িতে কেয়ারটেকারের চাকরি করি। যা পাই তা দিয়ে কোনো রকমে সংসার ও ছেলে মেয়ের পড়ালেখার খরচ চালাই। রায়হান বাড্ডার একটি মেসে থাকতো। তার অনেক স্বপ্ন ছিল পড়ালেখা শেষ করে পরিবারের হাল ধরবে। ৫ আগস্ট বাড্ডা এলাকায় একটি বিজয় মিছিলে গিয়েছিলো রায়হান। সেই মিছিলে বুলেট তার জীবনটি নিয়ে নেয়।’

রায়হানের সহপাঠীরা বলেন, রায়হান মেধাবী শিক্ষার্থী ছিল। তার এ প্লাস পাওয়ার কথা। এবার সব পরীক্ষা হয়নি। তার রেজাল্ট দেখে আমরা মর্মাহত হয়েছি। 

গুলশান কমার্স কলেজের অধ্যক্ষ এম এ কালাম বলেন, আমাদের কলেজ থেকে বানিজ্য বিভাগ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় ৩৮১ জন পাস করেছে। রায়হান জিপিএ ২.৯২ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। তার ফলাফল আরও ভালো হওয়ার কথা। কীভাবে এতো খারাপ হলো তা আমাদের জানা নেই। তার মৃত্যু আমাদের কাঁদায়। সরকার যেনো তার পরিবারের পাশে থাকে সেই আশা করছি।’