সারা বাংলা

পূর্ণ শক্তিতে কাজ শুরু করেছে সিএমপি, বেড়েছে আভিযানিক সাফল্য

পূর্ণ শক্তিতে এবং বিস্তৃত পরিসরে কাজ শুরু করেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। এতে নগর পুলিশের আভিযানিক সাফল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে নগরীর আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।  সিএমপি’র অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) তারিক আজিজ এতথ্য জানিয়েছেন।

পুলিশ জানায়, গত ২৮ সেপ্টেম্বর পুলিশের আইজিপি ময়নুল ইসলাম চট্টগ্রাম সফর করেন। তিনি চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশসহ চট্টগ্রাম অঞ্চলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। সভায় পুলিশকে পুরোপুরি কার্যকর করার লক্ষ্যে বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা প্রদান করেন তিনি। আইজিপির দিক-নির্দেশনা অনুসরণ করে সিএমপি পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজের নেতৃত্বে আভিযানিক কার্যক্রম পুরোপুরি শুরু হয়েছে। 

গত ১ অক্টোবর থেকে গতকাল মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) পর্যন্ত সিএমপির বিভিন্ন থানায় ১৬২টি মামলা হয়েছে। গত ১৫ দিনে ২৯৪ জন পরোয়ানাভুক্ত আসামিসহ মোট আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে ৪৯৪ জন। গত ১৫ দিনে প্রায় ১৯ হাজার পিস ইয়াবা, ৫৮ কেজি গাঁজা ও ১০৩ বোতল ফেন্সিডিলসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক জব্দ হয়েছে। মাদক উদ্ধার সংক্রান্ত মামলা হয়েছে ২৬টি। এছাড়া, গত কয়েকদিনে দুটি পিস্তলসহ সাতটি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করে মহানগর গোয়েন্দা বিভাগ ও থানা পুলিশ। সিএমপির বিভিন্ন থানা থেকে লুণ্ঠিত ৯৪৮টি অস্ত্রের মধ্যে ৭৮২টি উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে বলেও নগর পুলিশ জানিয়েছে । 

অতিরিক্ত উপ-কমিশনার তারিক আজিজ জানান, অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। বহুল আলোচিত ‘গানের তালে পিটিয়ে হত্যা’র ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়েছে মূলহোতাসহ তিনজন। বিভিন্ন হত্যা মামলার আসামিরাও গ্রেপ্তার হচ্ছে। সিএমপির বায়েজিদ বোস্তামী থানায় ছিনতাই মামলা রুজু হওয়ার ৪ ঘণ্টার মধ্যেই নগদ টাকা ও মোবাইলসহ দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। পাহাড়তলী থানা গতকাল মঙ্গলবার সাগরিকা মোড় থেকে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে দুটি কিরিচ, দুটি লোহার রড, একটি চাপাতি ও মুখ বাঁধার কাজে ব্যবহৃত দুটি গামছাসহ। কোতোয়ালী থানা মঙ্গলবার গ্রেপ্তার করেছে বাসে চাপা দিয়ে একজন রিকশাচালককে হত্যার ঘটনার ক্লু-লেস আসামিকে। কোতোয়ালী থানা ও হালিশহর থানায় লুটপাট, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের সাথে সরাসরি জড়িত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে। কোতোয়ালী থানা কর্তৃক গ্রেপ্তার দুইজনের মধ্যে একজনের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে থানার মামলার আলামত ১৪টি মোবাইল। 

গতকাল মঙ্গলবার বাকলিয়া থানা পুলিশ আটক করেছে তিন মাদক কারবারিকে। এর মধ্যে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ের ওপেন হাউজ ডে-তে করা অভিযোগের প্রেক্ষিতে। আট মামলার আসামি মাদক কারবারি মনির হোসেন ক্যারমানকে ২ হাজার ১৪৫ পিস ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করেছে বাকলিয়া থানা পুলিশ। 

পুলিশ জানিয়েছে, পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে ওপেন হাউজ ডে-তে সরাসরি অভিযোগ করতে পারারা সুফল পাচ্ছেন নগরবাসী। যে-কোনো অভিযোগ তাৎক্ষণিক প্রতিকারের ব্যবস্থা করছেন সিএমপি কমিশনার। নগরীর নিরাপত্তা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সমগ্র মহানগরে প্রায় ১০০টি মোটরসাইকেলে করে টহল দেওয়া হচ্ছে। এই প্যাট্রোলসমূহ নগরীর আনাচে-কানাচে অলিগলিতে নিরাপত্তা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ও অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কাজ করে চলেছে। 

নগরীর প্রত্যেকটি থানাতে প্রতিদিন দুইবার করে শুরু হয়েছে তল্লাশি কার্যক্রম। জনগণের সঙ্গে দূরত্ব মেটাতে কমিউনিটি পুলিশের পুরোনো সব কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন করে কমিটি পুনর্গঠনের কার্যক্রম শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এই পুনগর্ঠিত কমিটিতে ছাত্র প্রতিনিধিসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধি থাকবেন।

সিএমপির ট্রাফিক বিভাগও শুরু করেছে তাদের কার্যক্রম। গত ১ মাসে সিএমপির চারটি ট্রাফিক বিভাগে ২ হাজার ৮৭৯টি মামলা দিয়ে মাধ্যমে জরিমানা সংগ্রহ করে প্রায় ৯০ লাখ টাকা। অভিযান শুরু হয়েছে ব্যাটারিচালিত রিকশা, অননুমোদিত, রুট পারমিটবিহীন ও রেজিস্ট্রেশনবিহীন সিএনজি চালিত অটোরিকশা ও অন্য যানবাহনের বিরুদ্ধে। গত এক মাসে ট্রাফিক বিভাগ ১ হাজার ৮৯৪টি ব্যাটারিচালিত রিকশা, ৭৩০টি অনুমোদনবিহীন সিএনজি চালিত অটোরিকশা ও ১ হাজার ৭৯৮টি অন্য গাড়ি আটক করে। 

পূর্ণ পরিসরে কাজ শুরু করায় চট্টগ্রাম মহানগরীর জনগণণের মধ্যে স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে। আইনবিরোধী, নিরাপত্তাবিঘ্নকারী, সমাজের জন্য ক্ষতিকর যে-কোনো কিছুর বিরুদ্ধে সিএমপির এই অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়েছে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ।