সারা বাংলা

কালিহাতীতে তিন ভাগে বিভক্ত বিএনপি

ত্রিমুখী দ্বন্দ্বে বিভক্ত টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলা বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠন। বিভক্তির কারণে দলের দুঃসময়ে নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়ানো ও মামলার খরচ চালানোসহ নানা সংকটে হাল ধরে রাখা নেতারা পদপদবি হারিয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। বিভক্তিতে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা রয়েছেন বিপাকে। তাদের দাবি, বিভক্ত ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা হোক।

নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক অংশে রয়েছেন কেন্দ্রীয় বিএনপি’র ঢাকা বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক বেনজির আহমেদ টিটো। আরেকাংশে বয়েছেন জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার আব্দুল হালিম, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য লুৎফর রহমান মতিন, ড্যাবের আজীবন সদস্য ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ শাখার উপদেষ্টা ডা. শাহ আলম, জেলা জিয়া পরিষদের সভাপতি একেএম আব্দুল আউয়াল, উপজেলা বিএনপি’র সাবেক আহ্বায়ক শুকুর মাহমুদ, এলেঙ্গা পৌরসভার সাবেক মেয়র শাফী খান এবং মালয়েশিয়া বিএনপি’র সভাপতি বাদলুর রহমান খান। অন্য অংশে রয়েছেন সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত শাহজাহান সিরাজের মেয়ে ব্যারিস্টার সারওয়াত সিরাজ ওরফে শুক্লা সিরাজ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আওয়ামী লীগের শাসনের ১৫-১৬ বছরে কালিহাতী উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের ৪৬৫ জন নেতাকর্মীকে আসামি করে ১৩টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় শুকুর মাহমুদ, একেএম আব্দুল আউয়ালসহ অনেকে জেল খেটেছেন। হাজতে থাকা নেতাকর্মীদের জামিন ও মামলা পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন শাফী খান, খন্দকার আব্দুল হালিম, লুৎফর রহমান মতিন, ডা. শাহ আলম প্রমুখ। তাদের নেতৃত্বে বিএনপি’র নেতাকর্মীরা একাট্টা রয়েছেন বলে দাবি।

ব্যারিস্টার সারওয়াত সিরাজ ওরফে শুক্লা সিরাজ দলের দুঃসময়ে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের খোঁজখবর রাখেননি। বরং বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের পাতানো নির্বাচনে অংশ নেন। ফলে উপজেলা বিএনপি’র সব ধরনের নেতাকর্মীরা তাকে প্রত্যাখ্যান করেন। বাধ্য হয়ে তিনি প্রয়াত বাবা শাহজাহান সিরাজের অনুসারীদের একাট্টা করার প্রয়াস পান।

এ ছাড়া ঢাকা বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক হওয়ার পর ২০২২ সাল থেকে বেনজির আহমেদ টিটো কালিহাতীতে যাতায়াত শুরু করেন। উপজেলা বিএনপির সিনিয়র নেতাদের পাশ কাটিয়ে মজনু মিয়াকে আহ্বায়ক, শাফী খানকে যুগ্ম আহ্বায়ক ও রফিকুল ইসলামকে সদস্যসচিব করে ৫২ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে বিগত ২০২২ সালের ১০ মার্চ রাতে জেলা বিএনপি’র তৎকালীন আহ্বায়ক আহমেদ আযম খান ও সদস্যসচিব মাহমুদুল হক সানু কমিটির অনুমোদন দেন।

বিএনপি’র নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত তখন থেকে উপজেলা বিএনপি’র মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল প্রকাশ্যে আসতে থাকে। ওই সময় উপজেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে নানা সমালোচনা হলেও দলের শীর্ষ নেতারা কর্ণপাত করেননি। চলতি বছর শেখ হাসিনার পতনের পর অভ্যন্তরীণ কোন্দল প্রকাশ্য রূপ পায়। বর্তমানে বিভক্ত উপজেলা বিএনপি পৃথকভাবে দলের কেন্দ্রীয় কর্মসূচিগুলো পালন করছে।

বিএনপিকর্মী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘দলের মধ্যে বিভক্তি থাকলে আমরা তৃণমূল কর্মীরা বিপাকে পড়ি। কার পক্ষে কাজ করব, এ নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে পড়তে হয়। ঐক্যবদ্ধ হয়ে সবাই মিলে দলের জন্য কাজ করতে চাই।’

খন্দকার আব্দুল হালিম, শাফী খানসহ কয়েকজন বলেন, ‘বেনজির আহমেদ টিটো নিজের স্বার্থে অপরিপক্ব ও অদূরদর্শী সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করছেন; যা আগামী দিনে বিএনপি’র জন্য কোনো সুফল বয়ে আনবে না। তার সমসাময়িক কর্মকাণ্ডই স্থানীয় বিএনপিতে দ্বিধাবিভক্ত করছে। কেন্দ্রীয় বিএনপি’র এ বিষয়ে নজর দেওয়া দরকার।’

রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘গণতান্ত্রিকভাবে সম্মেলনের মাধ্যমে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও উপজেলা কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে কোনো কোনো নেতা স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নিয়েছেন। আবার সক্রিয় হলে দল তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। সিনিয়র নেতারা কেন বা কী কারণে আলাদাভাবে দলীয় কর্মসূচি পালন করছেন, তা জানা নেই।’

বেনজির আহমেদ টিটো বলেন, ‘উপজেলা বিএনপি বর্তমানে অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী। প্রথমে কর্মী সম্মেলন করার পর সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠন করা হয়েছে। ২০১৬ সালে লুৎফর রহমান মতিন স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন। এখন যারা তার সম্পর্কে অপপ্রচার বা নেতিবাচক কথা বলছেন, তারা ঈর্ষান্বিত হয়ে বলছেন।’