২০২১-২২ অর্থ বছরে শহরের নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ১২৬টি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করে জামালপুর পৌরসভা। এর মধ্যে ২২টি সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হয় জামালপুর পৌরসভা কার্যালয়ে। বাকি ১০৪টি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয় পৌর কবরস্থান এবং ২, ৩ ও ৪ নং ওয়ার্ডে। এর মধ্যে এখন অচল হয়ে পড়েছে ৯০ শতাংশ সিসিটিভি ক্যামেরা।
জামালপুর পৌরসভায় এই সিসিটিভি ক্যামেরা, মনিটর, সার্ভার রুম ও অপটিক্যাল ফাইভার নেটওয়ার্ক স্থাপনে পৌর তহবিল থেকে খরচ হয়েছে ৭৮ লাখ টাকা। আর এই কাজটি করেছেন সাবেক মেয়র ছানোয়ার হোসেন ছানুর ঘনিষ্ঠ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স মামীম এন্টারপ্রাইজ।
স্থাপন করা এসব সিসিটিভি ক্যামেরার মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে পৌরবাসীর মাঝে। এছাড়াও মেয়র ছানোয়ার হোসেন ছানু দলীয় প্রয়োজনে এই সিসিটিভি ক্যামেরা ব্যবহার করেছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। তাই এর সুফল ভোগ করতে পারেনি সাধারণ জনগণ।
জামালপুর পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা তুষার মাহমুদ উজ্জ্বল বলেন, ‘এই সিসি ক্যামেরা যদি সর্বসাধারণের জন্য ব্যবহার করা হতো। তাহলে ৩ তারিখ, ৪ তারিখ ছানু যে অস্ত্রের মহড়া দিয়েছে। এই মহড়াটা সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়তো কিন্তু এই ফুটেজ সিসি ক্যামেরায় নাই। কারণ এই সিসি ক্যামেরা সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে।’
২নং ওয়ার্ডের বাসন্দিা রাকিব বলেন, ‘এই সিসি ক্যামেরা যে লাগানো হয়েছিলো, এগুলো কয়েক দিন পরেই এক এক করে নষ্ট হয়েছে। এগুলো আমরা কোনো দিন ঠিক করতে দেখিনি। এ পর্যন্ত এগুলো আমাদের চোখে ধরা পড়েনি।’
৩নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা অ্যাডভোকেট ইউসূফ আলী বলেন, ‘আমরা এই সিসিটিভি ক্যামেরা সম্পর্কে তেমনভাবে জানি না। পরে যেটা শুনেছি যে সমস্ত এলাকায় লাগিয়েছে সেগুলো গুরুত্বহীন জায়গা। যেখানে জনবহুল, আবাসিক এলাকা, জনগুরুত্বপূর্ণ এলাকা। যেখানে নিরাপত্তার স্বার্থে সিসি ক্যামেরা লাগানো দরকার ছিল, সেই এলাকায় না লাগিয়ে তাদের মন মতো জায়গায় লাগিয়েছে।’
দরপত্রে প্রতিটি সিসিটিভি ক্যামেরার মূল্য ৩৫ হাজার ৬০০ টাকা ধরা হলেও এসবের বর্তমান বাজার মূল্য মাত্র ৫ হাজার ৬০০ থেকে ৬ হাজার টাকা। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগসাজশে জামালপুর পৌরসভার এমন দুর্নীতি দেখে হতবাক সচেতন মহল। তাই পৌরসভার বিগত কর্মকাণ্ড তদন্ত করার দাবি তাদের। এ ছাড়াও সিসিটিভি ক্যামেরা বাদেও আনুষাঙ্গিক বাকি পণ্যের দাম অধিক রাখা হয়েছে বলে দাবি করছে দুর্নীতি প্রতিরোধে কমিটি-দুপ্রক।
জামালপুর দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, ‘আমরা সিসিটিভি ক্যামেরার সুফল এখনো পাইনি। প্রত্যেকটি ক্যামেরা বিকল হয়ে আছে। যে মূল্যে এই সিসি ক্যামেরা লাগানো ছিল বাজারে তার মূল্য অনেক কম ছিল। আমরাও এটা খতিয়ে দেখার অনুরোধ করছি। পাশাপাশি আমরা অনুরোধ করব। পৌরসভার গত সাড়ে তিন বছরে যে কর্মকাণ্ড করা হয়েছে। তার যেনো অনুসন্ধান করা হয়।’
তবে অসঙ্গতি পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছে পৌর প্রশাসক।
এ বিষয়ে জামালপুর পৌরসভার পৌর প্রশাসক মৌসুমী খানম মোবাইল ফোনে বলেন, ‘বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত নই। আপনার মাধ্যমে জানতে পারলাম। এ বিষয়ে পৌর পরিষদের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করব।’