বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে চোখে গুলিবিদ্ধ কলেজ শিক্ষার্থী আশরাফুলের এইচএসসি পাসের খবরে বাড়িতে আনন্দের বন্যা বইছে। ছেলেকে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তার বাবা। তিনি বলেন, ‘চোখের এ অবস্থায় আশরাফুর পরীক্ষায় পাস করেছে। এর চেয়ে বেশি আনন্দের সংবাদ আমাদের কাছে এ মুহূর্তে আর কিছুই না।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে চোখে গুলিবিদ্ধ হয়েও ১২ দিন জেলে থাকতে হয়েছিল আশরাফুল ইসলামকে।
আশরাফুল নরসিংদীর পলাশ উপজেলার পলাশ বাজার এলাকার দিন মজুর সাব্বির হোসেনের বড় ছেলে। তিনি নরসিংদী সরকারি কলেজ থেকে এবছর এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন। তিনি জিপিএ- ৩.৭৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন।
আশরাফুল বলেন, গত ১৮ জুলাই বিকেলে নরসিংদীর ভেলানগর এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে যোগ দেই। মিছিল কিছুদূর অগ্রসর হওয়ার পর এলোপাতাড়ি গুলি আসতে থাকে। এ সময় নরসিংদীর এনকেএম হাই স্কুল এন্ড হোমস বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী শহিদ তাহমিদ ভূইয়া গুলি লেগে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। আমি তার পাশেই ছিলাম। তাকে উদ্ধার করতে গেলে আমার বাম চোখে পুলিশের চারটি ছোররা গুলি লাগে। মুহুর্তে আমিও মাটিতে পড়ে যাই। সেখান থেকে অন্য শিক্ষার্থীরা আমাকে উদ্ধার করে নরসিংদী জেলা ১০০ শষ্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে যায়।
শিক্ষার্থীরা আমার বাবাকে খবর দেন। বাবা হাসপাতাল থেকে আমাকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্বার করে সন্ধ্যার পর বাড়িতে আনেন। পরের দিন ১৯ জুলাই সকালে অ্যাম্বুলেন্স করে ঢাকার আগারগাঁও চক্ষু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেদিনই আমার চোখ অপারেশন হয়। পরের দিন ২০ জুলাই আমাকে হাসপাতাল থেকে বাড়ি আসার কথা বললে আমার বাবা আমাকে ২১ জুলাই বাড়িতে নিয়ে আসেন।
আশরাফুল বলেন, পুলিশের গুলিতে চোখ অপারেশন করে আসার পরের দিনই ২২ জুলাই প্রায় ২০-২৫ জনের একদল পুলিশ আমার বাড়িতে আসে। পুলিশ আমার বিরুদ্ধে নরসিংদী জেল খানায় হামলা ও ভাঙচুরের মামলা দেয়। আমাকে কাশিমপুর কারাগারে পাঠিয়ে দেয়। জেলে থাকা অবস্থায়ও আমাকে ভৈরব রেলওয়ে ফাড়িতে হামলার আরো একটি মামলা দেয় আমার নামে। ১২ দিন জেল খাটার পর ৩ আগস্ট এইচএসসি পরীক্ষা থাকায় ছাত্র-জনতার দাবির মুখে আমাকে জামিন দেয় সরকার। জামিনে বাড়িতে আসার পর ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার কাছে সরকারের পতন হলে নিজেকে তখন মুক্ত মনে করি।
এই শিক্ষার্থী বলেন, বাম চোখের ভেতর গুলি থাকায় বাম চোখটা দিয়ে কিছুই দেখতে পাই না। গত ১৮ আগস্ট ঢাকা ইসলামী চক্ষু হাসপাতালে ভর্তি করেন বাবা। গত ১৯ আগস্ট পুনরায় আমার চোখ অপারেশন করা হয়। সরকারি নির্দেশনায় অপারেশন সম্পূর্ন ফ্রিতে করানো হয়েছে। অপারেশন করার পর ডাক্তার বলেছে চোখ ভালো হওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে, অপারেশর করার ফলে চোখ শুকিয়ে যাবে না। এখন বাম চোখে কিছুই দেখি না।
আশরাফুলের বাবা সাব্বির হোসেন বলেন, ‘আমার ছেলে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর শিক্ষার্থীরা তার পাশে থেকে আর্থিক সহযোগিতা করেছে। এগিয়ে এসেছে। আমার ছেলেকে নিয়ে আমি গর্বিত। আমার ছেলের মতো অসংখ্য শিক্ষার্থী জীবন দিয়ে নতুন করে দেশ স্বাধীন করেছে। গুলিবিদ্ধ ছেলের চোখের চিকিৎসা ব্যয় এবং সংসারের আনুষঙ্গিক ব্যয় মেটাতে গিয়ে খুব বেকায়দায় পড়তে হচ্ছে আমাকে। তারপরও আমি খুশি, আমার ছেলের এইচএসসি পাসের খবরে। আমি সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছি, তারা যেন আমার ছেলের চিকিৎসার ব্যয় পূরণ করতে সহযোগিতা করেন।’