সারা বাংলা

সিন্ডিকেট বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে : ডা. শফিকুর

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আজকে দ্রব্যমূল্যের চাপে মানুষ অতিষ্ঠ। কারা এই দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে জনগণের কষ্ট দিচ্ছে, আপনারা সবাই জানেন। বিগত জালিম সরকারের সময়ে যারা সিন্ডিকেট করেছিল,  তারাই এখনও সিন্ডিকেট পরিচালনা করছে। সরকারের কাছে স্পষ্ট বার্তা এই সিন্ডিকেট ভেঙে জনগণকে স্বস্তি দিন।

বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) দুপুরে শহরের উজির আলী স্কুল মাঠে আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

জামায়াতে ইসলামীর আমীর বলেন, ‘বুকের মধ্যে অনেক ব্যথা। ১৫টি বছর আমাদের উপর তাণ্ডব চালানো হয়েছে। এক এক করে দায়িত্বশীল ১১ জন নেতাকে আমাদের বুক থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। মিথ্যা অভিযোগ, সাজানো স্বাক্ষী, বানানো আদালত ও ক্যাঙ্গারু কোর্ট বসিয়ে আমাদের লোকজনকে হত্যা করা হয়েছে। মহান রবের কাছে আমরা মামলা করেছি। আমরা লড়াই করবো সেই হত্যার বিচার পাওয়ার জন্য।’

জামায়াতের এ শীর্ষ নেতা বলেন, ‘অচেনা অনেক ব্যথা আমাদের অন্তরে। আমরা আইন নিজের হাতে তুলে নিতে চাই না। আমরা কোনো বিশৃঙ্খলা চাই না। আইন হাতে তুলে নিয়ে আমরা কোনো প্রতিশোধও নিতে চাই না। আমরা যা চাইবো আইন-আদালতের মাধ্যমে চাইবো। আমরা আদালতের কাছে পক্ষপাতিত্ব চাই না। আমাদের পক্ষে কোনো ফেবারিজম (পক্ষপাতিত্ব) চাই না। আমরা চাই ন্যায়বিচার।’

দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘কোথাও শৃঙ্খলার হানি হয়, এমন কাজ করবো না। কোথাও কেউ বলতে পারবে না আমাদের কোনো কর্মী চাঁদাবাজি, দখল-বাণিজ্য, মানুষের উপর অত্যাচার, কোথাও খুন করেছে।’

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এক বক্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতা হারালে নাকি তাদের ৫ লাখ নেতাকর্মীকে হত্যা করা হবে। পালিয়ে যাওয়ার পর কি তাদের ৫ লাখ নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে? ৫ জনকেও হত্যা করা হয়নি। তারা দায়িত্ব জ্ঞানহীন বা ফ্যাসিস্ট হতে পারে, দেশের মানুষ ফ্যাসিস্ট নয়। দেশের মানুষ প্রমাণ করেছে, এ দেশকে তারা ভালোবাসে। বাংলাদেশের জনগণ দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেওয়ার কারণে তাদের সকল ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে। এখনও তারা ছোবল মারার চেষ্টা করছে। তারা সমাজকে অস্থির করার জন্য ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে।’

যুবকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমরা সমাজে সুবিচার কায়েম করতে চাই আল্লাহ তাআলার আইনের ভিত্তিতে, কোরআন-সুন্নাহ’র ভিত্তিতে। আমরা এমন একটি সমাজ চাই, যে সমাজে কোনো বৈষম্য থাকবে না। এদেশের যুবকরা তাকিয়ে আছে আগামীর বাংলাদেশ কেমন হবে? জাতিকে খেদমত করার সুযোগ পেলে একটা যুবকের হাতকে বেকার থাকতে দিব না। আমরা যুবকের হাতকে কর্মীর হাতে পরিণত করবো। যুবকদের হাতে হাতে কাজ তুলে দিবো। এক একজন যুবক হবে উন্নয়নের নায়ক।’

আদালতের বিচার নিয়ে তিনি বলেন, ‘আদালতে আজকে গিয়ে দেখি সেখানে ন্যায় বিচারের মৃত্যু হয়েছে। যেখানে নির্দিষ্ট সাফারার (ভুক্তভোগী) আমরা ছিলাম। সারা বাংলাদেশের মানুষ ছিল। আমরা সেই ন্যায় বিচার নিশ্চিত করবো, যেখানে কোনো ঘুষ নেওয়ার দুঃসাহস দেখাবে না। রাষ্ট্রের ট্যাক্সে যারা দায়িত্ব পালন করবে আল্লাহকে ভয় করে জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। সেখানে কোনো ছলচাতুরি চলতে দেওয়া হবে না।’

বর্তমান অন্তবর্তী সরকারের উদ্দেশে জামায়াতে ইসলামীর আমীর বলেন, ‘ভালো কাজে এগিয়ে যান। জনগণের কাঙ্ক্ষিত সংস্কার সাধন করুন। জনগণের ৩৬ কোটি হাত আপনাদের সাহায্য করবে ইনশাআল্লাহ। আপনারা ভুল করলে আমরা শুধরিয়ে দিবো। আপনারা একগুয়েমি করলে আমরা প্রতিবাদ করবো। আপনাদের একগুয়েমি করতে দেওয়া হবে না। অতীতের জালিমরা যা করেছে, আমরা যেন তা না করি। মানুষের উপর জুলুম করলে কী হয়, সেটা আমরা চোখের সামনে দেখেছি।’

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের উদ্দেশে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘তারা গর্ব করে বলতেন এই দেশ তাদের বাপ-দাদার। এই দেশ ছেড়ে কোথাও পালাবে না। তারা কি তাদের দেওয়া কথা জাতির সঙ্গে রক্ষা করতে পেরেছে? তারা কোনো কথা রক্ষা করতে পারেনি। অপকর্ম করে তাদের এই দেশে দাঁড়িয়ে থাকার সাহস হয়নি। আমরা তাদের বিচার চাই। তাদের ফিরিয়ে আনতে হবে যে যেখানে থাক। ন্যায় বিচারের মাধ্যমে তাদের উপযুক্ত পাওনাটা দিয়ে দিতে হবে। তাদের সময়ে সব থেকে বেশি ইসলামী দলগুলোর উপর জুলুম করা হয়েছে। এই বাংলাদেশকে সোনার বাংলা বানানোর কথা বলে তারা শশ্মান বাংলায় পরিণত করেছিল। ঘরে ঘরে লাশ আর প্রান্তরে প্রান্তরে ছুপ ছুপ রক্ত তারা জাতিকে উপহার দিয়েছিল। আমি সেই শহীদ মজলুম জনতাকে সম্মান জানাতে এসেছি।’

ঝিনাইদহে দীর্ঘ ১৭ বছর পর জামায়াতের কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। জেলা আমীর অধ্যাপক আলী আজম মো. আবুবকরের সভাপতিত্বে কর্মী সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সদস্য কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ ও যশোর-কুষ্টিয়া অঞ্চল পরিচালক মোবারক হুসাইনসহ অন্যান্যরা।