সারা বাংলা

নিম্নবিত্ত পরিবারে নিত্যদিনের সবজি শাপলা

বেগুনে আগুন, কাঁচা মরিচের ঝাঁজ বেশী। লালশাক, কচুরমুখী ও পটল অতি বৃষ্টিতে খেতেই পচেছে। নগরীর বাজারগুলোতে সবজি সরবরাহ কমেছে। এক কেজি পটল বা আলু কেনা নিম্নবিত্ত পরিবারের জন্য অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এসব পরিবারের এখন নিত্যদিনের সবজি শাপলা। এক আটির মূল্য ১০ টাকা। তেরখাদার ভুতিয়ার বিল, রূপসার পদ্ম বিল ও বটিয়াঘাটার আমিরপুর থেকে শাপলা বোঝাই ভ্যান আসছে নগরীর বাজারগুলোতে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের সূত্র বলছে, এবারের আগস্ট মাসে ৫০২ মিলিমিটার ও সেপ্টেম্বরে ৩৪৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। এতে খেতেই পচেছে লাউশাক, পটল, ঝিঙে, চিচিংঙ্গা, বেগুন ও লালশাক। অক্টোবরের শুরু থেকে শীতের সবজির আবাদ হলেও ফুলকপি, সিম ও বেগুন বাজারে সরবরাহে দেরি হবে। 

রূপসাস্থ কাঁচা বাজারে বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) প্রতি কেজি বেগুন ১০০ টাকা, ঝিঙে ৭০ টাকা, ঢেঁড়স ৮০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা আলু ৬০ টাকা, পেঁয়াজ ১১৫ টাকা, পটল ৮০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

বৃহস্পতিবার দুপুরের জোড়াকল বাজারে সবজি কিনতে আসা এনজিও কর্মী শাস্ত দাস বলেন, কচুর ডাটা ছাড়া অন্য সবজি কেনার মত সক্ষমতা নেই। 

এ বাজারের বিক্রেতা হোসনেআরা বেগম জানান, পুঁইশাক ও লালশাক ৪০ টাকা দরে, কাঁচাঝাল ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। গত রোববার থেকে বিকিকিনির পরিমাণও কম।

বটিয়াঘাটা উপজেলার চক্রাখালী গ্রামের বাসিন্দা আক্কাস মোল্লা ভ্যানে করে প্রতিদিন শাপলা বিক্রি করেন। একই উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের মো. কবির শেখ প্রতিদিন ভ্যান যোগে শাপলা নিয়ে নগরীর বাজারে আসছেন। তিনি তথ্য দিয়েছেন, ক্রেতা অন্য কোনো সবজির প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছে না। শাপলা, কলার মোচা ও কচুর ডাটার উপর আগ্রহ বেশী, তিনি মঙ্গলবার ১৬শ’ টাকা মূল্যের শাপলা বিক্রি করেছেন। বৃহস্পতিবার ১৫শ’ টাকার শাপলা বিক্রি করেন। 

মিস্ত্রিপাড়া বাজারের সবজি ব্যবসায়ী আলী আহম্মেদ বলেছেন, আশ্বিন ও কার্ত্তিক দুই মাস শাপলা বিক্রির পরিমাণ বেড়েছে। নিম্নবিত্ত পরিবারের আয় নেই বলে তারা এ সবজি কিনছেন। 

কৃষি বিপনন অধিদপ্তর খুলনার সূত্র বলছেন, গত ১৫ সেপ্টেম্বরের তুলনায় ১৫ অক্টোবর চিকন চাল, প্যাকেট আটা, দেশী মসুরের ডাল, সয়াবিন তেল, চিনি, গোলআলু, দেশী ও ফার্মের ডিমের মূল্য বেড়েছে। দেশী মুরগী ৫২০ টাকা কেজির স্থলে ৫০০ টাকা দলে বিক্রি হচ্ছে। 

এ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চিকন চাল কেজি প্রতি ৬৮ টাকার পরিবর্তে ৭৫ টাকা, প্যাকেট আটা ৫০ টাকার পরিবর্তে ৫৫ টাকা মসুরের ডাল ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা পরিবর্তে ১৪০ টাকা, সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৪৮ টাকা থেকে ১৫০টাকার পরিবর্তে ১৬৫ টাকা, চিনি ১২৭ টাকার পরিবর্তে ১৩৫ টাকা, গোল আলু- ৫৫ টাকার পরিবর্তে ৫৬ থেকে ৬০ টাকা, ফার্মের ডিম প্রকার ভেদে প্রতি হালি ৪৪ টাকা থেকে ৫২ টাকা দলে বিক্রি হয়।

এদিকে, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য জেলা প্রশাসক গত ৯ অক্টোবর বিশেষ টাস্কফোর্স কমিটি গঠন করেছে। এ কমিটির আহ্বায়ক অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মীর আলিফ রেজা, সদস্য সচিব ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের সহকারী পরিচালক ওয়ালিদ বিন হাবিব। সদস্যবৃন্দ হচ্ছে কেএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আহসান হাবীব, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. হাফিজুর রহমান, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক এ এস এম মাহফুজুল আলম, অতিরিক্ত জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা রণজিতা চক্রবর্তী, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান, সিনিয়র কৃষি বিপনন কর্মকর্তা আব্দুস সালাম তরফদার, ক্যাবের সদস্য মো. জেড এন সুমন, শিক্ষার্থী প্রতিনিধি হৃদয় ঘরামী ও আরিফুল ইসলাম।