সারা বাংলা

কুড়িগ্রামে স্বেচ্ছাশ্রমে চলছে সড়ক নির্মাণ 

কুড়িগ্রামে পৌর শহরের ভেলাকোপা গ্রামে যাতায়াতের কষ্ট দূর করতে স্বেচ্ছাশ্রমে সড়ক নির্মাণ করছেন এলাকাবাসী। সাত বছর ধরে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত ও মৌখিক আবেদন করে যথাযথ ব্যবস্থা না পাওয়ায় এমন উদ্যোগ নিয়েছেন তারা। পৌর কর দিয়েও সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন গ্রামবাসীদের অনেকেই।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুড়িগ্রাম পৌর শহরের ৬ নম্বর ওয়ার্ড ভেলাকোপা মৌজার হানাগড়ের মাথা থেকে প্রায় এক কিলোমিটার সড়ক বিভিন্ন সময় বন্যায় ভেঙে যায়। ফলে ভেলাকোপা ওয়ার্ডের চারটি গ্রাম ও একটি ইউনিয়নের প্রায় ১০ হাজার মানুষ চলাচলে চরম বিপাকে পড়েন। সড়কটি ঠিক করতে স্থানীয় লোকজন তৎকালীন পৌর মেয়র আব্দুল জলিল ও সাবেক মেয়র কাজীউল ইসলামকে অনুরোধ করলেও তারা এটি মেরামতে কোনো ব্যবস্থা নেননি বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা।

যাতায়াত সুবিধার্থে গ্রামবাসী নিজেরা টাকা তুলে বাঁশের সাঁকো তৈরি করেন। সেটিও চলাচলের অনুপযোগী হয়ে যায়। এ অবস্থায় স্বেচ্ছাশ্রমে সড়ক নির্মাণে এগিয়ে আসেন তারা। গত মঙ্গলবার থেকে সব বয়সী ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ পরিশ্রম ও অর্থ দিয়ে সড়কটি নির্মাণ কাজ শুরু করেন।

ভেলাকোপা গ্রামের বাসিন্দা মফিজুল মিয়া বলেন, ‌‘নির্বাচন এলে জনপ্রতিনিধিরা হাজারো প্রতিশ্রুতি দেন। নির্বাচিত হলে তারা জনগণের খোঁজ রাখেন না। কুড়িগ্রাম পৌর শহরের চেয়ে ইউনিয়ন পর্যায়ে রাস্তাগুলো বর্তমানে অনেক ভালো। পৌর শহরে বসবাস করে সব ট্যাক্স দিলেও পৌরসভার সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে আমাদের এই এলাকার মানুষজন।’

স্থানীয় রিকশাচালক আবুল হোসেন বলেন, ‘হাজারো মানুষের চলাচলের একমাত্র ভরসা এই সড়কটি। বৃদ্ধ ও শিশুদের নিয়ে এই সড়কে রিকশা নিয়ে যেতে খুব কষ্ট হয়। অসুস্থ রোগী নিয়ে স্বজনরা হাসপাতালে যেতে চরম বিপাকে পড়েন। কোনো পৌর মেয়র এ সড়কটির উন্নয়নে কাজ করেননি। অভিযোগ-অনুরোধ করেও কাজ হয়নি। তাই নিজেদের কষ্ট নিজেদের দূর করতে হচ্ছে।’

স্বেচ্ছাসেবক মো. নুর ইসলাম নুরু বলেন, ‘আমরা নাম মাত্র পৌর শহরে বসবাস করছি। আমরা কর পরিশোধ করলেও পৌরসভার সব সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। সড়ক খারাপ থাকায় যে কোনো দুর্ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ কিংবা অ্যাম্বুল্যান্স আসতে পারে না। গত সাত বছর ধরে এ অবস্থা চলছে। জনপ্রতিনিধিরা কথা দিয়ে কেউ কথা রাখেনি। বাধ্য হয়ে আমরা গ্রামবাসী স্বেচ্ছাশ্রমে সড়কটি নির্মাণ কাজ করছি। আশা করছি দুই-একদিনের মধ্যে কাজ শেষ হবে।’

সাবেক কমিশনার জমসেদ আলী টুংকু মিয়া বলেন, ‘সড়কটি উন্নয়নে বারবার কাগজপত্র নিয়ে ঢাকায় যোগাযোগ করা হয়েছে। কোন সমাধান আসেনি। তাই বাধ্য হয়ে গ্রামবাসী স্বেচ্ছাশ্রমে সড়কটি নির্মাণ করছেন।’

কুড়িগ্রাম পৌরসভার প্রকৌশলী আতিকুর রহমান বলেন, ‘পৌরসভার আওতাধীন ভেলাকোপা এলাকার এক কিলোমিটার সড়কটি প্রতিবছর বন্যা আসলেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ভেলাকোপার সড়কটিসহ পৌরসভার আরও তিনটি সড়কের প্রজেক্ট তৈরি করে কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠনো হয়েছে। প্রজেক্ট পাস হলে কাজ শুরু করা হবে।’