নেত্রকোণার বারহাট্টা পল্লীবিদ্যুতের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) মনির হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
ঢাকায় দায়ের করা একটি মামলায় তাকে গ্রেপ্তারের জন্য গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা থেকে পুলিশের একটি টিম নেত্রকোনায় পৌঁছায়। তাদের উপস্থিতিতে রাত ১০টার দিকে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তাকে গ্রেপ্তার করে।
শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) সকালে ঢাকা খিলক্ষেত থানা-পুলিশের দলটি তাকে নিয়ে ঢাকায় ফেরে বলে নিশ্চিত করেছেন নেত্রকোণা জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. লুৎফর রহমান।
তিনি বলেন, ‘গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রেখে পল্লীবিদ্যুৎ কর্মীদের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন মানির হোসেন। সকাল নয়টার দিকে তাকে আটক করে বারহাট্টা থানায় নেয় সেনাবাহিনী। সন্ধ্যার দিকে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হলে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে রাত ১০টার দিকে আবারও তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।’
গতকাল বৃহস্পতিবার নেত্রকোণায় বিভিন্ন দাবিতে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৯ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রেখে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি পালন করেন পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির (পবিস) কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এতে নেত্রকোনার দশটি উপজেলা ও সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা এবং মধ্যনগর উপজেলাসহ ১২টি উপজেলার প্রায় ছয় লাখ ৩০ হাজার গ্রাহককে বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় ভোগান্তি পোহাতে হয়।
পুলিশ সুপার মির্জা সায়েম মাহমুদ জানান, জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস, নেত্রকোনায় দায়িত্বপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তাসহ তিনি নিজেও আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সেই বৈঠকে শান্তিপূর্ণ আলোচনা শেষে সন্ধ্যা ৭টার দিকে আন্দোলনকারীরা পুনরায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করেন।
নেত্রকোনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির এজিএম আবু সাইদ বলেন, ‘অভিন্ন চাকরি বিধি ও অনিয়মিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়মিত করার দাবিতে গত ১০ মাস ধরে আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে আসছি। যৌক্তিক আন্দোলনের কারণে কয়েকদিন আগে আমাদের ২০ জন কর্মকর্তাকে বিনা নোটিসে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। একজন কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অব্যাহতি দেওয়া কর্মকর্তাদের স্বপদে বহাল, গ্রেপ্তার কর্মকর্তার মুক্তি দেওয়াসহ অভিন্ন চাকরি বিধি ও অনিয়মিত কর্মকর্তা কর্মচারীদের নিয়মিত করার দাবিতে কমপ্লিট শাটডউন কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে দেশব্যাপী।’
বারহাট্টা পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির ডিজিএম মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘আরইবি ও পবিস একত্র করার দাবি করা হয়েছিল, তবে সেটা গ্রহণ করা হয়নি। উল্টো আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে সহিংস আন্দোলনের রূপ দিতে পাঁয়তারা করছে আরইবি। গত সরকার ছাত্র আন্দোলনে যেভাবে দমন-পীড়ন করেছিল, আরইবি এখন আমাদের সঙ্গে সেটাই করছে। আমাদের ২০ জন কর্মকর্তাকে বিনা নোটিসে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। একজন কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অব্যাহতি দেওয়া কর্মকর্তাদের চাকরিতে পুনর্বহাল, মামলা প্রত্যাহারসহ সকল দাবি মেনে নেওয়ার দাবি জানাই।’
নেত্রকোনা পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির এজিএম তাপস দেবনাথ বলেন, ‘যেসব কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করাসহ মামলা দেওয়া হয়েছে, তাদের দ্রুত চাকরিতে পুনর্বহাল না করা পর্যন্ত আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চলবে।’
এ সময় তিনি গ্রেপ্তার হওয়া মনির হোসেনের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান।
নেত্রকোনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মাসুম আহমেদ বলেন, ‘নেত্রকোনায় পল্লীবিদ্যুৎ সরবরাহ এখন স্বাভাবিক রয়েছে।’