সারা বাংলা

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পল্লী বিদ্যুতের এজিএম গ্রেপ্তার

বিদ্যুৎ খাতকে অস্থিতিশীল করার অভিযোগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) এস কে সাকিল আহমেদকে (৩১) গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গ্রেপ্তারের পর শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) রাত ৮টায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সদর থানা পুলিশ খিলক্ষেত থানা পুলিশের কাছে তাকে হস্তান্তর করা হয়। 

এর আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার ঘাটুরা এলাকার ভাড়া বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে সেনাবাহিনীর একটি দল।

এস কে সাকিল আহমেদ খুলনা সদর উপজেলার আরাজী ভবানীপুরের পাইকগাছা গ্রামের শায়েক তফিল উদ্দিনের ছেলে। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া পল্লী বিদ্যুতের এজিএম (আইটি) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। 

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মোজাফফর হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বিদ্যুৎ খাতকে অস্থিতিশীল করার অভিযোগে রাজধানীর খিলক্ষেত থানার এক মামলায় ওই কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছেন সেনাসদস্যরা। তারা বিষয়টি খিলক্ষেত থানা-পুলিশকে জানিয়েছেন। তাকে ওই থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

সাকিলের স্ত্রী মেহজাবিন রহমান বলেন, চলমান দাবি আদায়ের জন্য ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি থেকে চেয়ারম্যানের কাছে ই-মেইলে একটি স্মারকলিপি পাঠানোর কারণে তার স্বামীকে গত ২৯ এপ্রিল সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। ১৪ জুলাই সেই আদেশ বাতিল করা হয়। এরপর গতকাল রাতে তার স্বামীকে চাকরিচ্যুত করা হয়। পরে সেনাসদস্যরা এসে তাকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যান। এটা কী ন্যায়বিচার হলো, প্রশ্ন তোলেন তিনি।

আরইবির আইন শাখার পরিচালক (প্রশাসন) মো. আরশাদ হোসেন বাদী হয়ে চারজনকে আসামি করে গত বৃহস্পতিবার রাতে খিলক্ষেত থানায় একটি মামলায় করেন। মামলায় সাকিলসহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির চার কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়। অন্য আসামিরা হলেন- লক্ষ্মীপুরের ভবানীগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক আলী হাসান মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম (৮৮), নারায়ণগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১-এর এজিএম প্রকৌশলী মো. জাফর সাদিক খান (৩২) ও নরসিংদীর বেলাব উপ–আঞ্চলিক কার্যালয়ের লাইন টেকনিশিয়ান মো. মইনুল হাসান (৪৪)।

মামলার সংক্ষিপ্ত এজাহারে বলা হয়, আরইবির অধীন ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সারা দেশের গ্রামাঞ্চলে ১৪ কোটি মানুষকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। গত ২৮ জানুয়ারি বিভিন্ন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারী কেন্দ্রীয় কমিটি পরিচয়ে পরস্পর যোগসাজশে জরুরি সেবা বিদ্যুৎ খাতকে অস্থিতিশীল করার জন্য দেশি ও আন্তর্জাতিক চক্রের সঙ্গে জড়িত হয়ে এবং বিগত সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও প্রভাবশালীদের মদদে অযৌক্তিক দাবিদাওয়ার সড়যন্ত্র করে বিদ্যুতায়ন কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করছে। সমিতির বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছ থেকে জোর করে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। গত ৮ আগস্ট বেলা ১১টায় মামলার চার আসামির নেতৃত্বে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্ররোচনায় সমিতির প্রায় চার হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী আরইবি সদর দপ্তর ঘেরাও করেন। তারা আগের জারি করা বদলি আদেশ স্থগিতসহ নানা দাবিতে হুমকি, আন্দোলন ও প্রাণনাশের ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন। গত ২১ সেপ্টেম্বর আবার ঘেরাও কর্মসূচির হুমকির দেওয়া হয়। ১ অক্টোবর আরইবি ব্লকেড কর্মসূচি ঘোষণা করেন তারা। গতকাল তারা নতুন করে আন্দোলন শুরু করেন এবং বেলা ১১টার দিকে তাদের কর্মস্থলগুলোতে বিদ্যুৎ–সংযোগ শাটডাউন করে গ্রাহকদের হয়রানি করেন। এতে জনমনে ক্ষোভ ও অস্বস্তি দেখা দেয়। এর মাধ্যমে তারা বিদ্যুৎ খাতে অচল অবস্থা তৈরি করে জনমনে ঘৃণা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করেছেন। তারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করে চরমভাবে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলার চেষ্টা চালাচ্ছেন, যা রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল।