বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের ১৩৪তম তিরোধান দিবস উপলক্ষ্যে কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়িতে সাধুসঙ্গ অনুষ্ঠান শেষ হয়েছে। শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে পূর্ণসেবা গ্রহণের মধ্যদিয়ে সাধুসঙ্গ অনুষ্ঠান শেষ হয়। কুষ্টিয়া জেলার ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক শারমিন আখতার সাধুদের মধ্যে পূর্ণসেবা পরিবেশন করে এ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন।
এসময় জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট (এডিএম) মো. জাহাঙ্গীর আলমসহ প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
লালন শাহের তিরোধান দিবসে তার আখড়াবাড়িতে আসা সাধু ও ভক্তরা গত বৃহস্পতিবার বিকেলে অধিবাস ও গুরুকর্ম দিয়ে সাধুসঙ্গ অনুষ্ঠান শুরু করেন। গতকাল শুক্রবার সকালে দৈন্যবাণী পরিবেশ ও বাল্যসেবা এবং বিকেলে পূর্ণসেবা দিয়ে তা শেষ হয়। সাধুসঙ্গ শেষ হলে আখড়াবাড়ি থেকে অনেক ভক্ত ও সাধু লালন ধাম ত্যাগ করেন। তবে, এখনো সেখানে রয়ে গেছেন অসংখ্য সাধু, লালন ভক্ত ও অনুসারীরা।
এদিকে, লালন মেলায় হাজারো মানুষের ঢল নেমেছে। বিপুল মানুষের জন্য শৌচাগারের সংখ্যা খুবই অপর্যাপ্ত। মেলায় এসে শৌচাগার ব্যবহারে রীতিমতো বিড়ম্বনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। টয়লেট ব্যবহার করতে ১০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। ফলে লালন ভক্ত, অনুসারী ও দর্শনার্থীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। অনেকে যেখানে সেখানে মলমূত্র ত্যাগ করছেন। যে কারণে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন দর্শনার্থীরা। অপরিচ্ছন্ন শৌচাগারের মেঝেতে পানি জমে স্যাঁতসেঁতে হয়ে গেছে। প্রতিবার মেলার সময় এই ভোগান্তি তৈরি হয়। দীর্ঘদিনের এ সমস্যা সুরাহার জন্য শৌচাগার চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানিয়েছেন দর্শনার্থীরা।
মেলায় আসা লালন ভক্ত, অনুসারী ও দর্শনার্থীরা বলেন, আমরা লালন মেলায় এসে মুগ্ধ হয়েছি, আনন্দিত হয়েছি। তবে, মেলায় শৌচাগারের সংখ্যা খুবই অপর্যাপ্ত ও ব্যবহারের অনুপযোগী। প্রতিবার এই সমস্যা তৈরি হয়। লালন মেলার টয়লেট ব্যবহার করতে ১০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। লালন ভক্ত, অনুসারী ও দর্শনার্থীদের সুবিধার জন্যও এই সমস্যার সমাধান করা হয়নি। খুব ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। অপর্যাপ্ত শৌচাগারে ও টাকা নেওয়ার কারণে অনেকে যেখানে সেখানে মলমূত্র ত্যাগ করছেন। ফলে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে, দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। দীর্ঘদিনের এই সমস্যার সমাধান চান তারা।
ফকির লালন শাহের ১৩৪তম তিরোধান দিবস উপলক্ষ্যে বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়া লালন আখড়াবাড়ীতে তিন দিনব্যাপী লালন মেলা শুরু হয়। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় এবং লালন একাডেমির আয়োজনে (১৯ অক্টোবর) শনিবার রাত পর্যন্ত লালন মেলা চলবে।
মেলাকে ঘিরে লালন শাহের মাজার প্রাঙ্গণ, মাঠ, কালি নদীর পাড়ে দূর-দূরান্ত থেকে আসা ভক্ত-অনুসারীরা জড়ো হয়েছেন। আখড়াবাড়ি চত্বরে তিল পরিমাণ জায়গা ফাঁকা নেই। চত্বরের এক কিলোমিটার আগে থেকে সাধু, ভক্ত ও অনুসারীদের ঢল নেমেছে। লালন মেলা পরিণত হয়েছে হাজার-হাজার মানুষের মিলন মেলায়। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ পরিবার পরিজন নিয়ে মেলায় ঘুরতে আসছেন। এদের মধ্যে অনেকেই মেলার বিভিন্ন স্টল থেকে কেনাকাটা করেছেন। দূর-দূরান্ত থেকে আসা দেশি-বিদেশি ভক্ত-অনুসারীরা দলবদ্ধ হয়ে লালন ফকিরের গান গাইছেন। দিনরাত গান ছাড়াও তারা লালন ফকিরের বাণী নিয়ে একে অপরের সঙ্গে আলোচনা করছেন। অনেকে আবার লালনের মত ও পথের দীক্ষা নিচ্ছেন।
লালন ভক্ত ও অনুসারীরা জানান, লালন মেলা হাজার হাজার মানুষের পদচারণায় মুখরিত। এখানে মানুষের ঢল নেমেছে। দূর-দূরান্ত থেকে হাজারো ভক্ত আসছেন। যতই সময় পার হচ্ছে ততই ভিড় বাড়ছে। লালন ফকিরের গানে গানে এখন মুখরিত এই এলাকা।
কুষ্টিয়ার ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক ও লালন একাডেমির সভাপতি শারমিন আখতার বলেন, শৌচাগার সমস্যা সমাধান করা হবে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হবে। লালন মেলার সার্বিক কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবেই চলছে। মাজার প্রাঙ্গণ ও তার আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।। যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছেন।