সারা বাংলা

রংপুরে আ.লীগ নেতা নিহতের ঘটনায় মামলা, ক্ষুব্ধ ছাত্ররা 

রংপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে সংঘর্ষে প্রাণ হারান আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক কাউন্সিলর হারাধন রায় হারা। এ ঘটনায় দুই মাস পর রংপুর মেট্রোপলিটন কোতয়ালি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন তার স্ত্রী কনিকা রাণী। মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি চার-পাঁচজন বলা হলেও কারো নাম উল্লেখ করা হয়নি।

শনিবার (১৯ অক্টোবর) সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের কাছে এ তথ্য নিশ্চিত করেন মেট্রোপলিটন কোতয়ালি থানার ওসি আতাউর রহমান। এর আগে গত ২ অক্টোবর মামলাটি কোতয়ালি থানায় দায়ের করা হলেও বিষয়টি গতকালই (শনিবার) জানাজানি হয়।

নিহত হারাধন রায় হারা রংপুর সিটি কর্পোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন। এ ছাড়াও তিনি রংপুর মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও মহানগর আওয়ামী লীগের পরশুরাম থানা কমিটির সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন।

গত ৪ আগস্ট রংপুর শহরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীর সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। ওই দিন দুপুরে কাউন্সিলর হারাধন ও তার ভাগনে সবুজকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

এ ঘটনার দুই মাস পর কোতয়ালি থানায় দায়ের করা মামলা দায়ের করলেন নিহতের স্ত্রী কনিকা রানি। এজাহারে কনিকা রাণী উল্লেখ করেন, ‘গত ৪ আগস্ট দেশব্যাপী চলমান নৈরাজ্যের প্রতিবাদে সকাল অনুমান ১০টার দিকে বাড়ি থেকে তার স্বামী হারাধন রায় ও তার সঙ্গী সবুজ মহানগর আওয়ামী লীগের অফিসের উদ্দেশ্যে বের হন। ওই দিন সন্ধ্যা ৬টায় মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জানতে পারেন তার স্বামী হারাধন রায় ও সঙ্গে থাকা সবুজকে দুষ্কৃতকারীরা হত্যা করেছে। পরে তার মৃতদেহ রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রাখা হয়।

খবর পেয়ে কনিকা রাণী তার নিকটস্থ স্বজন ও এলাকাবাসীদের সঙ্গে নিয়ে হাসপাতালে গিয়ে তাদের মৃতদেহ শনাক্ত করেন। সেখানে উপস্থিত লোকজনের মাধ্যমে জানতে পারেন ৪ আগস্ট দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রংপুর নগরীর বেতপট্টি মোড় থেকে বের হওয়া আওয়ামী লীগের মিছিলে হারাধন রায় ও তার সঙ্গী সবুজ যোগ দেন। সে সময় ৪০০-৫০০ বিক্ষুব্ধ জনতা ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা পিছু হটলে বিক্ষুব্ধ জনতা তার স্বামী হারাধন রায় ও সঙ্গী সবুজকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে। তাদের মৃতদেহ ডিসের লাইনের তারে পেঁচিয়ে রংপুর সিটি কর্পোরেশনের সামনে ওভার ব্রিজের কাছে নিয়ে সড়কের ওপর ফেলে রাখা হয়।

এদিকে ১৭ দিন পর মামলার বিষয়টি জানাজানি হলে গতকাল সন্ধ্যায় মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি থানার ওসি আতাউর রহমান বলেন, হারাধর রায় নিহতের ঘটনায় তার স্ত্রী বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।

অন্যদিকে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে আওয়ামী লীগ নেতার স্ত্রীর অভিযোগ আমলে নিয়ে মামলা নেওয়ার প্রতিবাদ জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিরা। রাত সাড়ে ৮ টায় কোতোয়ালি থানার সামনে মামলার বিষয়ে প্রতিবাদ জানায় ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিরা।

এসময় রংপুরে ছাত্র আন্দলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ হাসান খন্দকার সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনার দিন হারাধন রায়সহ আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন দেশীয় অস্ত্রের পাশাপাশি পিস্তল ব্যবহার করে ছাত্র-জনতাকে দমনের চেষ্টা করেছেন। সেই চিহ্নিত আওয়ামী সন্ত্রাসীরা এখন বিভিন্নভাবে মামলা করছে। পুলিশ প্রশাসন সেসব অভিযোগ আমলেও নিচ্ছে। এটা পুলিশের রহস্যজনক আচরণ। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। একইসাথে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দোসরদের মামলা প্রত্যাহার করা না হলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারিও দেন তিনি।