লক্ষ্মীপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন কলেজছাত্র খালেদ মাহমুদ সুজন (১৮)। তার ঘাড়-গলা, ফুসফুসসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে এখনও ৮টি গুলি (বুলেট) রয়ে গেছে।
পরিবারের সদস্যরা জানান, অর্থাভাবে সুজনের চিকিৎসা করাতে পারছেন না তারা। চিকিৎসকরা বলে দিয়েছেন কেবল বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমেই শরীর থেকে গুলিগুলো বের করা সম্ভব।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খালেদ মাহমুদ সুজন লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চররুহিতা এলাকার বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শাহীন কাদিরের ছেলে ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বাদশ শ্রেণিতে অধ্যয়নরত।
সুজনের ছোট দুই ভাই রয়েছে। তারা হলো- সোহান হোসেন ও শিহাব হোসেন। এর মধ্যে, সোহান বাবার মতো বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। অপর ভাই শিহাব অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। নিজের লেখাপড়া ও পরিবারের সদস্যদের খরচ জোগাতে সুজন একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। অসুস্থ হওয়ায় এখন সেটাও বন্ধ।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গত ৪ আগস্ট শহরের মাদাম ব্রিজ ও তমিজ মার্কেট এলাকায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের ওপর যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা ও গুলি চালায়। এতে সুজনসহ শতাধিক আহত ও গুলিবিদ্ধ হন।
গুলিবিদ্ধ সুজনকে প্রথমে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতাল ও পরে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি করা হয়। পরে অপারেশনের মাধ্যমে দুটি গুলি বের করা হলেও এখনও ঘাড়-গলা ও ফুসফুসসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে ৮টি গুলি রয়ে গেছে।
সরেজমিনে চররুহিতা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ঘরের বিছানায় শুয়ে যন্ত্রণায় ছটফট করছেন সুজন। পরে দুজনের কাঁধে ভর দিয়ে ঘর থেকে বের হন তিনি। স্বজনেরা জানান, কারও সাহায্য ছাড়া সুজন দাঁড়াতেও পারে না।
সুজন বলেন, গত ৪ আগস্ট সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এ কে এম সালাউদ্দিন টিপুর নেতৃত্বে আন্দোলনকারীদের ওপর এলোপাথাড়ি গুলি চালানো হয়। এতে আমার শরীরে ১০টি গুলি বিদ্ধ হয়। পরে অপারেশন করে দুটি বের করা হলেও ৮টি গুলি এখনও রয়ে গেছে।
এ সময় অভিযোগ করে তিনি বলেন, টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছি না। কিন্তু এখনও সরকারিভাবে কোনো সহায়তা পাইনি। স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে সকলের সহযোগিতা চান তিনি।
লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসক জয়নাল আবেদিন জানান, দেশে সুজনের চিকিৎসা সম্ভব নয়। প্রতিটি গুলি খারাপ অবস্থায় রয়েছে। এর কারণে শরীরে ইনফেকশন দেখা দিলে প্রাণহানিও ঘটতে পারে।
পুলিশ সুপার মো. আকতার হোসেন বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনায় একাধিক মামলা হয়েছে। এসব মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে কয়েকজনকে। বাকিদের ধরতে অভিযান চলছে।
জেলা প্রশাসক (ডিসে) রাজীব কুমার সরকার বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত ও আহত শিক্ষার্থীদের তালিকা করা হচ্ছে। আমরা তাদের পরিবারের পাশে আছি।