সারা বাংলা

এএসপিদের কুচকাওয়াজ স্থগিতের প্রশ্ন এড়িয়ে গেলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

রাজশাহীর সারদায় ৪০তম বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারে নিয়োগ পাওয়া সহকারী পুলিশ সুপারদের (এএসপি) প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ স্থগিত নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্ন এড়িয়ে গেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

রোববার (২০ অক্টোবর) দুপুরে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি) সদর দপ্তরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন তিনি। ব্রিফিংয়ে উপদেষ্টা বাজারদর ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন। তবে, কথা বলেননি এএসপিদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ স্থগিতের বিষয়ে।

ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকরা পুলিশ একাডেমির ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এ ধরনের ঘটনার কারণ জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ‘ওটা ক্লিয়ার করা হইছে! ভালো থাকেন।’ এরপরই ব্রিফিং শেষ করে চলে যান তিনি। এ সময় পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ময়নুল ইসলাম তার সঙ্গে ছিলেন।

আরও পড়ুন: সারদায় শিক্ষানবিশ এএসপিদের সমাপনী কুচকাওয়াজ স্থগিত

বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে এএসপিদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজে অভিবাদন গ্রহণসহ কয়েকটি সফরসূচি নিয়ে রাজশাহী এসেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। গতকাল শনিবার রাতেই তিনি পুলিশ একাডেমি পৌঁছান এবং সেখানেই রাত্রিযাপন করেন। সকালে প্যারেড গ্রাউন্ডে তার প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজে অভিবাদন গ্রহণের কথা ছিল। 

আগের রাতে সকালের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ স্থগিত করার কথা জানানো হয়। ‘অনিবার্য কারণবশত’ কুচকাওয়াজ স্থগিত করা হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ জানায়। অনিবার্য কারণ কী তা স্পষ্ট করা হয়নি। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে গেলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাও।

সাধারণত বিসিএসের মাধ্যমে নিয়োগ পেয়ে পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তারা সারদায় পুলিশ একাডেমিতে এক বছরের মৌলিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এরপর সমাপনী কুচকাওয়াজের মাধ্যমে তাদের এই প্রশিক্ষণ শেষ হয় এবং এরপর তারা মাঠপর্যায়ে কাজের সুযোগ পান। পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ৪০তম বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছিল। ব্যাচে অন্তত ৬২ জন ছাত্রলীগ নেতা নিয়োগ পান বলে অভিযোগ উঠেছে।

তাদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকতে পুলিশ একাডেমির পক্ষ থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মারকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। শনিবার রাতে সেই আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যানের কথা ফেসবুকে জানান সালাউদ্দিন আম্মার। 

আমন্ত্রণপত্রের ছবিতে লাল ক্রস এঁকে দিয়ে এর ক্যাপশনে সালাউদ্দিন আম্মার লেখেন, ‘দাওয়াতটা স্বজ্ঞানে প্রত্যাখ্যান করছি! কারণ, এই ৬২জন এএসপি হাসিনার আমলে নির্বাচিত হইছে। আর কত চুলচেরা বিশ্লেষণ করে বিসিএস (পুলিশ)-এ নিয়োগ হতো তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ব্যক্তি আমার জায়গা থেকে তাই উক্ত প্রোগ্রামে অংশ নেওয়ার পক্ষপাতী নই। তাদের ব্যাপারে তদন্ত হয়েছে কি না!’

তিনি লেখেন, ‘কোনোরকম তদন্ত ছাড়াই আওয়ামী লীগের দোসরদের এএসপি পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আমাদের ভাইদের মৃত্যুর মিছিল এখনো চলছেই। এমতাবস্থায় এই দোসরদের নিয়োগ এবং প্রশিক্ষণ দেওয়া মানে শহিদদের রক্তের সাথে বেইমানি করা। তাই আমি উক্ত অনুষ্ঠানের একজন আমন্ত্রিত অতিথি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক হিসেবে এই অনুষ্ঠান প্রত্যাখ্যান করলাম।’

আমন্ত্রণপত্র বিতরণের পরও রাতেই কুচকাওয়াজ স্থগিতের বিষয়টি জানতে পেরে ফেসবুকে আরেকটি স্ট্যাটাস দেন সালাউদ্দিন আম্মার। তিনি লেখেন, ‘প্রোগ্রাম ক্যান্সেল করেছে পুলিশ একাডেমি সারদা। গত কিছুদিন ধরে চলা অনুষ্ঠান, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা গতকাল থেকেই রাজশাহীতে থাকার পরও মাত্র জানালো ক্যান্সেল করা হয়েছে। কিছু বুঝলেন? আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের আমরা কখনো গ্রহণ করবো না। তদন্ত হোক পরে যোগ্য ব্যক্তি নিয়োগ পাক।’