সারা বাংলা

ইউপি চেয়ারম্যানদের অপসারণ না করার দাবি বিইউপিএমএ’র

অন্তবর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর সিটি করপোরেশন, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও পৌরসভার জনপ্রতিনিধিদের অপসারণ করে সেখানে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তবে সেই ধারাবাহিকতায় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য ও সংরক্ষিত নারী সদস্যদের অপসারণ না করতে দাবি জানানো হয়েছে।

রোববার (২০ অক্টোবর) সেই দাবিতে দেশব্যাপী মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ ইউনিয়ন পরিষদ মেম্বার অ্যাসোসিয়েশন (বিইউপিএমএ)- এর নেতৃত্বে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।

দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে রাইজিংবিডি’র প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদ-

খাগড়াছড়ি: দেশের সবচেয়ে কার্যকর স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের অপসারণ না করার দাবি জানিয়েছেন খাগড়াছড়ির নির্বাচিত ইউপি  চেয়ারম্যান ও সদস্যরা। বোরবার সকালে খাগড়াছড়ি মুক্তমঞ্চে আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে এই দাবি জানান তারা।

খাগড়াছড়ির লক্ষীছড়ি উপিজেলার লক্ষীছড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রবীল কুমার চাকমার সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য রাখেন খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার কমলছড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুনীল চাকমা, একই উপজেলার ভাইবোনছড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুজন চাকমা, মাটিরাঙ্গা উপজেলার গুমতি ইউনিয়নের সদস্য মো. বাবুল, মেরিনা চাকমা প্রমুখ।    

বক্তারা বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধিরা পার্বত্য এলাকায় শান্তি ও সম্প্রীতির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছেন। এই অবস্থায় নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও সদস্যদের অপসারণ করা হলে পাহাড়ের তৃণমূল পর্যায়ে অরাজকতা সৃষ্টির আশংকা রয়েছে। এজন্য পার্বত্য অঞ্চলের বিদ্যমান সহাবস্থান ধরে রাখার স্বার্থে ‘ইউনিয়ন পরিষদ’ ভেঙে না দেওয়ার দাবি তাদের।

পরে নেতারা জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামানের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করেন।

কুষ্টিয়া:  আজ সকাল ১১টার দিকে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করে বিইউপিএমএ নেতারা। পরে তারা অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন। স্মারকলিপিটি তারা ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মোছা. শারমিন আখতারের কাছে হস্তান্তর করেন।

মানববন্ধনে নেতারা বলেন, নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের অপসারণ করা হলে তৃণমূল পর্যায়ে জনসাধারণ নানা সেবা থেকে বঞ্চিত হবেন। তারা ভোগান্তির শিকার হবেন। ওয়ারিশ সার্টিফিকেট, জন্ম নিবন্ধনসহ বিভিন্ন সেবামূলক কাজ বিঘ্নিত হবে। তারা বর্তমান সরকারকে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের দায়িত্ব পালনে বাধা না দিতে আহ্বান জানান।

ঠাকুরগাঁও:  ঠাকুরগাঁও প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, দলীয়ভাবে বা দলীয় প্রতীকে ইউচি চেয়ারম্যান ও সদস্যরা নির্বাচন করেননি। তারা সাধারণ জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। পাঁচ বছর মেয়াদ শেষ না হওয়ার আগে যেন তাদের অপসারণ করা না হয় সে জন্য অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। বক্তারা দাবি মানা না হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন।

এই কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন- ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বড়গাঁও ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম, সদর উপজেলার আউলিয়াপুর ইউনিয়নের সদস্য হারুনুর রশিদ, শাহিনা আকতার প্রমুখ। পরে তারা ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি জমা দেন।

হবিগঞ্জ: হবিগঞ্জে ৭৮টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, সদস্য ও সংরক্ষিত নারী সদস্যদের অপসারণ না করার দাবিতে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ আতাউল মোস্তফা সোহেলের নেতৃত্বে জেলা প্রশাসক ড. মো. ফরিদুর রহমানের কাছে স্মারকলিপি হস্তান্তর করা হয়েছে।

এর আগে, আজ দুপুরে হবিগঞ্জ শহরের নিমতলা প্রাঙ্গণে মানববন্ধন করেন ইউপি চেয়ারম্যান, সদস্য ও সংরক্ষিত নারী সদস্যরা।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, আমরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। কোনো দলের প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হয়নি আমরা। প্রায় ৬৫শতাংশ চেয়ারম্যান স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। তাই স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাপকে ভেঙে দিলে সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়বেন।

কর্মসূচিতে ইউপি চেয়ারম্যান মো. নোমান হোসেন, মাহবুবুর রহমান সোহাগ, উস্তার মিয়া, তাউ উদ্দিন, মো. শামিম মিয়া প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

শেরপুর: আজ দুপুরে শহরের পৌর পার্ক মাঠে বিইউপিএমএ শেরপুর জেলা শাখার আয়োজনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। এসময় সংগঠনটির নেতারা শেরপুর শহরে মিছিল করেন। পরে তারা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি প্রদান করেন।

কর্মসূচিতে উপজেলা শাখার সভাপতি এস এম শামসুল ইসলামের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন- কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এস আই শাহীন সাফওয়ান। বক্তব্য রাখেন- জেলা শাখার সভাপতি মো. লাল মিয়া, সহ-সভাপতি হাসনা হেনা, সদর উপজেলা মোহাম্মদ লাল মিয়া, নকলা উপজেলার সভাপতি বুলবুল আহমেদ, শ্রীবরদী উপজেলা শাখা মো. রনি মিয়া, সদর উপজেলার আরজু মিয়া প্রমুখ।

বক্তারা বলেন- দেশে একমাত্র ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বাররাই তৃণমূল জনগণকে সার্বিক সেবা প্রদান করে থাকে। জনপ্রতিনিধিদের অপসারণ করা হলে তৃণমূল পর্যায়ের জনগণ সেবা থেকে বঞ্চিত হবে। তাই অন্তবর্তী সরকারের কাছে দাবি, ইউনিয়ন পরিষদ যেন বাতিল না করা হয়। অন্যথায় কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

রাঙামাটি: ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের অপসারণ না করার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন জনপ্রতিনিধিরা। আজ সকালে জেলা শিল্পকলা একাডেমির হল রুমে বাংলাদেশ ইউনিয়ন পরিষদ অ্যাসোসিয়েশন রাঙামাটি পার্বত্য জেলা শাখার উদ্যোগে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনটির জেলা শাখার সভাপতি তরুণ জ্যোতি চাকমা।

তরুণ জ্যোতি চাকমা জানান, সারা দেশের মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রেক্ষাপট একেবারেই ভিন্ন। দুর্গম অঞ্চলের মানুষ ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যদের মাধ্যমে সেবা গ্রহণ করেন। যা প্রশাসক দিয়ে কোনোভাবেই সম্ভব না। রাঙামাটি জেলার ৫০টি ইউনিয়নের মধ্যে ৩৫টির বেশি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান স্বতন্ত্র প্রতীকে নির্বাচিত। বর্তমানে সব চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যরা পরিষদে উপস্থিত থেকে সেবা প্রদান করছেন। 

সংবাদ সম্মেলনে রাঙামাটির ৫০ ইউনিয়নের প্রায় সব জনপ্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।