সারা বাংলা

চবিতে শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ-যুবলীগের হামলা, আহত ৪

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সোমবার (২১ অক্টোবর) ভোর থেকে এ হামলার ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ৪ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।

আহতরা হলেন, আধুনিক ভাষাবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ইয়াসিন আরাফাত, আরবি সাহিত্য বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের নাজমুল হাসান, লোক প্রশাসন বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের মোনায়েম শরীফ, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের আব্দুল্লাহ আল নোমান। এর মধ্যে গুরুতর আহত ইয়াসিন আরাফাত চট্টগ্রাম পার্কভিউ হাসপাতাল এবং নাজমুল হাসান চবি মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা সূত্রে জানা গেছে, চবি জিরো পয়েন্ট এলাকায় সোমবার (২১ অক্টোবর) ভোর রাত ৪টার দিকে ককটেল বিস্ফোরণ ও বিভিন্ন দোকানে হামলা চালান যুবলীগ নেতা হানিফের অনুসারীরা। তাদের সঙ্গে যুক্ত হন বিশ্ববিদ্যালয় ও স্থানীয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও। খবর পেয়ে এর প্রতিবাদে ফজর নামাজের পর শিক্ষার্থীরা জিরো পয়েন্টে জমায়েত হন। এরপর রেলক্রসিং অভিমুখে তারা প্রতিবাদ মিছিল নিয়ে এগিয়ে গেলে ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা স্থানীয় মসজিদের মাইকে আন্দোলনরতদের সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে স্থানীয়দেরকে প্রতিরোধের ডাক দেন। এরপরে হানিফ বাহিনীর সদস্যরা পিস্তল, বন্দুক, শর্টগান ও ককটেল সহযোগে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালান।

আন্দোলনের অংশ নেওয়া এক শিক্ষার্থী জানান, সকালে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের জিরো পয়েন্ট এলাকায় দেশীয় অস্ত্র, গুলি, সাউন্ড বোমা ও ককটেল নিয়ে অবস্থান নেন। একপর্যায়ে যুবলীগ নেতা হানিফ পক্ষের লোকজন দোকানপাটে ভাঙচুর ও লুটপাট শুরু করেন। খবর পেয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলে গেলে তাদের ওপর হামলা চালান ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চবি সমন্বয়ক মুহাম্মদ আলী বলেন, ‘রাত সাড়ে ৩টার দিকে সন্ত্রাসী হানিফ বাহিনী ক্যাম্পাসের আশেপাশে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় এবং রাতে জিরো পয়েন্ট ও রেলক্রসিংয়ের দিকে পাহারা দেয়। শিক্ষার্থীরা ফজরের নামাজের পর প্রতিবাদ করতে যায়। এসময় তারা শিক্ষার্থীদের উপর ককটেল নিক্ষেপ করে এবং পিস্তল উঁচিয়ে গুলি চালায়। আবার তারা মাইকে ঘোষণা দিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে স্থানীয়দের উত্তেজিত করে।

তিনি বলেন, ছাত্রলীগ-যুবলীগের সন্ত্রাসীরা এখনও ক্যাম্পাস ও আশেপাশে দখলে নিতে চাচ্ছে। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি। পুলিশ প্রশাসন এখানে নির্বিকার ভূমিকা পালন করছে। আমি ওসিকে ফোন দিলে তিনি মাত্র তিনজন পুলিশ পাঠিয়েছে। যেখানে ৫০ জন সন্ত্রাসী সশস্ত্র হামলা চালাচ্ছে, সেখানে তিনজন পুলিশ কি করতে পারবে?

ইসহাক হোসাইন নামে চবির আরেক সমন্বয়ক ওসির বিরুদ্ধে সরাসরি সন্ত্রাসীদের সহযোগিতা করার অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, এই ওসি বিরুদ্ধে সন্ত্রাসীদের সহযোগিতা করার একাধিক তথ্য আছে। তিনি সন্ত্রাসী হানিফের কাছ থেকে টাকা খান। আর এভাবে সন্ত্রাসী হানিফ ক্যাম্পাসের আশপাশ ও ফতেয়াবাদে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন।

বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ বলেন, স্থানীয় দুই ব্যাবসায়ীর দ্বন্দ্বে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ককটেল বিস্ফোরণ করেন। এ সময়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে তারা হল থেকে বের হয়ে রেল ক্রসিংয়ের গেলে তারা আবার ককটেল বিস্ফোরণ করেন। এ সময়ে পুলিশের সহযোগিতা তেমন পায়নি। 

এ বিষয়ে হাটহাজারী থানার ওসি হাবিবুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীরা যে অসহযোগিতার অভিযোগ করছে, সেটা সঠিক নয়। আমরা ৬টা ১৮ মিনিটে খবর পেয়েছি এবং ৬টা ২৬ মিনিটে রেল ক্রসিংয়ের এখানে উপস্থিত হয়ে উত্তেজিত স্থানীয়দের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে, যাতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের কোনো ঝামেলা না হয়। আর আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম স্বাভাবিক করার জন্য সব রকম সহযোগিতা করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি এখন শান্ত।