সারা বাংলা

চায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে শঙ্কা

মৌলভীবাজাররে চলতি মৌসুমে চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এ বছরের শুরুতেই প্রচণ্ড তাপদাহ ও খরায় চা উৎপাদনে ভাটা পড়েছে।

চা সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বর্ষা মৌসুমে চায়ের নতুন কুঁড়ি গজানোর সময় অতিবৃষ্টি ও তাপদাহে এক ধরণের বিপর্যয় দেখা দেয়। এ সময় চা উৎপাদন প্রায় বন্ধ ছিল।

জানা যায়, মে থেকে জুলাই মাসে আবার অতিরিক্ত বৃষ্টি হওয়াতে কচি পাতার সংকটে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। প্রকৃতি নির্ভর এ চা শিল্পে ১৭০ বছরের ইতিহাসে গত বছর ১০ কোটি ৩০ লাখ কেজি চা উৎপাদন হয়েছিল। যা বাংলাদেশের ইতিহাসে রেকর্ড পরিমাণ উৎপাদন। গত বছর আগস্ট সেপ্টেম্বর মাসে উৎপাদন হয়েছিল ৫ কোটি ৪৭ লাখ কেজি। তবে চলতি বছরে এই সময়ে খরা ও অতি বৃষ্টির কারণে ৪ কোটি ৯৫ লাখ ৩০ হাজার কেজি উৎপাদন হয়েছে। যা গত বছরের থেকে প্রায় অর্ধকোটি কেজি কম। এমন বাস্তবতায় ১৭০ টাকা মজুরীর অনুপাতে প্রতিদিন চা পাতা উত্তোলন করতে না পারায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন শ্রমিকরা। 

চা বাগান ঘুরতে গিয়ে দেখা হয় অনেক চা শ্রমিকের সাথে। তারা বলেন, চলতি মৌসুমে পাতা কুঁড়ির অভাবে আমরা আগের মত পাতা তুলতে পারিনি। রোদ বৃষ্টির ভারসাম্য না থাকায় পাতা গজানো কমে যায়। 

কমলগঞ্জ উপজেলার পার্থখলা চা বাগানের শ্রমিক গীতা বাউরি বলেন, সারা দিনে ২০ কেজি তুলতে পারিনি। নির্ধারিত পাতা সংগ্রহ না করতে পারলে মজুরী কমে যায়। তাই কষ্ট করে বেশী সময় নষ্ট করেও ২০ কেজি যোগাড় করতে হয়। 

রাজনগর উপজেলার করিমপুর চা বাগানের শ্রমিক লসনা কৈরী বলেন, গত বছর এমন দিনে অতিরিক্ত অনেক পাতা উত্তোলন করেছি। সে তুলনায় এবছর অনেক কম ছিলো। 

বিশেষজ্ঞদের মতে এ বছর চায়ের জন্য উপযোগী বৃষ্টিপাত ও পর্যাপ্ত সূর্যের আলো পাওয়া যায়নি। তাছাড়া সিলেট অঞ্চল ব্যতীত অন্যান্য বাগানে উৎপাদিত চায়ের গুনগত মান নষ্ট হওয়াতে নিলামে চায়ের দাম কমে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বাগান মালিকেরা।

জেলার গোবিন্দপুর চা বাগান ব্যবস্থাপক শাহ শফিকুজ্জামান বলেন, এ বছর খরা-অতিবৃষ্টি চায়ের জন্য আশীর্বাদ ছিল না। উৎপাদন টার্গেট পূরণ কঠিন হবে। 

বাংলাদেশ চা সংসদ সিলেট অঞ্চল সভাপতি জি এম শিবলী বলেন, চা উৎপাদনের জন্য উপযুক্ত আবহাওয়া হলো দিনে রোদ রাতে বৃষ্টি। প্রকৃতিতে এমন পরিবেশ থাকলে ফলন অনেক ভালো হয়। এ মৌসুমে আবহাওয়া জলবায়ুর প্রতিকুল প্রভাবে চা শিল্পের ক্ষতি হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে আমরা শঙ্কায় আছি।

জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার শ্রীগোবিন্দপুর চা বাগানের মালিক মহসীন মিয়া মধু বলেন, চা উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে চা বিক্রি হওয়াতে বাগান পরিচালনায় আমরা হিমশিম খাচ্ছি। এ কারণে চা উৎপাদনে অনেক বাগান মালিকদের উৎসাহ কমে গেছে।

চা বোর্ডের তথ্যমতে চলতি বছরে চায়ের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ কোটি ৮০ লাখ কেজি। এই দুই মাসের উৎপাদন দিয়ে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব নয় বলে মনে করছেন চা সংলিষ্টরা।