সারা বাংলা

নুরুল ইসলামের ‘২ টাকার দোকান’

দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতির এই সময়েও ২ টাকা কাপ চাসহ বিভিন্ন খাবার বিক্রি হচ্ছে। প্রায় দুই যুগের বেশি সময় ধরে দুই টাকা দামে চা বিক্রি করছেন নুরুল ইসলাম ও হাসিনা দম্পতি। আর জীবনের শেষ পর্যন্ত এ দামেই বিক্রয় করবেন, এমনটাই প্রতিজ্ঞা তার। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের চৌরঙ্গি বাজারে চায়ের দোকান নুরুল ও হাসিনা দম্পতির।  

জানা যায়, টিনের ঘরে এই চায়ের দোকানে প্রায় ২০ বছরের বেশি সময় ধরে এ ব্যবসা তাদের। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে অবিশ্বাস্য হলেও ২ টাকা দামেই বিক্রি করছেন দুধ চা, পিয়াজু, খুরমাসহ বিভিন্ন খাবার। এলাকায় এখন এই দোকান ‘২ টাকার দোকান’ নামেই পরিচিত। 

একটি সময় শুধু চা বিক্রি করলেও গত ৫ বছরের বেশি সময় ধরে সেদ্ধ বুট, খুরমা, সেমাই, বড়াসহ বিভিন্ন খাবার তৈরি করেন তারা। এরই মধ্যে তাদের তৈরি দুই টাকার এক কাপ চা সারা ফেলেছে ব্যাপকভাবে। দোকানের আয় দিয়েই সংসার চলছে কোনও রকমে। যেখানে দিনের পর দিন নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়েই চলছে সেখানে কি করে ২ টাকায় এসব বিক্রয় করেন তা বিশ্বাস করতে চায় না অনেকে। 

এদিকে বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দোকানে ছুটে আসতে শুরু করেন দূর দূরান্ত থেকে অনেকেই। প্রতিদিন বিকেল হলে বিভিন্ন এলাকা থেকে ছুটে আসে মানুষ। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রতিদিন প্রায় ৫০০ কাপ চা বিক্রি হয় তাদের এই দোকানে। পাশাপাশি বিক্রি করেন অন্য খাবারও। প্রতিটি খাবারের দামই ২ টাকা। 

স্থানীয়রা জানান, বর্তমান সময়ে ২ টাকার চা অনেকটাই অবাক করার মতো। সেই সাথে অন্য চা দোকানের চেয়ে স্বাদে-গুণে কোনও অংশেই কম নয়। 

প্রতিবেশী সোহেল রানা বলেন, আমি ছোট বেলা থেকে দেখছি চাচা ২ টাকা কাপ চা ও অন্যান্য নাস্তা বিক্রি করেন। এ অবস্থায় তারা কিভাবে এত কম দামে বিক্রি করে মুনাফা পাচ্ছেন এটাই আমি বুজতে পারছি না। 

চা বিক্রেতার স্ত্রী হাসিনা বেগম বলেন, সব কিছুর দাম বাড়ছে। আমি আমার স্বামীকে বার বার কিছুটা দাম বাড়াতে বলেছি কিন্তু তিনি রাজি না। তিনি বলেছেন তার মৃত্যুর আগে দোকানের কোনও কিছুর দাম বাড়বে না। নিজের দোকানের শুধু চায়ের দাম বাড়াতে চাইলেও দাম বাড়াতে রাজি নয় স্বামী নুরুল ইসলাম। 

নুরুল ইসলাম বলেন, আমি সেই স্বাধীনতার পর থেকেই চায়ের দোকান করি। একটা সময় ২ টাকা কাপ চা বা অন্যান্য খাবার স্বাভাবিক ছিলো। তবে সময়ের সাথে সবাই দাম বাড়ালেও আমি আর বাড়াতে চাইনি। সেই চেষ্টা থেকেই এখনও ২ টাকায় চা বিক্রি করছি। চিনির কেজি যদি ১ হাজার টাকাও হয়, তবুও আমার চা ২ টাকাই থাকবে।