পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার স্কুলছাত্র আসাদুজ্জামান পায়েলকে অপহরণের পর হত্যার ৯ বছর পর তিনজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। সোমবার (২১ অক্টোবর) দুপুরে পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক এস এম রেজাউল বারী এ দণ্ডাদেশ দেন।
দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন, দেবীগঞ্জ উপজেলার চিলাহাটি ইউনিয়নের বলরামপুর তাতীপাড়া গ্রামের মহির উদ্দীনের ছেলে নুরুজ্জামান (৩৮), ডাহেনাপাড়া গ্রামের দুদু মিয়ার ছেলে ফরহাদ হোসেন (৩০) এবং বলরামপুর গ্রামের রশিদুল ইসলামের ছেলে হাসানুল ইসলাম (৩২)। তাদের মধ্যে নুরুজ্জামান ও হাসানুল পলাতক রয়েছেন।
হত্যার শিকার আসাদুজ্জামান পায়েলের বাড়িও দেবীগঞ্জ উপজেলার চিলাহাটি ইউনিয়নের বলরামপুর তাতীপাড়া গ্রামে। ২০১৫ সালের ১৮ জুন রাতে পায়েল নিখোঁজ হন। নিখোঁজের চারদিন পরে বিকেলে বাড়ির এক কিলোমিটার দূরের ডোবা থেকে তার বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার হয়। পরে হত্যাকাণ্ডে জড়িত তিনজনকে আটক করে পুলিশ। ওই দিনই মামলা দায়ের করেন পায়েলের বাবা সুলতান আলী। পায়েল স্থানীয় বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন।
মামলা ও আদালত সূত্রে জানা যায়, পায়েল নিখোঁজের ২৪ ঘণ্টা পর তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর থেকে ফোন আসে বাবা সুলতান আলীর কাছে। ফোনের অপর প্রান্ত থেকে বিকৃত কণ্ঠে পায়েলের মুক্তিপণ বাবদ তিন লাখ টাকা দাবি করা হয়। কিন্তু টাকা নিয়ে কোথায় যেতে হবে তা জানানো হয়নি। পরে খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে অপহরণে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায় ওই তিনজনের। পরে স্থানীয়ভাবে বসে ওই তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা হত্যার কথা স্বীকার করেন। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ডোবা থেকে বস্তাবন্দি পায়েলের লাশ উদ্ধার করা হয়। একই সঙ্গে ওই তিনজনকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়। পরে একই বছরের ৩১ আগস্ট পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করলে বিচার কাজ শুরু হয়।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) জাহাঙ্গীর আলম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের অপরাধ আদালতে প্রমাণ করতে পেরেছে বলেই বিচারক এই আদেশ দিয়েছেন। ভিকটিমের পরিবার এই মামলার ন্যায় বিচারের জন্য দীর্ঘ অপেক্ষায় ছিল। দীর্ঘদিন পরে হলেও তিনি এই রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন।
গত বছরের ১১ মার্চ রাইজিংবিডিতে ‘৮ বছরেও শেষ হয়নি স্কুলছাত্র পায়েল হত্যার বিচার’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। সেখানে মামলার বিচার প্রক্রিয়ায় ধীরগতির বিষয় তুলে ধরা হয়। সেসময় পায়েলের বাবা সুলতান আলী ন্যায় বিচার নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন।