সারা বাংলা

সাতক্ষীরায় ‘দানা’র প্রভাবে বৃষ্টি, নদীতে পানি বৃদ্ধি

বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি আরও পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’য় রূপ নিয়েছে। এর প্রভাবে সাতক্ষীরায় শুরু হয়েছে বৃষ্টি। একই সাথে নদ-নদীতেও পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।

নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বেড়িবাঁধ নিয়ে উৎকণ্ঠা বাড়ছে উপকূলীয় এলাকার মানুষের মধ্যে। উপকূলীয় উপজেলা শ্যামনগর ও আশাশুনিতে ঘূর্ণিঝড় দানা আঘাত হানলে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ ভেঙে এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার উপকূলীয় এলাকার কৈখালী, গাবুরা, সোরা, লেবুবুনিয়া, নাপিতখালী, পদ্মপুকুর, বুড়িগোয়ালিনী, রমজাননগরসহ বিভিন্ন এলাকায় বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের দু’টি বিভাগের আওতাধীন জেলায় ৬৮৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে ৯টি পয়েন্টের সাড়ে চার কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।

বুধবার (২৩ অক্টোবর) বিকালে সাতক্ষীরার আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় দানা’র কারণে সাতক্ষীরায় দুপুর ১২টা থেকে যে বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে তা চলমান থাকবে। আগামীকাল রাতে উপকূলী এলাকায় আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড় দানা। তবে সাতক্ষীরা এলাকায় কতটা আঘাত হানবে এটি এখন বলা সম্ভব হচ্ছে না।’

শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিএম মাসুদুল আলম বলেন, ‘চারপাশে কপোতাক্ষ নদ ও খোলপেটুয়া নদী দ্বারা বেষ্টিত তার গাবুরা ইউনিয়ন। গাবুরা, নাপিতখালী, জেলেখালী, তিন নম্বর পোল্ডারসহ বিভিন্ন এলাকায় উপকূল রক্ষা বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। সাগরে নিম্নচাপের প্রভাব হলে কপোতাক্ষ নদ ও খোলপেটুয়া নদীর জোয়ারের উচ্চতা বৃদ্ধি পায়।’

শ্যামনগর উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মো. শাহিনুল আলম বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় উপজেলার সরকারি ১০২টিসহ মোট ১৬২টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণ শুকনা খাবার মজুদ রাখা রয়েছে। জানমালের নিরাপত্তার জন্য ২ হাজার ৯৮০ জন সিপিপি সদস্য যার মধ্যে অর্ধেক নারী ও অর্ধেক পুরুষ। এ ছাড়াও পর্যাপ্ত অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে।’

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বিভাগ-১ নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ সালাহ উদ্দীন জানান, তার আওতাধীন ৩৮০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে ৬টি পয়েন্টে আড়াই কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ। আপৎকালীন কাজের আওতায় ঝুঁকিপূর্ণ এসব বেড়িবাঁধের মেরামতের কাজ চলমান রয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা পর্যাপ্ত জিও ব্যাগ, জিও ফিল্টার, জি পলেস্টার মজুদ করে রেখেছি। যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে তাহলে তৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে।’

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বিভাগ-২ নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার বিভাগের আওতাধীন ৩০৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি পোল্ডারের তিনটি পয়েন্টে দুই কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ। শর্ট টেন্ডারের মাধ্যমে জরুরি ভিত্তিতে এসব ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধের মেরামতের কাজ চলমান রয়েছে। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত আছি।’