প্রবল ঘূর্ণিঝড় দানার সতর্কতা উপেক্ষা করে কক্সবাজার সৈকতে নামছেন পর্যটকরা। অনেকেই স্নানে ব্যস্ত। তবে পর্যটকদের নিরাপত্তায় কাজ করছে টুরিস্ট পুলিশ ও বিচ-কর্মীরা।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য মতে, দানা কক্সবাজার থেকে প্রায় ৫৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সমুদ্র উত্তাল হয়ে উঠেছে। কক্সবাজার উপকূলে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
স্থানীয় প্রশাসন ও লাইফগার্ড দলের পক্ষ থেকে মাইকিং করে সতর্ক করা হচ্ছে। তবে অনেক পর্যটক সেই নির্দেশনা মানছেন না। পরিস্থিতি সামাল দিতে ট্যুরিস্ট পুলিশ, লাইফগার্ড, বিচ-কর্মীরা নজরদারি জোরদার করেছেন। বিশেষ করে সৈকতের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
পর্যটকরা বলছেন, কক্সবাজার বেড়াতে এসে সমুদ্রে না নামলে আসল আনন্দটা পাওয়া যায় না। তবে আমরা সতর্ক আছি।
ঢাকা থেকে আসা সৌরভ পাটোয়ারী নামে এক পর্যটক বলেন, দুই দিন আগে আসছি কক্সবাজার। ঘূর্ণিঝড়ের খবর শুনলাম। কিন্তু সৈকতে এসে সেরকম কোন পরিস্থিতি দেখতে পেলাম না। এখানে সবকিছু স্বাভাবিক মনে হলো।
ট্যুরিস্ট পুলিশ, লাইফগার্ড ও বিচকর্মীরা বলছেন, পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য আমরা কঠোর নির্দেশনা পালন করছি। দুর্ঘটনা এড়াতে আমরা নিয়মিত টহল দিচ্ছি এবং মাইকিং করছি। পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের বিভিন্ন উদ্যোগ রয়েছে। তবে তাদের নিজেদেরও সচেতন হওয়া উচিত।
সৈকতের লাবনী পয়েন্টে থাকা এক লাইফ গার্ডকর্মী মো. ওসমান বলেন, তিন নম্বর সংকেত থাকলেও পর্যটকরা কিছু মানতে চান না। আমরা বারবার সতর্ক করছি। কিন্তু তারা না শুনে পানিতে নেমে পড়ছে।
হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, কিছু পর্যটক আছে। আবহাওয়া পরিস্থিতি খারাপ হলে হয়তো যারা আছে তারাও চলে যেতে পারে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ্উদ্দিন বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের মাঝে ভয়-ভীতি অপেক্ষা করে কিছু পর্যটক সাগরে নামছে। তবে তাদের সার্বিক নিরাপত্তায় কাজ করা হচ্ছে। বিচ-কর্মীরাও সার্বক্ষণিক পর্যটন এলাকায় কাজ করছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করা ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়ে উপকূলের দিকে ধেঁয়ে আসছে। এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে।
বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) সকালে আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিকের সই করা আবহাওয়ার ৯ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ বাংলাদেশের পায়রা বন্দর থেকে ৪৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল।
এতে আরও বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রে বাতাসের গতি প্রবল রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে মোংলা, পায়রা, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর ও কক্সবাজারকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
এখন পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড় দানার যে গতিপ্রকৃতি, সে অনুযায়ী এটি আজ রাতে বা আগামীকাল ভোরে ভারতের ওডিশা উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং এর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের ওপর দিয়ে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়াসহ ভারী (৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতিভারী (২৮৯ মিলিমিটার) বর্ষণ হতে পারে।
প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সৃষ্ট বাতাসের গতিবেগ যদি ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার হয়, তখন তাকে ‘ঘূর্ণিঝড়’ বা ট্রপিক্যাল সাইক্লোন বলা হয়। গতিবেগ যদি ৮৯ থেকে ১১৭ কিলোমিটার হয়, তখন তাকে প্রবল ‘ঘূর্ণিঝড়’ বলা হয়। আর বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১১৮ থেকে ২১৯ কিলোমিটার হয়, তখন সেটিকে ‘অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়’ বলা হয়। গতিবেগ ২২০ কিলোমিটার বা তার বেশি হলে তা হয় ‘সুপারসাইক্লোন’।