ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় বৃষ্টি হচ্ছে, বাড়ছে নদ-নদীর পানি; বেড়িবাঁধ নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন বিস্তীর্ণ উপকূলের মানুষ। উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। ‘ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা’ থেকে নিরাপদ আশ্রয় যেতে প্রচার অব্যাহত রয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসেবে উপকূল পার হবে দানা। তবে এর কেন্দ্র ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশার ওপর দিয়ে বয়ে যাবে। এর প্রভাবে বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) বাংলাদেশের বরিশাল ও খুলনা বিভাগে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। প্রতিনিধিদের পাঠানোর খবর-
বরগুনায় বাড়ছে নদ-নদীর পানি, শঙ্কায় কৃষক
ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে বরগুনায় সকাল থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বাড়তে শুরু করেছে নদ-নদীর পানি। পানি বৃদ্ধির ফলে বেড়িবাঁধের ৬টি পয়েন্ট (বরগুনা সদরের বড়ইতলা ও তেঁতুলবাড়ীয়া, তালতলীর জয়ালভাঙা, বেতাগীর কালিকাবাড়ি, আমতলীর আড়পাঙাশিয়া ও পাথরঘাটার জিনতলা) মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। সামান্য জলোচ্ছ্বাসে এসব স্থান ভেঙে প্লাবিত হতে পারে বিস্তীর্ণ জনপদ।
টানা বৃষ্টিপাতে আমন ও সবজি ক্ষেত তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন কৃষকরা। যদিও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, এখন পর্যন্ত কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।
মোংলা বন্দরে ৩ নম্বর সংকেত
প্রবল ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে বাগেরহাট উপকূলীয় এলাকায় দমকা হাওয়া ও বৃষ্টি শুরু হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে মোংলা সমুদ্রবন্দর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় ৩ নম্বর সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। প্রস্তুত করা হয়েছে ৩৬৯টি আশ্রয়কেন্দ্র। বরাদ্দ রয়েছে ৮০০ মেট্রিকটন চাল ও নগদ ২৫ লাখ টাকা। মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়ার জন্য রয়েছেন ৫০৫ জন স্বেচ্ছাসেবক।
সতর্কতা না মেনে সৈকতে পর্যটক
প্রবল ঘূর্ণিঝড় দানার সতর্কতা উপেক্ষা করে কক্সবাজার সৈকতে নামছেন পর্যটকরা। এ সময় পর্যটকদের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে নিরাপদ আশ্রয় যেতে প্রচারণা চালাতে দেখা গেছে টুরিস্ট পুলিশ ও বিচ-কর্মীদের।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দানা কক্সবাজার থেকে প্রায় ৫৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিম ও পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৭৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উত্তাল হয়ে উঠেছে সাগর।
সর্বশেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, প্রবল ঢেউয়ে ইনানী জেটির একটি অংশ ভেঙে গেছে। যদিও তাৎক্ষণিক এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
খুলনায় গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি
ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে খুলনায় গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। সঙ্গে বয়ে যাচ্ছে হিম শীতল বাতাস। দুর্যোগের ক্ষতি এড়াতে প্রস্তুত করা হয়েছে ৬০৪টি আশ্রয়কেন্দ্র। খুলনায় ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে ১০-১২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ।
দানা মোকাবিলায় বরিশালে ব্যাপক প্রস্তুতি
ঘূর্ণিঝড় দানা মোকাবিলায় বরিশালে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে জেলা প্রশাসন। ইতিমধ্যে প্রস্তুত করা হয়েছে ৫৪১টি আশ্রয়কেন্দ্র। এর বাইরে লোকজনকে নিরাপদে আশ্রয় দেওয়ার জন্য ৭৯৮টি মাধ্যমিক ও ১৫৯০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
সাতক্ষীরায় ৩৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড
ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে সাতক্ষীরায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। জেলায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে ১৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্রসহ ৮৮৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সাতক্ষীরা উপকূলের অন্তত ৬ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
এছাড়া ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার সঙ্গে সারা দেশের নৌ যোগাযোগ এবং লক্ষ্মীপুর-ভোলা ও বরিশাল নৌ রুটে সকল ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
দানার প্রভাবে ঝালকাঠিতে বৃষ্টি
বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে ঝালকাঠিতে বৃষ্টি হচ্ছে। বাড়ছে নদ-নদীর পানি। এতে নদী তীরবর্তী মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। তবে জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় দানা মোকাবিলায় ৮২৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ৬২টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রস্তুত রয়েছে ৩৭টি মেডিকেল টিম, ফায়ার সার্ভিসের ৮টি উদ্ধারকারী দল। এছাড়া নগদ ৫ লাখ টাকা এবং বিতরণের জন্য ৪০০ মেট্রিক টন চাল মজুদ রয়েছে।